চৌফলদন্ডীতে চাচা- ভাতিজার হানাহানি চরম পর্যায়ে

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২

 

মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার।

কয়েক দফায় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের পরও সুষ্ঠু বিচার বঞ্চিত একটি পরিবার। কক্সবাজার সদর উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন চৌফলদন্ডীর ৭ নাম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পাড়ার এ পরিবারটি প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন। ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বারবার থানা পুলিশ এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল পাচ্ছেন না।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, উক্ত ইউনিয়নের আলী আকবরের পরিবারটি ছোটখাটো একটি পরিবার। স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যা সন্তান নিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন তাদের বসবাস। তাদের বসতভিটার লাগোয়া দক্ষিণ পার্শ্বে জমি ক্রয় করা যেন তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বসত বাড়ির পূর্ব পাশে যে জমিটা কিনেছে তা নিয়েও বিরোধ বাঁধাচছে প্রতিপক্ষরা।
আলী আকবরের স্ত্রী রাশেদা বেগম (৪৫) জানান, তার স্বামী তাদের বসত ভিটার লাগোয়া দক্ষিণ পার্শ্বে কিছু জমি ক্রয় করেছেন। জমির মালিক তাদেরকে জমির দখলও বুঝিয়ে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী কয়েকজন তাদেরকে এ জমির দখলে যেতে দিচ্ছে না। জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা গত মাস ও চলতি মাসে তিন দফায় তাদের বসতবাড়িতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে তিনি ও তার পুত্র মোহাম্মদ রাসেল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। বিষয়টি প্রথমে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজিবকে অবহিত করেন। তবে নানা অজুহাতে চেয়ারম্যান এর সমাধান দিতে কালক্ষেপণ করেন বলে অভিযোগ করেন রাশেদার কলেজ পড়ুয়া পুত্র মোঃ রাসেল উদ্দিন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে তারা ৯৯৯ এ ফোন দিলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই বুলবুলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি সরেজমিন বিবদমান পক্ষগুলোর সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেন। পরে প্রতিপক্ষরা বসতবাড়িতে আবারো ভাংচুর চালালে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি পুনরায় জানান। এর প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান স্থানীয় চৌকিদার মুহাম্মদ এরশাদকে ঘটনাস্থলে পাঠালেও তার ভূমিকা ছিল সম্পূর্ণ রহস্যজনক। এমনতর অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের।
এতেও কোনো সুফল না পাওয়ায় আহতরা নিরুপায় হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানা কর্তৃপক্ষ এসআই বুলবুলকে পুনরায় ঘটনাস্থলে পাঠান। অভিযোগ পত্রে নুরুল কবির, নুরুচছফা ও নুরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা একই এলাকার মৃত আনছুর আলীর পুত্র।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, প্রতিপক্ষরা গত এপ্রিল মাসের ১৯ ও ২৬ তারিখ এবং চলতি মাসের ৩ তারিখ তাদের বাসা বাড়িতে আক্রমণ চালায়। তাদের অভিযোগ, তারা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকির সম্মুখীন। তাদেরকে ঘর থেকে বের হতে দেবে না এবং ঘরছাড়া করবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় নির্যাতিত এক পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কর্তৃপক্ষ নজর দিলে তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সহজতর হবে বলে মনে করছেন দুর্দশাগ্রস্ত এ পরিবারের লোকজন।
চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজিব জানান,
জমি বিরোধ নিয়ে প্রবাসী আলী আকবর পরিবারের সদস্যদের মারধর ও ঘরবাড়ী তালাবদ্ধ করার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। উভয়পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানাই। পরবর্তীতে আবারো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো আমার নিজ এলাকা হিসেবে আমি আবারো তাদেরকে নিভৃত রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা চালাই। উঠানের মধ্যে রাসেলরা আরসিসি পিলার স্থাপন করায় ঘটনাটি আরো জটিল হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে তারা আমার কাছে না এসে আদালতের আশ্রয় নেয়। এমতাবস্থায় আমার কিছু করার আছে বলে আমি মনে করিনা।
ঘটনাস্থলে একাধিকবার তদন্তে আসা কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই বুলবুল জানান, ট্রিপল নাইন এর খবরের ভিত্তিতে আমরা তদন্তে গিয়েছিলাম উভয় পক্ষের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখি। পরবর্তীতে আলী আকবর পক্ষ বিরোধীয় জমিতে ১৪৪ ধারার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে উভয় পক্ষকেই স্থিতাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন। বর্তমানে আমাদের থানার এসআই শিপন শিপন বিষয়টি কার্যকরে কাজ চালাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ এরশাদ জানান, বিবদমান পক্ষগুলো এলাকায় অসামাজিক পরিবার হিসেবে পরিচিত। জমিজমা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনও তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিবদমান পক্ষগুলোকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা ন্যূনতম সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়। তাদের পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমি কয়েক ঘন্টা গৃহবন্দি হয়ে পড়ি। ঘটনায় উভয় পক্ষের দোষ রয়েছে। চাচা-ভাতিজার এ লড়াইয়ে বসতবাড়ি, গোয়ালঘর সহ পাল্টাপাল্টি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আগে আলী আকবর পক্ষ শক্তিশালী থাকলেও এখন অপর তিন ভাই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। চেয়ারম্যান বারবার কাগজপত্রসহ বসে সমাধা করে দেয়ার কথা বললেও কোনো পক্ষই তা কর্ণপাত করছে না।