বহু মামলার আসামি এককালের শিবির ক্যাডার শাপলাপুরের মোক্তার কি টেকনাফের সর্দার?

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের ক্রাইম জোন খ্যাত শাপলাপুর ইউনিয়নে সাবেক এক ইউপি সদস্যের অত্যাচার নির্যাতন ও ভূমিদস্যুতা সহ হরেকরকম অপরাধের কাছে বছরের পর বছর জিন্মি হয়ে আছে এলাকার নিরহ জনসাধারণ।তার এমন পাশবিক অপতৎপরতায় খোদ নিকট আত্মীয় ও পরিবার পরিজনও অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে বলে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে।এলাকাবাসীর কাছে দূর্ধর্ষ অপরাধী তকমায় বহুল পরিচিত এ সাবেক মেম্বারের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনী ব্যবস্হা প্রত্যাশা করছে নির্যাতনের শিকার জনগণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চিহ্নিত এ অপরাধীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানা ও টেকনাফ থানায় প্রায় ২ ডজনের উর্বেধ মামলা রয়েছে।এসব মামলার কয়েকটিতে দীর্ঘ কয়েক বছর জেলও খেটেছে।অজামিন যোগ্য ধারার এসব মামলায় জামিনে এসে পুনরায় নানা অপরাধ করে বেড়ায়।মামলা গুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ বিপন্ন, নারী শিশু নির্যাতন,মানব পাচার ভূমিদস্যুতা,লুটপাট দাঙ্গা হাঙ্গামা, চাঁদাবাজি ও এন আই এ্যাক্টে প্রতারণা মামলা।এই অপরাধী সরকারের রক্ষিত অরক্ষিত বনভূমি নির্বিচারে কেটে জমি দখলেও অভিযুক্ত।একের পর এক দোর্দন্ড প্রতাপে দখল বাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলেও স্হানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণে নির্বিকার দর্শকের ভুমিকা পালন করে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।কারো কারো দাবি, অপরাধের হোতা মোক্তারের সাথে আইনী প্রশাসনের অসাধু গুটিকয়েক কর্তার ভালো সম্পর্ক থাকায় একের পর এক অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। এমনকি এই মেম্বারের নির্যাতনের বিচার চেয়ে আইনী সহায়তা প্রত্যাশাকারী নিরহ জনসাধারণকে আইনী বাহিনী দিয়েই ভয়ভীতি দেখানোর দুঃসাহসও দেখান এই মোক্তার।প্রতিবাদীরা অবশেষে প্রতিকার না পেয়ে চরম অসহায়ত্বে ভীত সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।জানাগেছে ২০১০ সালের প্রথমদিকে অপরাধে অভিষেক ঘটে মোক্তারের।মেম্বার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় পর পুরো ইউনিয়নের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি,পাহাড়কাটা,ভূমিদস্যুতা সহ নানা অপরাধে পা বাড়ান তিনি।এসব অপকর্ম বিনা বাধায় করার কৌশলে বিশাল একটি বাহিনীর রয়েছে তার।তার নির্দেশেই বাহিনীর সদস্যরা নিত্যনতুন অপরাধের জন্ম দেন।অভিযোগ রয়েছে টেকনাফ থানার তৎকালীন বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ দাশের সাথে তার সুসম্পর্ক থাকায় ধরাকে সরাঙ্গান করে অপরাধের তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি করার সাহস পান মোক্তার। শুধু এসব অপরাধ নয় ওসির সাথে ভালো সম্পর্কের সুবাদে এই মোক্তার মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায়ও নাম লেখায়।বহুমাত্রিক অপরাধী মোক্তারের পাশবিকতার ও নির্যাতনের শিকার শুধু এলাকাবাসী নন,রক্ত সম্পর্কীয় আপন ভাই-বোনও তার অপরাধের বিচার চেয়ে থানার মামলার বাদী।জমি দখলের কুউদ্দেশ্যে ২০১২
সালে আপন বোন নুরুন্নাহারের হাত কেটে দেন এই মোক্তার। এব্যাপারে নুরুন্নাহার টেকনাফ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সহ হত্যার চেষ্টার মামলা করেন যার জিআর নং ৪৩/১২।এ মামলায় ৫/৬ মাস জেল খেটে জামিন পান মোক্তার।জেল ফেরত মোক্তার বাড়িতে ফিরেই মামলা তুলে না নিলে জীবন নাশেরও হুমকি দেন বারংবার।যার ফলে ভীত সন্ত্রস্ত নুরুন্নাহার ঐ মামলা চালানোর সাহসও হারিয়ে ফেলেন কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান।এক প্রকার জিন্মিদশায় জীবনাযপন নুরুন্নাহারের।পারিবারিক অবাধ্য নিষ্ঠুর ভাই মোক্তারের রোষানল থেকে মুক্ত নয় তার আপন দুভাই নুর আহমদ ও আলী আহমদ সহ বোন আয়েশা,নুর জাহান, আনোয়ারাও।জায়গা বিক্রির প্রলোভনে ফেলে প্রবাসী আত্মীয় স্বজনদের কাছথেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেও পরে প্রতারণার মাধ্যমে সমোদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে দূর্লোভী মোক্তার। তার এ কান্ডে পারিবারিক দ্বন্দ্ব সংঘাতেও জড়িয়ে পড়েন।পরে বিচার সালিশে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন তার আপন ভাগিনা মোঃ তৈয়ব।যার মামলা নং টেকনাফ ২১/৩৩৮ তাং ৫/৫/২১।অসংখ্য অপরাধের জনক মোক্তারের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় জিআর ১৫০/১২ ও ৫৩/১২,টেকনাফ থানায় ৪৩/১২, ৩৭/১১,১৩৪/১১,৩৯৪/১১ ও ১৩৫/১১ সহ আরো প্রায় ২ ডজন মামলা ও অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে বলে অভিযোগ সুত্রে জানায়।মাদ্রাসা পড়ুয়া মোক্তার কলেজ জীবনে গিয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেন।তৎকালীন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঘা বাঘা কয়েকজন শিবির ক্যাডারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে তার।সাংগঠনিক প্রয়োজনে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অগ্রভাগে থাকতেন এই মোক্তার।কক্সবাজার শহরের ৯৮ সালে পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে নিহত কক্সবাজার কলেজ শিবির সভাপতি আবু নাসেরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই মোক্তারের।তার সাথে সম্পর্কের কারণে চট্টগ্রামের কারান্তরীণ শিবির ক্যাডার দূর্ধর্ষ নাছির, হাবিব খান,গিট্টু নাছির ও আজরাইল দেলোয়ারের ঘনিষ্ঠতাও পান মোক্তার।এমনকি চট্টগ্রাম মহানগরীতে এইট মাডারের এসব আসামিদের সাথে মোক্তারের অংশগ্রহণ ছিল বলে এলাকাবাসী ও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সুত্র জানায়।আপাদমস্তক শিবির ক্যাডার মোক্তার বোল পাল্টিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশের অপচেষ্টা করলেও তার পূর্বের কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ দর্শীদের বাধায় সেই ইচ্ছা ভেস্তে যায়।এ পর্যায়ে একলা চল নীতিতে নিজের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার সংকল্প বদ্ধ মোক্তার অবস্থা বেগতিক দেখে স্হানীয় ১৫/২০ জনের বিপদগামী দূর্বৃত্তদের তার বাহিনীতে স্হান দেন এবং তাদের সন্ত্রাসী সহযোগিতায় মুকুট হীন সম্রাটের অধিপতি বনে যান।তার বাহিনীর ভয়াল কর্মকাণ্ডে মোক্তার এখন মহা আতংক।জমি দখল,লুটপাট, চাঁদাবাজি, সরকারি সম্পদ দখল বেদখল ও মরণ নেশা ইয়াবা কারবারে মোক্তার অঢেল কালো টাকা ও সম্পদের মালিক।অপরাধ ঢাকা দিতে কালো টাকা বিলিয়ে দেন আইনী প্রশাসনের দুষ্টচক্রের অন্দরে অন্দরে।তার অবৈধ টাকায় মোটাতাজা হন নেপথ্যের পশ্রয়দাতা এসব অসাধু কর্তারা।বিনিময়ে মোক্তার ও তার লালিত বাহিনী মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাতে পারছে এলাকায়।তার এমন বর্বরতার বিষয় নিয়ে স্হানীয় এক ইউপি সদস্য জানান,সাবেক এই মেম্বারের অপরাধের কথা বলতে গেলে দিন,সপ্তাহ নয় মাস গেলেও শেষ করা যাবে না।তিনি জানান,তার অত্যাচার থেকে শুধু এলাকাবাসী নয় তার পরিবারের আপন ভাই-বোনও রেহাই পায়নি।এমনকি বছর দুয়েক পূর্বে গালিগালাজ ও মারধরের কারণে জন্মদাতা পিতা ষ্ট্রোকে মারা যান, জানান ঐ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য আয়াজ।


নানা অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক মেম্বার মোক্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দম্ভোক্তি সুরে বলেন,মামলা ৮ টি কেন আমার বিরুদ্ধে ২৮ টি মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়।এতো মামলার পরও আমাকে দমানোর কেউ নেই।এমনকি আমাকে আইনের শেকল পরানোর ক্ষমতাবান কোন কর্মকর্তাও টেকনাফ নিয়োগ দেননি সরকার।যারা আছেন সবার সাথে ভালো সম্পর্ক আমার।তাদের সাথে এমন সম্পর্ক থাকলে আমাকে বাঁধা দেয় কে?তাছাড়া আমার পতিপক্তির সাথে পাল্লা দেয়ার মতো বাপের বেটা নেই এলাকায়।আপনি লিখলেও আমার কিছুই যায় আসে না।সবাইতো টাকার পেছনে ঘুরে। আপনি কেন বেখাপ্পা হয়ে লিখতে যাবেন। মনে রাখবেন সরকারি দলের নেতারা যার সাথে সঙ্গ দেন ও সহযোগিতা করেন তার ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।তাই আমি নির্ভয়ে এসব মামলার আসামি হয়েছি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আগের সহযোগিতাকারীরা টেকনাফে কেউ না থাকলেও নতুন কর্তাদের কয়েকজনের সাথে সেই সম্পর্ক ঝালাই করে নিয়েছি।সরকারি দলের কয়েকটি অংগসংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনাও করে তিনি প্রথমে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত নয় দাবি করলেও পরক্ষণেই প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে জানান,তিনি ছাত্র জীবনে টেকনাফ কলেজে ছাত্রলীগ করতেন।তবে তার এই দাবির তদন্তে উঠে আসে রঙ্গিখালী মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে কক্সবাজার হাশিমিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র শিবিরের নানা কর্মসূচিতে সর্বক্ষণ সময় দিতেন মোক্তার।এ কারণে সকলের কাছেই তার পরিচিতি শিবির ক্যাডার।

সীমান্তবাংলা / ৬ জুন ২০২১