বালুখালী ক্যাম্পে কথিত আরসা ও আল ইয়াকিনের অপতৎপরতা!

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২

 

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি,উখিয়াঃ

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে কথিত আরসা ও আল ইয়াকিন পরিচয়ধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলছে।সংঘবদ্ধ এসব সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প অভ্যন্তরে নিজেদের আধিপত্যের লড়াইয়ে ঠিকে থাকতে নানা পন্থা অবলম্বন করে থাকে।ক্যাম্পে একাধিক কথিত সংগঠনের একাধিক গ্রুপ রয়েছে।তৎমধ্যে বালুখালী ক্যাম্পে বিচরণ করা গ্রুপ সবচেয়ে শক্তিধর বলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ।

কারণ তাদের রয়েছে বহিঃবিশ্বে থাকা রোহিঙ্গা প্রবাসীদের যোগসূত্র। তাদের ইশারায় এবং অর্থে নানা অপকর্ম পরিচালনা করছে।রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা,ক্যাম্প অভ্যন্তরের নানা তথ্য মিয়ানমার এবং বাইরে পাচার,সশস্ত্র গ্রুপ সৃষ্টিতে নিজেরাই কাজ করছে।ছবির এসব ব্যক্তিদের নেতৃত্বে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা,তরল মাদক,চোরাচালানের পণ্য,স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ সহ বহুমুখী কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে।পাশাপাশি ক্যাম্পে আশ্রিত সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে রোহিঙ্গা কল্যাণ ফান্ডের নামে মাসিক চাঁদা আদায়,শালিস বাণিজ্য, অপহরণ পূর্বক জিম্মী করে পণবাণিজ্য, বিয়ে-শাদী সহ নানা অনুষ্ঠান থেকে নিদিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে থাকে।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাইনা।কারণ প্রতিবাদ করলেই রাত গভীরে সশস্ত্র গ্রুপ এসে নিয়ে যাবে,মারধর করবে,এ ভয় কাজ করছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে।ইতিমধ্যে উখিয়ার একাধিক ক্যাম্পে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে।তার মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৩,৭,বালুখালীর ক্যাম্প-৮, ৮ ইস্ট,৯,১০ থাইংখালীর জামতলী ক্যাম্প-১৫, ক্যাম্প-২১ সহ বহু ক্যাম্পে দিবারাত্রি তাদের বিচরণ রয়েছে।।সবচেয়ে বেশী বিচরণ রয়েছে বালুখালী ক্যাম্প-৮ তে।মিয়ানমার সীমান্ত থেকেই সহজেই ক্যাম্প-৮ ও ৯,১১ তে প্রবেশ এবং যাতায়াতের জন্য সহজ।চোরাগলি দিয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে ইয়াবা,মাদক,চোরাচালান ও স্বর্ণের বড়-বড় চালান ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঢুকানো যায়।এসব ব্যবসা এবং আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজেরাই কথিত গ্রুপ সৃষ্টি করে নানামুখী অপকর্ম করে যাচ্ছে।তাদের চোরাচালান ক্যাম্পে প্রবেশ করতে রাত-বিরাতে সশস্ত্র গ্রুপ বালুখালীর জুমের ছড়া,বালুখালীর ফুটবল খেলার মাঠ, মরাগাছ তলা নামক জায়গায় বের হয়ে সীমান্ত পথে যাতায়াত করে থাকে।ফলে স্থানীয়রাও ভয়ে-আতংকে থাকে। বর্তমানে বালুখালী ক্যাম্প-৮ তে নিজেদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে অবস্থান জিইয়ে রেখেছে।তাদের একেকজন সদস্য আবার একেকটি ক্যাম্প ও ব্লকের কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে থাকে।কিন্তু সকলের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ক্যাম্প- ৮ তে মিলিত হন।

যারা সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্প অভ্যন্তরে কথিত আরসা ও আল ইয়াকিন পরিচয় দিয়ে নেতা দাবী করে চষে বেড়াচ্ছে,তাদের মধ্যে রয়েছে,ক‌্যাম্প-৮ ইষ্টের ব্লক ৪০’র মোঃ উসমান,ব্লক-বি-৩৫’র গোলাম কবিরের ছেলে মৌলবী হামিদুল্লাহ,ক্যাম্প-৭’র রিয়াজ উদ্দিন,ক্যাম্প-৮’র ব্লক ৪০’র সিরু মাঝি,ক‌্যাম্প-২১’র ছমিউদ্দিনের ছেলে নুর কামাল, সে বর্তমানে কুতুপালং ক‌্যাম্প কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছে।ক্যাম্প :১৫’র ব্লক-জি-২ ‘র মৌলবী নুরুল আলমের ছেলে মোঃ নোমান,বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটা তাঁর লাগোয়া ঘুমধুমের জিরো পয়েন্টের দিল মোহাম্মদ ও মৌলবী আরফাত আহমদ। দিল মোহাম্মদ ও মৌলবী আরাফাত আহমদ আবার এদেশীয় সোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট তথ্য দিয়েও সম্পর্ক জিইয়ে রেখেছে।তারা জিরো পয়েন্ট কেন্দ্রিক ইয়াবা,মাদক,স্বর্ণ চোরাচালানেরও অন্যতম হোতা।তাদের নিয়ন্ত্রণে জিরো পয়েন্টের সব অপকর্ম চলে।ক‌্যাম্প:৩ ব্লক-এএ/৩১,শেড মাঝি মোঃ ছিদ্দিক,হেড মাঝি নুর মোহাম্মদের ব্লকের আব্দুর রহিমের ছেলে হাফেজ মোঃ আলম,ক‌্যাম্প-৮’র হেড মাঝি ইয়াছিন।ইয়াছিন অস্ত্র সহ গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছে।কিন্তু তার কথিত গ্রুপের সদস্যরা নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা,মাদক, স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা থেকে আয় করা অর্থ এবং সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে গোপনে উত্তোলিত চাঁদার টাকায় জামিনে মুক্ত করতে মোটা টাকার তহবিল গঠন করছে ক্যাম্পে থাকা সদস্যরা।
ক্যাম্প-৮’র ব্লক বি-৪০’র ফজলুল হকের ছেলে মোঃ আয়াজ,ক‌্যাম্প-৮ ডাব্লিউ,ব্লক-এ-১৯’র আবু আহামদের ছেলে মৌলবী ফয়জুল ইসলাম,ক্যাম্প-৮ ইস্ট,ব্লক-বি-৫১ নুরুল ইসলাম মাঝির ব্লকের ডাঃ আবদুল হাকিমের ছেলে মৌলবী শফিউল আলম,ব্লক-বি-৪৩, মাঝি আতিকের ব্লকের সব্বির আহমদের ছেলে আবুল কালাম ও ব্লক-বি-৪০,সিরু মাঝির ব্লকের আজিজুল হকের নেতৃত্বে রয়েছে ক্যাম্প ও ব্লক ভিত্তিক কথিত আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপ।

এসব সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে দেশী-বিদেশী অবৈধ অস্ত্র।রয়েছে অহরহ ধারালো অস্ত্র,এমন অভিযোগ নিরীহ সাধারণ রোহিঙ্গাদের।যারা ভয়ে আতংকে মুখ খুলতে চাইনা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেন,এসব সন্ত্রাসীদের হাতে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা ক্যাম্প প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চাইতে গেলে আরো বেশী হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে জানান।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী এক গোয়েন্দা কর্মী জানান,ছবির অনেকেই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।তাদের বিষয়ে ব্যাপক ততথ্য-উপাত্ত রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরান এ সংক্রান্তে জানান,ক্যাম্পে আশ্রিত সন্ত্রাসীরা পুলিশের তালিকাভুক্ত। কোন গ্রুপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবেনা।তাদের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন’র অধিনায়ক এসপি মোঃ নাইমুল হক পিপিএম এ প্রসঙ্গে জানান,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন গ্রুপ থাকতে পারবেনা।ইতিমধ্যে এপিবিএন অভিযান পরিচালনা করে ২২০ জন কথিত আরসা সদস্য সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত প্রায় ৯শত রোহিঙ্গা দুস্কৃতকারীকে গ্রেফতার করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

সীমান্তবাংলা / ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২