জরুরি বিভাগে রোগী রেখে কেক কাটতে ব্যস্ত চিকিৎসক, হাসপাতালে হট্টগোল

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী রেখে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটাকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে। 

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারী) দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর স্বজন ও জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়।

জানা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে জেলা শহরের দরগাপাড়া মহল্লার নাজমুল হুদার স্ত্রী শামসুন্নাহার বেগম (৫০) প্রায় ১০টি প্রেসারের ওষুধ খেয়ে গুরুতর আহত হয়। এই অবস্থায় তাকে জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন।

এসময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটছিলেন।

এনিয়ে আহত রোগীর স্বজনরা চিকিৎসককে ডাকতে গেলে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে রোগীর স্বজন এবং চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসময় সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রোগীর স্বজনদের হেনস্তা ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে আহত নারী শামসুন্নাহার বেগম।

আহত নারীর স্বামী নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রী পারিবারিক কলহের জের ধরে ১০টি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন আমরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসি। এসময় এসে দেখি ডাক্তারের রুমে দরজা লাগিয়ে কয়েকজন ডাক্তার মিলে কেট কাটছে।

চিকিৎসার জন্য তাদেরকে দরজায় নক দিলেও সাড়া না পেয়ে জোরে ধাক্কা দিলে ডা. মো. মোশফিকুর বের হয়ে এসে চিল্লাচিল্লি শুরু করে। এসময় ডাক্তার বলে, কি হয়েছে? আপনাদের কোন চিকিৎসা দেয়া হবে না। রোগী দেখা হবে না। এসময় ফোন বের করে ভিডিও করতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেন ঘরে আটকে রাখতে। এমনকি পুলিশ এনে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায় ডাক্তার।

আহত শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে শামসুল হুদা (২৪) বলেন, জরুরি বিভাগে রোগী রেখে তারা ভেতরে কেট কাটা নিয়ে ব্যস্ত। ডাক্তারকে ডাকতে গেলে সেখানে থাকা এক স্বাস্থ্যকর্মী জানায়, আধা ঘণ্টা বিরতি, এই সময়ের মধ্যে ডাক্তার রোগী দেখবে না। পরে ডাক্তার বের হয়ে আমাদের উপরেই আজেবাজে মন্তব্য করেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরের মধ্যে আটকাতে চেষ্টা করে। আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। পরে অন্যান্য চিকিৎসকদের সহযোগিতায় মায়ের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মোশফিকুর জানান, রোগী না দেখা ও স্বজনদের সাথে র্দুব্যবহার করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিক্তিহীন ও বানোয়াট। রোগী আসা মাত্রই সঠিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

কেক কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আনুষ্ঠানিক তেমন কোন কিছুই নয়। ৪২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারদের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের কক্ষে কেক কাটা হয়। যা এক থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কিছুই করা হয়নি।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, কেক কাটার ঘটনার সময় সেবা নিতে আসা ব্যক্তির স্বজনদের সাথে স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এটি বড় তেমন কিছু নয়। পরে উভয় পক্ষকে ডেকে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা হয়েছে। এছাড়াও রোগীকে সঠিকভাবে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।