৯ বছরেও সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালু হয়নি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারি মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও চালু হয়নি। কিশোরগঞ্জবাসী বঞ্চিত হচ্ছেন আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাও পাঠদান, ইন্টার্নশিপ ও চিকিৎসা কার্যক্রম মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতাল চালু করার দাবিতে এরই মধ্যে কলেজ থেকে পাস করা বেশ কয়েকটি ব্যাচের ইন্টার্নরা একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। তারপরও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাসপাতালটি চালু হচ্ছে না।

গত ১৫ আগস্ট মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। মেডিকেল কলেজের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বহির্বিভাগ চালুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতাল চালু না হওয়ায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন মুমূর্ষ রোগীরা। একজন পরিচালক, একজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক ও ১২ জন মেডিকেল অফিসার নিয়ে বহির্বিভাগ চলছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্যই বলা চলে।

উপপরিচালক ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল হক বলেন, হাসপাতালে রোগীরা উৎসাহ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি জানান, গত ১ ডিসেম্বর মোট ৭৬২ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন, ৮ ডিসেম্বর নিয়েছেন ৭৭১ জন। নভেম্বরে ১০ টাকার টিকিটে এক লাখ ৫৮ হাজার ২৩০ টাকা, আলট্রাসনোগ্রাম
বাবদ ৯৮ হাজার ৭৮০, প্যাথলজি বাবদ এক লাখ ৫৫ হাজার ৮০, ইসিজি বাবদ ১৩ হাজার ৯২০ এবং এক্স-রে বাবদ এক লাখ ৩২ হাজার ৯০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায়, হাসপাতালটি চালু করা সমরে দাবি নয় অতীব জরুরী।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন মেডিকেল কলেজটির হাসপাতাল চালু না হওয়ায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করতে বাধ্য হয়েছেন ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের পাস করা শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপ করছেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এক্স-রে মেশিনসহ ছোট ছোট যন্ত্রপাতি চালু করা হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে চার কোটি টাকার আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দি রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারসহ বিভিন্ন বিভাগ চালু হলে তখন সব যন্ত্রপাতি খোলা ও স্থাপন করা হবে। দামি সব যন্ত্রপাতি
বাক্সবন্দি।

জেলা বিএমএ সাধারণ স¤পাদক সহকারী অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব বাদল জানান, বহির্বিভাগে ১২ জন চিকিৎসক কর্মরত। হাসপাতালে অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন প্রায় ৫০ জন। আধুনিক যন্ত্রপাতিও এসে গেছে, যা বর্তমানে প্যাকেটবন্দি। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে
মাত্র ২০ জন মেডিকেল অফিসার ও ২০ জন নার্স সংযুক্তি দেওয়া হলেই হাসপাতাল চালু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও পিডি ডা. সজল কুমার সাহা বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ হাসপাতাল চালুর যাবতীয় উপাদান ৮০ ভাগ পরিপূর্ণ। এখন সঠিক উদ্যোগ ও দিকনির্দেশনা পেলেই হাসপাতাল চালু হতে পারে। তিনি আরও জানান, ৫৮৩.৯৯ কোটি টাকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অবকাঠামোগত সব কাজ শেষ। যন্ত্রপাতিও কেনা হয়ে গেছে। তাই হাসপাতাল চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাই যথেষ্ট।

জানা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। ওই বছরেই সৈয়দ নজরুল ইসলামের জন্মস্থান যশোদল ইউনিয়নের যশোদল মৌজায় প্রায় ৩২ একর জমি অধিগ্রহণের পর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়। গত ছয় বছরে বহুতল একাডেমিক ভবন, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস, বিশাল এলাকাজুড়ে একাধিক বড় বড় ভবন নির্মাণসহ হাসপাতালের আধুনিক ভবনটিও নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

টিনিউজ/এইচআর