নিজস্ব প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার জৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়া, বিধি লঙ্ঘন করে প্রেষণে পাঠোনো, স্বেচ্ছাচারীতা, অশালীন ব্যবহারসহ নানা অভিযোগের তদন্ত ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় উপ পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রেরিত এক চিঠিতে (স্মারক নং ৩৮.০১.০০০০.০০০.২৭.০৫৫.৫৪৭.২১-৪০৭/৫) এই তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার উখিয়ায় যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। প্রথমদিকে অধীনস্থরা এসব কর্মকাণ্ডে চুপ থাকলেও পরবর্তীতে কয়েকজন মুখ খোলতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে অধীনস্থ কয়েকজন শিক্ষক যথাক্রমে তানভীর মাহমুদ খন্দকার, বেলাল আহমেদ, নুরুল্লাহ, সৈয়দ আলম, আব্দুল মালেক ও সাংবাদিক জসিম আজাদ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর শিক্ষা অফিসারের এসব অনিয়ম তদন্তের আবেদন জানান।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় উপ পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলামকে উখিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।
শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তারের সাথে অন্যান্য অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা হলেন, প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) যথাক্রমে পূরবী প্রভা রুদ্র, হাতিরঘোনা সাইরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) নাসির উদ্দিন, ইনানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এখলাছুর রহমান
এদিকে গত ১৫ মার্চ অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে (স্মারক নং-উশিঅ/উখিয়া/২৩/১৬০) আভিযোগকারীদের আগামী ২২ মার্চ (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় তার কার্যালয়ে তদন্তানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। ওই চিঠিতে তিনি কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্মারক নং-জেপ্রাশিঅ/কক্স/২৩/২৫২(১০) প্রেরিত চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক এই আহবান করা হয় বলে জানান। যদিও চিঠিটি এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত অধিকাংশ আভিযোগকারী হাতে পৌঁছেনি।
অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসারের ইস্যু করা চিঠির বিষয়ে অভিযোগকারীরা বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তদন্তের নামে এক ধরণের প্রহসন করছেন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটি চোরকে বিচার করতে দেওয়ার মতনই। এছাড়াও তদন্তানুষ্ঠানে উখিয়ার ৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। যার ফলে প্রতিয়মান হয় যে এটি কোন তদন্ত হবে না। বরং তদন্তের নামে নাটক করার পায়তারা করছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
এ ব্যাপারে জানতে উখিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তারকে কল করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করে কথা না বলে কল কেটে দেন।
অভিযোগকারীদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনছুর আলী চৌধুরী তদন্তের কার্যক্রম জানান, তিনি বলেন তদন্তের স্বার্থে আমাকে অভিযোগকারী, অভিযুক্ত সহ শিক্ষক-কর্মচারীর সাথেও কথা বলতে হতে পারে। অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার অভিযোগকারীদের চিঠি ইস্যু করতে পারে না। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আমি কথা বলবো।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় উপ পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি কঠোর নজরদারীতে রেখেছেন বলে জানান। তদন্তে কোন গাফিলতি হলে প্রয়োজনে পুনঃতদন্ত দেওয়া হবে এবং তদন্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় উপ পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রেরিত এক চিঠিতে দেওয়া নির্দেশ মতে পত্র প্রাপ্তির ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া কথা ছিলো।