ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ভয়াবহ গোলাগুলি: আহত-৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ: এপারে অর্ধশত বিজিপি সদস্য
শ.ম.গফুর,ঘুমধুম সীমান্ত থেকে:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে আবারও গোলাগুলি চলছে।রাতদিবারাতে গোলাগুলির ঘটনায় বিকট শব্দে ঘুম ভেংগে নির্ঘুম রাত কাটে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের।
গতরাত ৪ফেব্রুয়ারী ভোর সাড়ে ৩ টায় একটানা অনুমান ৮ ঘন্টা গোলাগুলি চলে ওপারে।এ ঘটনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনার পাড়া সহ আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়েছে।সীমান্তে অনেকটা অজানা আতংক বিরাজ করছে।মিয়ানমার বিদ্রোহীদের গোলাগুলিতে কোনঠাসা হয়ে পড়ে সকাল থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ৪ দফায় ৪০ জনের অধিক মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে চলে এসেছে, এমনটি খবর স্থানীয় সুত্রে চাউর হয়েছে।তবে এপারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলছেনা।
ঘটনার জেরে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে ছোঁড়া গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য এপারের বাসিন্দারের বসতভিটা,ঘরের ছাদ,ফসলী জমিতে এসে পড়ছে।ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু উত্তর পাড়া,কোনার পাড়া,পশ্চিমকুল,মধ্যম পাড়া ও নোয়া পাড়ার বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছেন।বিভিন্ন স্থানে গুলির খোসা,বিস্ফোরক দ্রব্য, বিচ্ছিন্ন অংশ ছুঁড়ে পড়েছে এপারে।
এতে আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।আহতের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।
এরা হলো তুমব্রু বাজার পাড়ার বাসিন্দা দিন মজুর প্রবীন্দ্র ধর(৫০), টিটু(৩৫) ও সাবেক ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ সিদ্দিকীর স্ত্রী বলে জানা গেছে।
এই গোলাগুলির ঘটনায় একজন মহিলা সহ তিনজন নাগরিক গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ভয় আর আতঙ্কে সীমান্তঘেঁষা ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত এবং ৪ ফেব্রুয়ারী) ভোররাতে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলি চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (আইসি) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ইউপি সদস্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত রাত থেকেই প্রচণ্ড গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলার সীমানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিমকুলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত রাত থেকে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। আর এ ঘটনায় এপারের বাসিন্দারা রয়েছে আতংকে।
সুত্রে জানা যায়,গত দেড় বছর আগে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হয় । ২০২২ সালে জুলাই থেকে শুরু হয়ে টানা ছয় মাস যুদ্ধ চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ত্রিরতন চাকমা জানান, গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারে অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশ পারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিমকুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) একদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপদে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইন জানান, সীমান্তের একশ গজ দূরত্বে থাকা মিসকাতুননবী দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।