রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা, রক্তপাত ও খুনোখুনি, শংকিত স্থানীয়রা 

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩

 

।।এম আর আয়াজ রবি।।

সময় যত গড়াচ্ছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিবদমান পক্ষগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস, অনাস্থা, অস্থিরতা যেমন বাড়ছে তেমনি দিনে দিনে ব্যবসারিক দ্বন্ধ, স্বর্ণচোরাচালান, ইয়াবা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খুনোখুনিও। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে এখন প্রকাশ্যেই চলছে দ্বন্দ্ব। বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে বর্তমানে বেশি তৎপর মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (আরাকান স্যালভেশন আর্মি), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন(আরএসও) ও স্বাতন্ত্রিক সন্ত্রাসী নবী হোসেন গ্রুপ। প্রত্যাবাসনের পক্ষ বিপক্ষ ইস্যুকে সামনে রেখে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে-ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণই তাদের মূল টার্গেট বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

মুলতঃ উখিয়া ও টেকনাফের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়োজিত ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই ক্যাম্পভিত্তিক বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। ক্যাম্পগুলোতে তাদের একক আধিপত্য বজায় ও ধরে রাখার জন্য ইয়াবা, মাদক-চোরাচালান, মানবপাচার, ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবসা, হাট বাজারের চাঁদাবাজি, অপহরণ-মুক্তিপন আদায় ও তা নিয়ন্ত্রণে হামলা, খুন, আগুন সন্ত্রাস মিলে অস্থির হয়ে উঠেছে ক্যাম্পগুলো। সর্বশেষ শুক্রবার (৭-জুলাই) আরএসও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে খুন হন অন্য সন্ত্রাসী আরসার পাঁচ সদস্য।৮- জুলাই-২৩ আরো খুন হন একজন।
এমন পরিস্থিতিতে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান করছে। তারা সময় সুযোগ বুঝেই একে অপরের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মানবপাচারসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরসার সদস্যরা অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তারা ক্যাম্পের সদস্যের তালিকায় নাম লেখালেও বেশির ভাগ সময় শূন্য রেখায় অথবা মিয়ানমারে অবস্থান করে। আবার কিছু সদস্য সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তথ্য আদান প্রদানে উভয় পক্ষকে সহযোগিতা করে।
গত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ১৬০ এর অধিক লোক খুন হয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত ছয় বছরে ২ হাজার আট শতাধিক মামলায় আসামি হয়েছে ৬ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে ১১৫টি হত্যা, ১৮৫টি অস্ত্র, ১ হাজার ৬৩৬টি মাদক, ৮৮টি ধর্ষণ ও ৩৯টি অপহরণ মামলা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত দেড় শতাধিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস, ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর নামের এক নেতা (মাঝি), ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ এরশাদ নামে এক জন স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ঐ বছরের ২২ অক্টোবর ক্যাম্প-১৮-এর একটি মাদ্রাসায় ছয় জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে। ২০২২ সালের ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা ও ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ঐ বছরের ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় এক জন নেতা মারা যান। গত বছরের মে মাসে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানাউল্লাহ ও সোনা আলী। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জুলাই আরএসওর হাতে খুন হন আরসার পাঁচ সদস্য। এর পরেও হতাহতের পরিমান থেমে নেই।

অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, গত মার্চ মাসে মোট ৯টি (যথাক্রমে ২১-মার্চ, ১৮-মার্চ, ১৭-মার্চ, ১৬-মার্চ, ১৫-মার্চ, ৮-মার্চ, ৭-মার্চ, ৩-মার্চ একজন করে এবং শুধুমাত্র ২১-মার্চ ২ জন) খুনের ঘটনা ঘটে। আর এসব ঘটনায় নিহতদের বেশিভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। তাছাড়া স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের অপহরণপুর্বক মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে অনেককে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপহৃতদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়পুর্বক থানা পুলিশ বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ব্যতিত জীবন রক্ষার তাগিদে মুক্তিপণ প্রদান করেই ছাড় পেয়েছে। কারন পুলিশ ও প্রশাসন পর্যন্ত গড়ালে অপহৃতদের জীবনহানীর ঝুকি এড়াতেই মুক্তিপণ প্রদান করতেই বাধ্য হচ্ছে বলে সুত্রে জানা যায়।

টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বাহারছড়া, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, শাপলাপুর, দমদমিয়া, লেচুয়াপ্রাং, জাদিমোড়া, লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, পালংখালী, কুতুপালং, মরিচ্চাঘোনা এলাকার পরিবারগুলো অপহরণকারীদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশপাশে চলছে বেপরোয়া অপহরণ বাণিজ্য। লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছে দুর্বৃত্তরা। এ দুই উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক ও হতাশা। এসব এলাকায় মুক্তভাবে চলাফেরা করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পগুলোর অভ্যন্তরে অস্থিরতা, খুনোখুনি, মারামারি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। সন্ত্রাসীরা আগে যাত্রী, পথিক ও স্থানীয়দের ডাকাতি করে, নগদ অর্থ ও মোবাইল কেড়ে নিত। এখন ছোট শিশু থেকে, যুবক ও বয়স্কদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কাঙ্খিত অর্থ না পেলে মেরে ফেলছে। টাকার বিনিময়ে মুক্তি পাওয়া অনেকে হয়রানির ভয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট পর্যন্ত করছেন না। অতীতে উল্টো অনেকে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমন অভিযোগ জনগণের মুখে মুখে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবস্থার উন্নতি না ঘটলে স্থানীয়দের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করছে সচেতনমহল।

সুত্রে জানা যায়-রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে গঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন। এর মধ্যে আরএসও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় ও অধিকার নিয়ে কাজ করে বলে জানা যায়। আর অন্যদিকে ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে আরসা। আরসার নিয়ন্ত্রণে থাকা সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা। (অবশ্য বিপরীত কথাও শুনা যাচ্ছে অর্থাৎ আরসা রোহিঙ্গাদের সুন্দর প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছে এবং আরএসও সুন্দর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।) সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন-মুলতঃ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্টীকে ব্যবহার করে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাত্র!

সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থিরতার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) ৩টি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও ৭টি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলা হয়েছে। এসব সশস্ত্র গোষ্টি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা সহ নানা অপরাধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, এসব ঘটনার পেছনে কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো জড়িত। ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘দুটি কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমিউনিটি নেতাদের খুন করছে কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। এক হচ্ছে, কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে কেউ তথ্য দিলে তা তারা জেনে যায়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে তথ্য দাতাকে ধরে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করছে। কারণ ক্যাম্পে তাদের অসংখ্য নের্টওয়াক রয়েছে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, আগে অনেক কমিউনিটি নেতা কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করত। কিন্তু এখন না করাতে মুনাফিক হয়ে গেছে বলে টার্গেট করে হত্যা করছে’।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবে ব্যবহার করে তাঁদের অপরাধী চক্রের সহিংসতার মুখে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অপরাধী চক্রের সহিংসতা থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেয় এইচআরডব্লিউ।
এতে বলা হয়, “কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করছে। ফলে তাঁরা অপহরণ বা হত্যার মতো গুরুতর ঝুঁকিতে পড়ছেন। কোনো প্রকার সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই এই কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার তাঁদের জীবন বিপন্ন করছে।”
“সরকারের উচিত শরণার্থী ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রতি সম্মানজনক নিরাপত্তা নীতি তৈরি করা। দাতাদের উচিত ন্যায়বিচারের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া। কারণ তারা আইনি সুরক্ষাবঞ্চিত,” বলা হয় বিবৃতিতে।

উখিয়াস্থ ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) ছৈয়দ হারুন অর রশিদ অত্র ইনকিলাব প্রতিনিধিকে বলেন,’রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েকটি দুষ্কৃতিকারি দল সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক হত্যাকান্ড হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্টি আরসা’র সন্ত্রাসীরা এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে এপিবিএন তৎপর রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে’।
গত বছর জিরো পয়েন্টে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হলে ঐখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্টী উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করলেও, মায়ানমান বাহিনীর আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে সন্ত্রাসী আরসা’র সদস্যরা পরে সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে চলে নির্বিঘ্নে চলে যায় বলেও অসমর্থিতসুত্রে তিনি জানতে পেরেছেন বলে প্রতিবেদককে জানান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো.আমির জাফর অত্র ইনকিলাব প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ক্যাম্পে বেশ কিছু বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপ কাজ করে। যাদের কাজ হচ্ছে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ।আর এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আধিপত্য বিস্তার একটা বিষয় থাকে। এরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে এসব অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে’।
তিনি আরো বলেন-গত ৭ জুলাই এর পরে গেল ৩ সপ্তাহ ক্যাম্পের অবস্থা শান্ত। আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। কখনো এপিবিএন পুলিশ একা করছে, কখনো জেলা পুলিশ বা র‍্যাবকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন। তবে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় আশা করি, ক্যাম্পের এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল ২১-জুলাই-২৩ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমার শরণার্থী ক্যাম্প এলাকার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদকে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ টেকনাফের শামলাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫। এ সময় আরও ৫ আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তো আমরা অবশ্যই চিন্তিত। তবে, ক্যাম্পে ৩টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) রয়েছে। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি। তারা প্রতিনিয়ত কাজ করছে। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে, এসব ঘটনা নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তিত। আমরা সবাই চেষ্টা করছি, কিভাবে ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গিদের উপস্থিতি এবং অপরাধ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছি। এখানে যে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর র‌্যাব ফোর্সেস, এপিবিএন, পুলিশ শুধু তাই নয়, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও আছে, কাজ করছে; আমরা সবাই সমন্বিতভাবে একত্রে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছি। অবশ্যই আমাদের নজরদারি ছিল বলেই বিভিন্ন সময় অভিযানগুলো করতে পারছি এবং নতুন যে জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান, তাকে আমরা এখান থেকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।’
যে কোন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্টী বেপরোয়া হয়ে উঠলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশ-পাশের এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। ইদানিং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন-অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী নিয়োগের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। সার্বিক বিচারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃংখলা বজায় রাখার জন্য, রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর সমন্বিত উদ্দ্যোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রের শ্যেন দৃষ্টি দেওয়া উচিত। নচেৎ পরস্পর বিবদমান রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দমন ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।