ব্যাংকগুলোর বেড়েছে ২৭ কোটি ডলার এক মাসে

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৩

বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষত ডলার সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নীতি কড়াকড়ি করে। এছাড়া কঠোর নজরদারির ফলে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানি সংকুচিত করেছে। এর সুফল দেখা যাচ্ছে ডলার মজুত বৃদ্ধিতে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে মজুত বেড়েছে ২৭ কোটি ৪০ লাখ বা ২৭৪ মিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে

সূত্রমতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে মজুত ছিল ৫৯০ কোটি বা ৫ হাজার ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়ে আগস্টে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন বা ৬১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা কম খরচ হচ্ছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। তাদের দাবি, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাজই হলো ব্যবসা করে লাভ করা। দেশের ব্যাংকগুলোর আয়ের মূল দুটি উপাদান হলো প্রদেয় ঋণের সুদ বা মুনাফা এবং আমদানি বাণিজ্যে এলসি বা ঋণপত্র খোলা। আমদানি বাণিজ্যে যে পরিমাণ মুনাফা করে ব্যাংকগুলো তা দিয়ে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে বলে জানায় বেসরকারি ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী তিনি বলেন, ‘এলসি খুলে আমদানির পরে যে লাভ ব্যাংক করে তাতে কোনো লসের চিন্তা নেই। এ খাতে সবগুলো ব্যাংকই আগ্রহী থাকে বিনিয়োগ করতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক। নতুন ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। নতুন কয়েকটি ব্যাংক কার্যক্রমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েকটি বড় ধরনের দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। কোভিড প্রায় দুটি বছর নষ্ট করে দিয়েছে। এরপর রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এখন আবার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার অসম যুদ্ধের বোঝা বইতে হবে। এসব কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিই সংকটের মধ্যে। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করে সহযোগিতা করতো তা এখন বন্ধ। অন্যান্য ব্যাংকও এখন আন্তঃব্যাংক ডলার বিক্রি করে না। যার ফলে নতুন ব্যাংকগুলো কোনোভাবেই দাঁড়াতে পারছে না।তিনি আরও বলেন, ‘দেশের এমন অবস্থায় আমদানি নীতি কঠোর না করেও উপায় ছিল না। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার ফলে রিজার্ভ বেঁচে গিয়েছে। এখনো যতটুকু আছে ততটুকুও থাকতো না যদি এ সিদ্ধান্ত না নেওয়া হতো।

ব্যাংকিং চ্যানেলে আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েস করে টাকা পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্যই ধন্যবাদ পাবে। তবে, এভাবে কতদিন চলবে তারও একটা গাইডলাইন প্রয়োজন। এমন আমদানি নীতি সবসময় চলতে পারে না। নতুন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কিছু পুরোনো ব্যাংকও ব্যবসা করতে পারছে না। এরমধ্যে আবার ডিজিটাল ব্যাংকের নামে আরও কয়েকটি ‘মিনি’ ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। এসব ব্যাংক কীভাবে ব্যবসা করবে তারও একটা নির্দিষ্ট নীতি দেওয়া প্রয়োজন।’ প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার মজুত ছিল ৪৯০ কোটি ডলার, যা চলতি বছরের আগস্টের চেয়ে ১২৭ কোটি বা ১ হাজার ২৭০ মিলিয়ন ডলার কম। গেল বছরের ডিসেম্বরে ডলার মজুত কমে ৪৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে বছর শেষ হয়।

 

ডলার মজুতের মূল কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই এবং আগস্ট সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ বা ৭৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। চলতি বছর এ দুই মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ৯৩৭ কোটি ডলারের যা আগের বছর ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। এছাড়া আমদানি নীতি কঠোর হওয়ার কারণে তেমন এলসি খুলতে পারেনি। এখন ৩০ লাখ ডলারের বেশি এলসি খুলতে হলে একদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা অনুমতি দিই না। যার ফলে এলসি খুলে ডলার খরচ করতে পারে না। এ কারণেই মূলত ডলার মজুত বেড়েছে।’

যদিও এসব কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমেছে বলেও স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ডলার মজুত আরও বাড়তো যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমে না যেত। এ বছর জুলাই এবং আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ১৩ শতাংশ বা ৩৫৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের এ দুই মাসে ছিল ৪১৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৫৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কম পেয়েছে ব্যাংকগুলো। এত পরিমাণ রেমিট্যান্স কমায় ডলার মজুত আরও শক্তিশালী হয়নি।’

তথ্য মতে, আমদানি নীতি কঠোর করার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১ হাজার ৩০০ কোটি বা ১৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারের পণ্য যা ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি বা ৬৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে।