বড়লোকের সন্তানদের এনে মদপান আর নাচানাচি ছিল নেহার পেশা

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১

সীমান্তবাংলা ডেক্স : রেস্টুরেন্টে মদের পার্টিতে অতিরিক্ত মদ্যপান করিয়ে এবং পরে ধর্ষণে নিহত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার তার বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা প্রতি রাতেই মদের পার্টির আয়োজন করতেন। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ক্লাবে ডিজে পার্টির আয়োজন করে সেখানে বিত্তশালীর সন্তানদের নিয়ে আসতেন। সেখানে মদ খেয়ে নানা পোশাকে নাচানাচি আর তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে টাকা হাতানোই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য।

রিমান্ডে পুলিশের কাছে দেওয়া নেহার বক্তব্য থেকে বেরিয়ে আসছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত শুক্রবার ভোররাতে রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে নেহাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ডে আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই ছাত্রী তার বয়ফ্রেন্ড মর্তুজা রায়হান চৌধুরীসহ পাঁচজন উত্তরার ‘ব্যাম্বু শ্যুটস’ রেস্টুরেন্টে যান এবং মদপান করেন। রেস্টুরেন্টে অবস্থানের সময় ওই ছাত্রী অসুস্থতা বোধ করেন। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদীয়া হোমস লিমিটেডের তিন তলার একটি ফ্ল্যাট।

পরদিন বন্ধুর বাসায় থাকাকালে ওই অসুস্থ ছাত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন তার বয়ফ্রেন্ড মর্তুজা রায়হান। এতে আরও অসুস্থতা বোধ করলে গভীর রাতে তাকে প্রথমে নেওয়া হয় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা না থাকায় নেয়া হয় ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জানুয়ারি দুপুরে মৃত্যু হয় ওই শিক্ষার্থীর।

গতকাল ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেন, `অতিরিক্ত মদ্যপানে বিশ্ববিদালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখলাম, রাজধানীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে এই ধরনের পার্টি প্রায়ই হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় উল্লেখ্যযোগ্য আসামি ওই ছাত্রীর বান্ধবী ফারজানা জামান নেহা প্রতি রাতে এই ধরনের পার্টির আয়োজন করতেন। তার মূল কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গা, রেস্টুরেন্ট, ক্লাবে আগেই থেকে বুকিং দিয়ে পার্টির আয়োজন করা।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ওই পার্টিতে সমাজের বিত্তশালীর ছেলে-মেয়েরা, যারা সারারাত ঘুরে বেড়ায়, এমন ছেলেদের তারা সংগ্রহ করতেন। রাতের এই পার্টিতে বাইরে থেকে মদ সরবরাহ করত একজন। মদ খেয়ে নাচানাচি করতেন নেহা ও তার আমন্ত্রিত ছেলে-মেয়েরা।

নেহারা সেখানে বিভিন্ন পোশাকে নাচানাচি করতেন জানিয়ে ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘নেহার মতো যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে, তারা প্রতিরাতে বিভিন্ন পোশাক পরে পার্টিতে নাচতেন। তাদের কাজ ছিল ডিজে পার্টিতে বড়লোক বা বিত্তশালীদের এনে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। এই বন্ধুত্বের সুযোগের তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। এর বাইরে তাদের কোনো ইনকাম সোর্স নেই।’

ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এসব পার্টির পিছনে কাজ করে এক ধরনের অসাধু মাদক ব্যবসায়ী, যাদের কোনো মদের লাইসেন্স নেই। আবার কিছু রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের ওখানে বসে মদ খাবার অনুমতি না থাকলেও তারা এসব করে থাকেন। উত্তরার ‘ব্যাম্বু শ্যুটস’ রেস্টুরেন্টে মদপানের অনুমতি ছিল না। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি রাতে তারা সেখানে মদ খেয়েছেন, নাচানাচি করেছেন। এরপর মাওয়া গিয়েছেন। সেখান থেকে অসুস্থ হয়ে পরে দুজন মারা গেছেন।’

এদিকে মামলার এজাহারে থাকা তিন নম্বর আসামি আরাফাত মামলার আগের দিন (৩০ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং অনেক গোপনীয়তার সঙ্গে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরেকজনসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থীর প্রেমিক মর্তুজা রায়হান চৌধুরী, তাফসির ও কোকো আটক হন। প্রাথমিক সম্পৃক্ততা না থাকায় পরে কোকোকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় জড়িত ছেলে-মেয়েদের পরিবারে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অসামঞ্জস্য থাকার কথা জানান ডিসি হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ছাত্রী নিহতের ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হলো। আমরা লক্ষ করে দেখতে পেয়েছি, হয় বাবার সঙ্গে মায়ের মনোমালিন্য অথবা বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলে-মেয়ের মিল নেই। অথবা তারা বাবা-মায়ের কথা শুনছে না বা অবাধ্য সন্তান। তারা বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে সারা রাত বাইরে থাকে। ফলে আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’

এখন থেকে ডিজে পার্টি বা মদের পার্টির প্রতি কড়া নজরদারির ওপর গুরুত্ব দেন ডিসি হারুন। এ ছাড়া অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী বা যারা লাইসেন্সের বাইরে মদ বিক্রি করে তাদের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।

ছেলে-মেয়েরা সারারাত কোথায় ঘোরে, ড্রিংক করে বাসায় ফেরে কি না- সেদিকে বাবা-মাকে নজর রাখতে পরামর্শ রেখে ডিসি হারুন বলেন, না হলে সমাজে এই ধরনের মৃত্যু বা অপরাধ রোধ করা কঠিন হবে।

০৬ফেব্রুয়ারি/এসএস/এডমিন/ইবনে

সংবাদটি শেয়ার করুন