নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের পাগলা ঘোড়া ও বাজার অব্যবস্থাপনা-সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩

২০২৩ সাল প্রায় শেষ। আগামী ৭-ই জানুয়ারি, দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের প্রচেষ্টা অব্যাহত কিন্তু দেশের মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, জামাত, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কিছু ইসলামী দল, এলডিপি, ডান ও বাম ধারণার কিছু দলসহ প্রায় ৬০ টি দল নির্বাচনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, অবরোধ, হরতাল, অসহযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। নির্বাচন ছাড়া দেশের বর্তমানে ‘টক অব দ্যা কাউন্ট্রি’ হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি।

সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির কারণে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে। কালোবাজারী, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী উত্তর মানুষের আয় রোজগারের পথ সীমিত হয়ে পড়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধা, ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধসহ পৃথিবীর প্রায় ৩২ টি দেশে যুদ্ধবিগ্রহ চলছে। এর ফলে, বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতিতে জনজীবন আজ পর্যুদস্ত ও বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, দেশের চাকুরীর বাজারের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। মানুষের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ও অর্থনৈতিক চাকাগুলো একে একে স্লথ বা বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প, প্রবাসী রেমিটেন্স প্রবাহের পথ সংকুচিত হচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি যেখানে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, সেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষকে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে। মানুষের একটু ভালোভাবে বাঁচার দাবি আজ সর্বত্র। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে পাগলা ‘অশ্ব বা ঘোড়ার ন্যায়’ দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য।

ডিসেম্বরের শেষ। শীতের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। শীতের সবজি ইতিমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে। সবজি চাষ ইতিমধ্যে সাধারণ কৃষক বপন করে অনেকেই ফসল বা বিভিন্ন সবজি ঘরে তুলছে, অনেকেই পুরো শীতকাল ব্যাপী সবজির চাহিদা পূরণে বিভিন্ন শাক সবজি বপন করে দু’পয়সা আয় করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়ন করার চেষ্টার পাশাপাশি বিপুল জনসংখ্যার তরিতরকারি, শাক সব্জির চাহিদা মেটানোর জন্য যোগান সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিধিবাম, বাজারে তরিতরকারি, নিত্যপন্যের বাজারের তেমন কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

চাহিদা ও যোগানের নেতিবাচক প্রভাবে নিত্য পন্যের জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে পাগলা ঘোড়ার লাহান। তেমনি নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যসামগ্রীর মধ্যে পেঁয়াজ এর মুল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে দিনে দিনে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০-২৩০ টাকা হয়েছে। চিনি, রান্নার তৈল, দেশি ও ব্রয়লার মুরগী, গরুর মাংস৷ কাঁচা মরিচ, আলুসহ সবধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, শাক-সবজির দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ আবার ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। কিছুটা বেড়েছে চাল, ডাল, আদা, মাছ, মুরগি প্রভৃতির দাম। গত কয়েকদিন যাবত কক্সবাজারের কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বাজারে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

অর্থনীতির ভাষায় চাহিদা এবং যোগান বলতে কোন একটি পণ্যের বা সেবার ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বিদ্যমান বাজার সম্পর্ক বোঝায়। বাজারে কোন পণ্যের দাম এবং সরবরাহ কী-রূপ হবে তা চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থনীতিতে এ দুটো উপাদান (চাহিদা ও যোগান) এর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে একটা নিয়ন্ত্রক বলে জানি। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। ‘দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র’ যে দেশের নিত্য দিনের সংগী, যেখানে অধিকাংশ জনসংখ্যা দারিদ্র্য সীমার মধ্যে বা নীচে বসবাস করে, সেখানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার গা’ !

অভাব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে আজকের জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পরিপূর্ণ। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের জন্যই সাধারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ‘পাগলা ঘোড়া’কে নিয়ন্ত্রন করতে পারেননি। অদুর ভবিষ্যতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ‘পাগলা ঘোড়া’কে নিয়ন্ত্রন করতে অপারগ হলে, বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি নেতিবাচক ‘মাইল ষ্টোন’ হিসেবে লেখা থাকবে।

( লেখক: কলামিস্ট, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী)