মিয়ানমারের ১৩ টি মর্টারশেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, সীমান্ত ও মর্টার শেল আঁছড়ে পড়া স্থানপরিদর্শন করলেন বিজিবি প্রধান

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪

 

।। এম আর আয়াজ রবি।।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টি আরাকান আর্মির মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন সংঘর্ষের জেরে গত শনিবার বিকালে টেকনাফ উপজেলা হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তে সানজিদা নামক এক স্থানীয় বাসিন্দার বসত ঘরে মিয়ানমারের ছোঁড়া কয়েকটি গুলি ও মর্টারশেল আঘাত হেনেছে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন নাগরিক আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা করছেন।

তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি প্রশাসন পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বিজিবিসহ আইন শৃংখলা বাহিনী সীমান্তে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া ১৩টি মর্টারশেল এবং একটি রাউন্ড বুলেট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে, এমন পরিস্থিতিতে রোববার (২৮ জানুয়ারি) সীমান্ত এলাকা ও মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল পড়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।

তিনি প্রথমে পালংখালি সীমান্ত পরিদর্শন করেন, পরে দুপুরে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত পরিদর্শনে যান বিজিবি প্রধান নাজমুল হাসান। পরে বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।

বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বিজিবি প্রধানের সীমান্ত পরিদর্শনের সত্যতা নিশ্চিত করে
জানিয়েছেন,’ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মিয়ানমার আর্মি ও বিজিপির সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ফায়ার করা ১৩টি মর্টারশেল ও এক রাউন্ড বুলেট বাংলাদেশে এসে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবির পক্ষ হতে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান মিয়ানমারের ফায়ার করা মর্টারশেল এবং বুলেট বাংলাদেশে পড়ার স্থান পরিদর্শন এবং পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বিজিবিকে সীমান্ত এলাকায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলেন’।

গত কয়েক মাস যাবত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সাথে আরাকান আর্মির চলা যুদ্ধে অনেক রাজ্য হাতছাড়া হবার খবর থাকলেও, মুলতঃ গত কয়েকদিন পুর্বে ওপারে তীব্র গোলাগুলির শব্দ প্রকম্পিত হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। শনিবার বিকাল থেকে টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের ওপারে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে উলুবনিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দার বসত ঘরে একটি গুলি এবং বিভিন্ন জায়গায় ১৩ টি মর্টারশেল এসে পড়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসকারি স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান রোববারও পুরোদিন ভর সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সীমান্ত লাগোয়া ওপারে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা আতংকে রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে রোহিঙ্গাদের আবারও অনুপ্রবেশের আশংকা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সীমান্তবাসীর আতংক কাটাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজিবিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্টি আরাকান আর্মির মধ্যে গত এক মাসের বেশী সময় ধরে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যের সর্বত্রই এ লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে বলে নানা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রাজ্যটির অস্থির ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা দেখা দিয়েছে।