সীমান্তবাংলা ডেক্স : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার জমিতে বসানো পাম্পটি তুলে জমিটি ফেরত দিতে চাইলেও ওই এলাকার মানুষের সুপেয় পানির চাহিদার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আবার ওয়াসা জমি কেনার এখতিয়ার রাখে না বিধায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে সরাসরি ক্ষতিপূরণও দিতে পারছে না। সমস্যাটি সমাধানে জমিটি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে ওয়াসা।
ঢাকাটাইমসের সঙ্গে অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুমে এক একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। ব্যক্তি মালিকানার জমিটি থেকে পাম্প তুলে নিয়ে যার জমি তাকে ফেরত দিতে চাইলেও কেন তা সম্ভব হচ্ছে না সে ব্যাখ্যাও দেন ওয়াসা এমডি।
২০১২ সালের ২৯ মার্চ কাদেরাবাদ এলাকায় একটি পানির পাম্প বসানোর জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে জমি বরাদ্দ চায় ওয়াসা। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৬ এপ্রিল সরাই জাফরাবাদ মৌজার এক নং খাস খতিয়ানের সিএস ও এসএ ৫৭, আরএস ৯৯, মহানগর ১৩৫ দাগের শূন্য দশমিক শূন্য তিন একর জমিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে পানির পাম্প স্থাপনের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।
তবে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দের জমিতে পাম্প না বসিয়ে ওয়াসা কিন্তু ১৩ মে পাম্পটি স্থাপন করে বরাদ্দ জমির পাশের ১৩৭ দাগের একটি ব্যক্তি মালিকানা জমিতে। ওই জমির মালিক মো. শফিকুল ইসলাম সেসময় থেকে আপত্তি বারবার ওয়াসার কড়া নেড়েও কোনো সুরাহা পাননি।
শফিকুল ইসলামের বেশ কয়েকবারের আবেদনের পর ২০১৮ সালে ওয়াসা তাদের ভুল স্বীকার করে এবং জানায় জেলা প্রশাসক থেকে বরাদ্দের জমিতে নয়, পাম্প বসানো হয়েছে শফিকুল ইসলামের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে। বিষয়টি আমলে নিয়ে জমিটি কেনার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করে ওয়াসা। সে লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ শফিকুল ইসলামের জমির মালিকানা দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র চায় ওয়াসা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাগজপত্র জমাও দেন ওই জমির মালিক। ২২ মে ওয়াসার প্রকৌশলী অসীম কুমারকে আইনি নোটিশ পাঠান জমির মালিক শফিকুল ইসলাম।
দলিলপত্র জমা নেয়ার দেড় বছর পরেও বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে গত বছরের ১৯ নভেম্বর ‘ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষা করেও ওয়াসার ভূমি বিভাগ কর্তৃক ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়া প্রসঙ্গে’ একটি আবেদন জানান ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম।
ব্যক্তি মালিকানার জমিতে পাম্প বসানোর বিষয়টি ২০১৮ সালে জেনেছেন উল্লেখ করে ওয়াসা এমডি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। আমরা বলেছি, ওই জায়গা থেকে আমাদের ডিপ টিউবয়েল সরিয়ে শফিকুলের জমিটা ফেরত দিয়ে দেয়া হবে।’
‘কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এলাকার লোকজন ওখান থেকে পাম্পটি উঠাতে দিচ্ছে না। কারণ ওই জায়গায় নাকি পানির খুব অভাব হয়ে যাবে। আমরা অন্য একটা জায়গা খুঁজছি। যদি কোনো জায়গা না পাওয়া যায়, তাহলে আমরা সরকারের বলেছি, ওই জায়গাটা অধিগ্রহণ করে তাকে যেন টাকাটা দিয়ে দেয়।’
ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে সরকার ওয়াসাকে জমি কিনে দেয় উল্লেখ করে তাকসিম এ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরে জমি কেনার মতো সামর্থ আমাদের নেই। এমনকি এ ধরণের কোনো প্র্যাকটিসও আমাদের নেই। কাজেই আমরা জায়গার দাম দিতে পারব না। আমরা যেটা পারব, আমরা জায়গাটা তাকে ছেড়ে দিতে পারব। আর যদি রাখতেই হয়, তাহলে আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, সরকার যেন পদ্ধতিগতভাবে জায়গাটা অধিগ্রহণ করে তাকে অধিগ্রহণের পয়সাটা দিয়ে দেয়।’
এদিকে জমিটি ফেরত কিংবা ক্ষতিপূরণের আশায় আট বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষমাণ শফিকুল একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁইটি হারিয়ে এখন অনেকটাই দিশেহারা। আর্থিক সংকটের কারণে মেডিকেলে চান্স পাওয়া মেয়েকে ভর্তি করাতে পারেননি। আট বছর আগেও স্বচ্ছল জীবনযাপন করা শফিকুলের এখন পরিবার চালানো দায়। বর্তমানে একটি ভাড়া বাসায় কোনোভাবে দিনাতিপাত করছে পরিবারটি।
ঢাকা টাইমসকে ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১২ সালে ওয়াসা পাম্প বসাতে এলে তখনকার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বারবার বলমাম। তারা আমার কথাটি পর্যন্ত শুনল না। আমার জমিতে তারা পাম্প বসালো। ওয়াকওয়ে, খাল বানালো আমার জমির ওপর দিয়ে। ওয়াসার এমডি সাহেব বিষয়টা জানেন। তিনি বললেন জমির ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবেন। সবকিছু ঠিকও হলো। কিন্তু এখনো আমার বিষয়টি সমাধান না করে ঝুলিয়ে রেখেছেন তারা।
০৫ফেব্রুয়ারি/কারই/ডিএম/এডমিন/ইবনে