সরে দাঁড়ালেন শরীফ বাদশা, কদর বেড়েছে দোয়াত কলমের;

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ২, ২০২৪

 

জুয়েল চৌধুরী, মহেশখালী:
গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) চলমান মহেশখালী উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীনকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকজনের মাঝে ভয় ও আতংক ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার পলাতক আসামী রাজাকার পুত্র জয়নাল আবেদীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী’। রিপোর্টটি প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে গত ২৭ তারিখে সাংবাদিক এস.এম রুবেল প্রকাশিত সংবাদের পেপার কাটিং ফেসবুকে শেয়ার করে একটি পোস্ট করেন- যেখানে লিখা হয়,
জয়নাল আবেদীনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। বেশ উদার মনের মানুষ। উচ্চ শিক্ষিত মানুষটি যখন মহেশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত কলম প্রতিক নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, তখন আশাবাদী হই- দ্বীপের মানুষের ভাল কিছু হবে এবার। আজকে নিউজটা চোখে পড়লো। নিউজে কোন তথ্য নাই। নাই কোন ভুক্তভোগীর বক্তব্য। এমনকি যার বিরুদ্ধে নিউজ সেই জয়নাল আবেদীনের বক্তব্য নেয়া হয়নি। বড় কথা হচ্ছে নিউজটি কোন প্রতিনিধি করেনি। জাস্ট বিরোধী পক্ষ মনের ক্ষোভ মিশিয়ে যথেচ্ছ লিখেছে, পত্রিকা তা চাপিয়েছে। তারমানে সাধারণ মানুষের মাঝে জয়নাল আবেদীনের জনপ্রিয়তা দেখে বিরোধীরা আতংকিত। কারণ তারা চায়, যুগযুগ ধরে পদ গুলো তাদের দখলে থাকুক।

http://<script async src=”https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-6073360353676030″ crossorigin=”anonymous”></script>

তিনি প্রশ্ন ছুটে দিয়ে লিখেন-
প্রশ্ন হতে পারে আমি কেন লিখছি এসব, ইনবক্সে পত্রিকার কপি দিয়ে অনেকে এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। তাদের সিম্পল উত্তর দিয়েছি- জনৈক মেয়রের পিতা ও ভাইসচেয়ারম্যানের পিতার নামও এই তালিকায় আছে। জয়নাল ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় নাই। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ। আর একাধিক সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। এক আলাপে তিনি বলেছিলেন, সামাজিক ও মানবিক কাজ করতে গিয়ে মনে হল গণমানুষের প্রতিনিধিত্বের জায়গায় আসা প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই আজকের নির্বাচন।

শেষে লিখেন-
আমরা চাই প্রার্থীরা পারষ্পরিক ক্ষোভ না ঝেড়ে, সম্প্রীতির মাধ্যমে জনগণের রায় আদায় করার চেষ্টা করুক।

খবরটি চাউর হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে অনেকে দোয়াত কলমকে সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করেছেন, আবার সেই পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

জাতীয় দৈনিক শেয়ার বীজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মহেশখালীর সন্তান এস.এম রুবেলের পোস্টে সাইফুদ্দীন সালমান আজিজ নামের একজন মন্তব্য করেছেন- ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু নিউজটি পাওয়ার পর থেকে ভোট দেওয়ার জন্য ইচ্ছা করেছি এবং তা দোয়াত কলমেই।

বোরহান উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন-
আলোকিত মানুষদের নিয়ে এমন সমালোচনা থাকবে। এটির কারণে জয়নাল ভাইয়ের জনপ্রিয়তা আরো বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ জনতার মাথায় কাটাল ভেঙে খাওয়ার দিন শেষ।

রেজাউল করিম নামের একজন লিখেছেন-
আমি আশাবাদী যারা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাওয়ার ইচ্ছে করেছিলো। তাঁরা কিন্তু আর ভুল করবে না। ভোট দিয়ে ছাড়বে ইনশাআল্লাহ। জয়নাল ভাই আমি কিন্তু আপনাকে চিনি না জানিনা। তবে মন থেকে দোয়া ও শুভ কামনা রইল। এ রকম শত মন্তব্য গেছে দোয়াত কলমের পক্ষে।

কোন কমেন্টসে্ নয়, মুহাম্মদ শাহজাহান নামের একজন সরাসরি ফেসবুক পোস্ট করে লিখেছেন-
আসছে মহেশখালী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জয়নাল ভাইয়ের সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, আদৌও হবে কিনা জানিনা। সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে নিউজটি যখন চোখে পড়লো তখনই অনুধাবণ করতে পারলাম যে, এই নির্বাচনে জয়নাল ভাইয়ের মতো কোন যোগ্য প্রার্থী নেই। ভোট বর্জনকারী হয়েও জীবনে প্রথম বারের মতো কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায়।

এ রকম শতশত লোক জয়নাল আবেদীনের পক্ষে নিজ আগ্রহের জায়গা থেকে মন্তব্য ও সমর্থন জানিয়েছেন।

সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে- গেল ছয়দিনে মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে হাজারো লোকের মাঝে। বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন এ রকম অনেকের সাথে কথা হয়েছে আমাদের। সেখানে রিপোর্টটির উদ্ধৃতি দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছে দোয়াত কলমের পক্ষে। তারা মনে করছেন- রাজাকার তকমাতে নিউজটি জয়নাল আবেদীনের বিজয়ের কারণ হতে পারে! যে বা যারা নিউজটি করেছে তাদের ক্ষমা চেয়ে নিজেদের থেকে রিপোর্টের প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বলে আরেকটি নিউজ করা প্রয়োজন। অন্তত এটি করলে বাঁচা যাবে।

এদিকে সরে দাঁড়ালেন শরীফ বাদশা:
বুধবার আনুষ্ঠানিক সাংবাদ সম্মেলন করে মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন করায় পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চলমান উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। মহেশখালীতে আমাকে যারা ভালবাসেন, ভোট দিয়েছেন আপনাদের পাশে আগেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো।

এদিকে শরীফ বাদশা সরে দাঁড়ানোর খবরে দোয়াত কলম মার্কার প্রার্থী জয়নাল আবেদীন তাঁর ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে একটি পোস্ট করেন। এরপর থেকে আবারো নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দোয়াত কলম মার্কার প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। হঠাৎ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখার কারণ জানতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।

দোয়াত কলমের প্রার্থী জয়নাল আবেদীন জানান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা ভাই অনেক ভাল ও সজ্জন মানুষ। তিনি আমাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে মূলত আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। সেই সাথে শরীফ বাদশার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শরীফ বাদশাহ ভাই অনেক অভিজ্ঞ লোক। আল্লাহ আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে কবুল করলে সাবেক চেয়ারম্যান হিসাবে উনার সুপরামর্শ আমার কাজে আসবে।

এদিকে পহেলা মে ছিল বিশ্ব শ্রমিক দিবস। শ্রমিক দিবসকে কেন্দ্র করে উপজেলার সকল চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রোগ্রাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন ইউনিয়নে। আর দোয়াত কলমের প্রোগ্রাম ছিল কালারমারছড়ায়। এদিকে শরীফ বাদশা সরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে কালারমারছড়া ইউনিয়নে থাকা তার অনেক ভক্ত দোয়াত কলমের মিছিলে যোগ দেন ও পথসভায় বক্তব্য করতে দেখা যায়।

শিক্ষিত সমাজের অভিমত, বর্তমান সময়ের কোন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার তেমন কোন আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের। তারপরও জানেন বুঝেন এমন কেউ ভোটকেন্দ্রে গেলে দোয়াত কলমেই রায় দিবে। গত ২৭ তারিখের পর থেকে আজ অবধি মহেশখালীর বেশিরভাগ ইউনিয়নে দোয়াত কলম তথা জয়নাল আবেদীনই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন।