সাতগড় বন বিভাগের রহস্যময় নিরবতায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ ও মাটি কাটার হিড়িক

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪

 

(বিশেষ প্রতিনিধি)

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চুনতী রেঞ্জের সাতগড় বন বিভাগের আওতাধীন সংরক্ষিত বনবিভাগের বনভূমি থেকে মাটি কাটা, স্থায়ী বসতবাড়ি নির্মাণ এবং বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটা হলেও থামানো যাচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ী ও বন খেকোদের। বন বিভাগের রহস্যময় নিরবতায় এসব অসাধু বনখেকো ও বনভূমি দখলবাজ’রা আরও বেশি প্রশ্রয় পাচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্র জানা যায়, চুনতী রেঞ্জের সাতগড় বন বিভাগের আওতাধীন সাতগড় বড়ঘোনা, হাইজবিলা, বনকাটা, বড় টেইলা, রুঁশাইগ্যা ঘোনা, ফুরাইন্না খোলা সহ আরও সংরক্ষিত বন বিভাগের জায়গা থেকে বিরামহীন মাটি ও গাছ কেটে বিক্রি করে আসছে বনখেকোরা। অন্য দিকে বন বিভাগের জায়গা দখল করে স্থায়ী পাকা বাড়ি নির্মাণ করে যাচ্ছে। এসব চিত্র নিত্য দিনের। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে। অন্য দিকে যেমন সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও জবরদখল হচ্ছে, তেমনি সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এত কিছুর পরেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। দিন দিন সরকারি বনভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। যে বনাঞ্চলে বন্যহাতি সহ বিভিন্ন প্রাণী থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন মানুষের বসবাস।সে সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করে ফেলেছে। প্রকৃতির বুকে জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। যার কারণে এখন বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে। রাষ্ট্রের নির্দেশনা যদি কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আর কিছু সময়ের পর বনাঞ্চল নামটি এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, বন বিভাগের জায়গা থেকে এসব মাটি ও গাছ কাটা নিত্য দিনের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে খবর দিলেও তারা দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেন না। টাকার বিনিময়ে তারা নিজেরা স্বশরীরে দেখেও না দেখার ভান ধরে। দিন দিন সরকারি বনভূমি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের অসাধু বনবিট কর্মকর্তার কাছে বনাঞ্চল কতটুকু নিরাপদ,,? এভাবে যদি বন ধ্বংস হতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে ঝড়-বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হবে।

সচেতন নাগরিক বলেন, বনের মাটি ও গাছ কাটার বিষয়ে আমরা সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করলেও কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় না। ফলে ভারসাম্যহীনতা ঘটে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা প্রধানত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্থাপনা এবং বনজ সম্পদের নির্মূলীকরণের মাধ্যমে ঘটে। তাই বন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এলাকার একজন কৃষক বলেন, এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এক সময় অনেক ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো গাছপালায় ভরা ছিলো। সে সবুজ বন উজাড় করে গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এ লোভ-লাভের ভাগীদার কিছু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতগড় বন বিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনারা সাংবাদিক’রা শুধু আমার দোষ খোঁজেন। আমার এখানে প্রতিদিন এক শত জন সাংবাদিক যাতায়াত করে। বনের জায়গা দখল করছে কারা আপনারা দেখেন, কে কোথায় বনের গাছ ও জায়গা দখল করতেছে আপনারা তাদেরকে ধরিয়ে দিন! তিনি আরও বলেন, যারা বন বিভাগের গাছ কাটতেছে এবং জায়গা দখল করতেছে তারা সবাই প্রভাবশালী। আর সারাদেশে বন বিভাগের জায়গা থেকে অবৈধ ভাবে গাছ কাটতেছে, তেমনি আমার এখানেও কাটতেছে- আমার করার কিছু নেই। সেগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের নিউজ করতেও বলেন এই বন বিট কর্মকর্তা।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।