বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে চলছে সিন্ডিকেট শাসন গ্রেফতার হলেও জামিনে এসে আবারো অপরাধ কর্মকান্ডে সিন্ডিকেট প্রধান,

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
,,আলমগীর ইসলামাবাদী বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি”
বাঁশখালী থানা ও উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার পুর্বে চলছে সিন্ডিকেট শাসন। ১০-১২ সদস্যের এই সিন্ডিকেটের প্রধান রেজাউল করিম কালু প্রকাশ গাছ কালুকে পুলিশ সম্প্রতি গ্রেফতার করলেও সে জামিনে এসে তার অপরাধ কর্মকান্ড আগের চেয়ে জোরদার করেছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা, জায়গা জমি দখল, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, পাহাড় ও বন উজাড়ের পাশাপাশি উপকুলীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে জলদীতে এসে জায়গা কিনে বসতি করা পৌরসভার বাইরের লোকগুলোই তাদের প্রধান টার্গেট। তাদের কথামত চাঁদা না দিলে চলে নির্যাতন ও হামলা। এই সিন্ডিকেটের পিছনে মদদ দিচ্ছে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী চক্র। এমনই অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষের। সিন্ডিকেটের ভয়ে অনেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা অভিযোগ কিংবা স্বাক্ষী দেয়া দুরের কথা মুখ খোলার সাহস নেই। নির্যাতনের শিকার স্থানীয় লোকজন জানান, পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সেক্রেটারী রেজাউল করিম কালু প্রকাশ গাছ কালু, পৌরসভার পানির ডিপের কেয়ারটেকার শাহাদাত ইসলাম দুইধ্যা এবং শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয়ের আনছারের নেতৃত্বেই চলছে এই সিন্ডিকেট শাসন। মিয়ারবাজার থেকে ১ কিলোমিটার পুর্বে সিন্নিপুকুর পাড় থেকে পুর্বের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের উপর
চলে এদের মধ্যযুগীয় নির্যাতন ও শাসন। নির্যাতিত লোকজন জানান, বাঁশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সিন্নিপুকুর ও তৎসংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার এরা বীর পুরুষ। আইন আদালত থানা পুলিশ কিছুরই তোয়াক্কা করেনা তারা। চাঁদাবাজি, জায়গা জমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসা, পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা ও সরকারী পাহাড় এবং বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের গাছ লুটই তাদের প্রধান ব্যবসা। সিন্ডিকেট প্রধান গাছ কালু একাধিক মামলা মোকদ্দমা ও সরকারী গর্জন গাছসহ পুলিশের হাতে ধরাপড়া একজন চিন্হিত গাছ চোর হলেও কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যায় বার বার। সিন্নিপুকুর পাড়ে আজিজের দোকানে বসেই রাত দিন চলে তাদের নির্যাতন ও সিন্ডিকেট জুলুমের পরিকল্পনা। জায়গাটি পাহাড়ি ও বন জঙ্গল হওয়ার পাশাপাশি পৌরসভা হলেও সিন্নিপুকুর পাড় থেকে পুর্ব দিকে কোন যানবাহন যেতে পারেনা। পুলিশ কিংবা প্রশাসনের গাড়িও যেতে পারেনা রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে। অথচ সিন্নিপুকুর পাড়ের পুর্ব দিকে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। চেরাগের নিচে অন্ধকারের মত পৌর সদরের একেবারে কাছাকাছি হয়েও এলাকাটি আজ অরক্ষিত। নিরাপত্তাহীন এলাকার মানুষ। পাহাড় থেকে মাটি কাটা, গাছ কাটাসহ সবক্ষেত্রেই চলছে এই ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট শাসন। কেউ জায়গা বিক্রি করলে দিতে হয় চাঁদা। জায়গা কিনলেও এই সিন্ডিকেট সদস্যদের টাকা দিতে হয়। নিজ ভিটা ও নিজ জায়গা থেকে গাছ কাটবেন, ফলফলাদি বিক্রি করবেন মাটি কাটবেন, ভরাট করবেন, সবকিছুতেই ওই সিন্ডিকেট সদস্যদের চাঁদা দিতে হবে। জলদীর বাইরে থেকে এসে ঘর করলে তো আরো খারাপ অবস্থা। খোদ জনপ্রতিনিধিরা এদের নিয়ন্ত্রণ করে। চাঁদা আর জুলুমের টাকার ভাগ চলে যায় নেতাদের কাছে। পুরো এলাকাকে বানিয়ে রাখা হয়েছে মাদকের আখড়া। দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাসে এদের জুলুম নির্যাতন ও হামলার শিকার হয়েছে বহু মানুষ। এর মধ্যে হাইকোর্ট মামলার বাদী ফরিদা বেগমের জায়গা দখল, শামিম আরা বেগমের বসকভিটা দখল করে গাছের লিচু লুট, রিক্সা চালক হারুনকে মারধর, আমিরাঘোনার ছাবের আহমদকে মারধর, জামালের বাবা জাকের আহমদ ও তার স্ত্রী লায়লা বেগমের কাছ থেকে জোর পুর্বক স্টাম্প নেয়া, ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ও তার আত্মীয়দের জায়গা দখলসহ অসংখ্য অভিযোগ এই সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে। এর আগে তৎকালিন মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী এবং বাঁশখালী প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক শফকত চাটগামীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে এই চক্রের সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে শাহাদাত ইসলাম দুইধ্যা মেয়র ও সাংবাদিকের উপর হামলা করতে পারাকে নিজের বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে অহংকার করে বাজারে সাজারে জাহির করে মানুষকে ভয় দেখায় বলেও অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
বাঁশখালী পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর জানান, কালু ও তার সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করলেও অদৃশ্য কারণে ব্যর্থ হচ্ছি। সামনে নির্বাচন তাই দলের জন্য তাদের দরকার মনে করছে কোন কোন নেতা। তিনি জানান, বাস্তবে সরকার ও দলের জন্য এদের এই সিন্ডিকেট বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। তাদের কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
বাঁশখালী থানার এস আই আহসান হাবিব জানান, কালু বাঁশখালী থানার তালিকাভুক্ত একজন ভূমিদস্যু। সে এবং তার গ্রুপের সদস্যদের কারণে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এলাকায় বার বার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হচ্ছে। তাকে পুলিশ সম্প্রতি গ্রেফতার করলেও সে জামিনে এসে আবারো তার অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দীন পিপিএম জানান, পুলিশের কাজ কেউ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটালে অপরাধ করলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। আমরা তাকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। সে জামিনে এসে আবার অপরাধ করলে আবারো আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। কাউকে সরকার কিংবা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপরাধ করতে দেয়া হবে না।