টেকনাফের অপহৃত শিশু ছোয়াদকে কুমিল্লা থেকে ২২ দিন পর উদ্ধার

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৪

জুয়েল চৌধুরী, মহেশখালী:

মহেশখালীতে ৩দিন রাখার পর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে অপহরণ হওয়া শিশু ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহকে শনিবার রাতে কুমিল্লার লালমাই থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটিকে অপহরণের এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে টেকনাফ ও মহেশখালী থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগু ডাকাত ও তার ভাই মোহাম্মদ হাশেম, দুই ছেলে আনোয়ার সাদেক ও রণি, স্ত্রী আয়েশা বেগম, মো: আলী ও স্ত্রী লায়লা বেগম, মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা, সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল খোবরা, আনোয়ার সাদেকের স্ত্রী হোসনে আরা, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিরপাড়ার পুরাতন রোহিঙ্গা জাফর আলমের ছেলে নাছির আলম, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদশাহ ঘোনা এলাকার সালামত উল্লাহ প্রকাশ সোনাইয়া ও তার ছেলে মো: আমির হোসেন প্রকাশ মোদিয়া, নয়াপাড়া এলাকার মৃত কালামিয়ার ছেলে জহির আহমেদ, শামসুল আলমের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম তোহা, ছামিরাঘোনা এলাকার ফরিদুল আলম ও তার ছেলে মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ।

এদিকে অপহরণ হওয়া শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরজাহান বেগম ও প্রবাসী মো: আবদুল্লাহর ছেলে।

টেকনাফ ও মহেশখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অপহরণ চক্রের প্রধান আনোয়ার সাদেকের পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা নারী উম্মে সালমা সৌদিপ্রবাসী মো: আবদুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। তিনি গোপনে শিশু ছোয়াদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ মার্চ অপহরণ করা হয় শিশু ছোয়াদকে। ওই দিন দুপুরে ক্লাস শেষে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে শিশু ছোয়াদকে অপহরণ করেন উম্মে সালমা। ছোয়াদকে না পেয়ে একই দিন সন্ধ্যায় শিশুটির মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টেকনাফ থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ জোরেশোরে মামলাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে।

টেকনাফ থানা পুলিশ আরো জানায়, ৯ মার্চের সিসিটিভির ফুটেজ ও আশেপাশের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরের দিন ১০ মার্চ রাতে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে নাসির উদ্দিনের অটোরিকশাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া প্রাথমিক তথ্য ধরে ১২ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে অপহরণকারী উম্মে সালমাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

অপরদিকে ১৩ মার্চ বিকেলে শিশুর মা নুরজাহান বেগমকে ফোন করে প্রধান পরিকল্পনাকারী আনোয়ার সাদেক। এ সময় শিশুর মা থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না দিলে শিশুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে মুক্তিপণ আদায় ও গ্রেপ্তার এড়াতে বহুবার স্থান পরিবর্তন করে অপহরণ চক্রটি। মাঝে মধ্যে দ্রুত মুক্তিপণ দিতে ছোয়াদের কান্না শোনানো হত মা নুরজাহান বেগমকে।

পুলিশের তদন্ত বলছে, অপহরণের প্রথম কয়েকদিন শিশু ছোয়াদকে রাখা হয় কক্সবাজার সদরে। পরে গ্রেপ্তার এড়াতে ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া ও সবশেষ কুমিল্লা নিয়ে যাওয়া হয়।

টেকনাফ থানার (ওসি) আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, শনিবার দুপুরে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা পরিশোধের কথা বলে পুলিশ কৌশলে কুমিল্লার লালমাই এলাকাটি জিপিএস ট্রেকিং দিয়ে শনাক্ত করে। এরপর প্রযুক্তির সহযোগিতায় ওই এলাকার একটি বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা ফেরত আনাসহ অপহরণে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ও চারটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মোদিয়া, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদ্যস্যরা অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ অপহরণের ঘটনায় জড়িত অপহরণ চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে।

কক্সবাজারের স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকার তথ্যমতে, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। যারমধ্যে অপহরণের শিকার অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।