বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ চালানোর ষড়যন্ত্র করছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২১

সীমান্তবাংলা নিউজ ডেস্কঃ  বাংলাদেশে বসবাসরত প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের সংগঠিত করে তাদের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)। বাংলাদেশের বৃহত্তম চট্টগ্রামকে কল্পিত আরাকান রাজ্যের অংশ বলে মনে করা এএলপি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করলেও সীমান্তের এপারে থামেনি তাদের অপতৎপরতা। এই অপতৎরতায় জড়িত থাকায় এএলপির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মিয়ানমারের নাগরিক উ শি মং (৬৭) এবং তার স্থানীয় সহযোগী আইয়ুব রানা গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া উ শি মংয়ের স্ত্রী সুম্রারাজ লিন প্রকাশ ম্যাম্যাও (৫৮) এই অপতৎপরতায় জড়িত রয়েছেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন।

সম্প্রতি তিন আসামির বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। ওই অভিযোগপত্রে এএলপির এমন অপতৎপরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন উ শি মং। পরে গ্রেফতার হন আইয়ুব রানা।

উ শি মংকে গ্রেফতারের পর দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর র‌্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার গিয়াস উদ্দিন বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে গোপন সংবাদ পান যে, পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এএলপির একজন সদস্য শাহজালাল বিমানবন্দরের বহির্গমন গেটের সামনে অবস্থান করছেন। তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে উ শি মংকে গ্রেফতার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে উ শি জানান, তিনি মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন। গ্রেফতারের পর তার ল্যাপটপ থেকে নিজের ও স্ত্রী সুম্রারাজ লিনের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন অফিসারের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদানের প্রমাণ পাওয়া যায়।

র‌্যাব প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, উ শি মংয়ের স্ত্রী সুম্রারাজও মিয়ানমারের এএলপির একজন গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় সদস্য। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে যাওয়া ওই সংগঠন বাংলাদেশের বৃহত্তম চট্টগ্রামকে তাদের কল্পিত আরাকান রাজ্যের অংশ বলে দাবি ও প্রচার করে। তারা বাংলাদেশে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে তাদের মাধ্যমে এ ভূখণ্ডে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। উ শি মংয়ের তথ্য মোতাবেক, আইয়ুব রানাকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বাংলাদেশের নাগরিক আইয়ুব রানার বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, আইয়ুব রানা পেশায় একজন সাংবাদিক। ২০০৬/২০০৭ সালের দিকে ক্ষৃদ্র নৃগোষ্ঠীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা পত্রিকায় লিখতে গিয়ে অপর আসামি উ শি মংয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি উ শি মং ও তার স্ত্রীকে নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করেন। এরই এক পর‌্যায়ে উ শি মংয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন টিভি খোলার প্রস্তাব দেন। যেন তারা বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করতে পারেন। তাছাড়া তারা পরিকল্পনা করছিলেন যে, তারা ২০-৩০ জন মিলে মিয়ানমারে গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, যেন তারা বোঝাতে পারেন যে বাংলাদেশে বাংলাদেশিরাই নিরাপদ নন। সেখানে রোহিঙ্গারা নিরাপদ থাকে কী করে! এভাবে তিন আসামি পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছিলেন।

সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, এ তিনজন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র, সাহায্য ও সহায়তা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও প্ররোচনা চালিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিক তদন্তে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণে সত্য প্রতীয়মান হয়েছে বলে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। উ শি মংয়ের স্ত্রী সুম্রারাজ লিন শুরু থেকে পলাতক বিধায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

( সীমান্তবাংলা/ শা ম/ ৫ জানুয়ারী ২০২১)