উখিয়া থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা, কর্মমুখী কারাগার নির্মাণের পরামর্শ

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩

 

মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া

🖋️প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে আশ্রিত শত শত শরণার্থী রোহিঙ্গা নাগরিক। স্থানীয় ও আন্তর্জা‌তিকভা‌বে প্রত‌্যাবাসন প্রক্রিয়া সরব হওয়ায় মিয়ানমারে যেতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা পালানোর পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা উখিয়া ছে‌ড়ে দেশের বিভিন্ন স্থা‌নে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়রা ব‌লেন, কাজের বাহনায় প্রথ‌মে উখিয়ার বি‌ভিন্নস্থান প‌রে সু‌বিধ‌মিত সম‌য়ে কক্সবাজা‌রের লিঙ্ক‌রোড হ‌য়ে সড়কপ‌থে দে‌শের বি‌ভিন্ন জায়গায় আত্মগোপ‌নে প‌া‌লিয়ে যা‌চ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম‌্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সরকা‌রের স‌দ্বিচ্ছার পাশাপা‌শি আন্তর্জতিক মহ‌লে সরব হওয়ার বিষয় জান‌তে পে‌রে পা‌লি‌য়ে যা‌চ্ছে।
বেসরকা‌রি ম‌তে, এ সংখ‌্যা অন্তত লা‌খের উপর। ম‌রিচ‌্যা চেক‌পো‌স্টের বি‌জি‌বি সদস‌্যরা জা‌নি‌য়ে‌ছেন কা‌জের বাহনায় অথবা চি‌কিৎসার কথা ব‌লে প্রতি‌দিন রো‌হিঙ্গা নারী পুরুষ চেক‌পোষ্ট ক্রস কর‌ছে। তা‌দের কা‌ছে চি‌কিৎসাপত্র থাকায় ফেরত পাঠা‌নো সম্ভব হ‌চ্ছেনা।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম‌্যান আরও বলেন, ১৯৭৮ সালে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই সৌদি, ওমান, কাতার, দুবাই ও বাহরাইনে রয়েছে। তাদের কাছে এখন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে হুন্ডির মাধ‌্যমে টাকা পাঠিয়ে এখা‌নে নামে-বেনামে জমি কিনে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে। এসব পুরনো রোহিঙ্গার মদদে নতুন রোহিঙ্গারা প্রত‌্যাবাসন প্রক্রিয়া ব‌্যাহত করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

পালংখালীস্থ অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসাইন বলেন, ক‌্যাম্পে কর্মরত কিছু সেবাসংস্থার লোকজন প্রত‌্যাবাসন বিরোধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারাই মূলত রোহিঙ্গাদের উস্কে দিয়ে পালিয়ে যেতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতিদিন থাইংখালী ও কুতুপালং ক‌্যাম্প থেকে প্রচুর রোহিঙ্গা নাগরিক পালাচ্ছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ ও এপিবিএন তাদের আটক করলেও আবার ক‌্যাম্প এলাকায় ছেড়ে দেওয়ার কারণে আরও বেপ‌রোয়া হ‌য়ে উঠে‌ছে।

কুতুপালং ক‌্যাম্প এলাকার রাজাপালং ইউপি সদস‌্য হেলাল উদ্দিন বলেন, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্তৃক রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের বলয় গড়ে তোলা হলেও কার্যত সফলতা পায়নি। তারা কোনো না কোনোভাবে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করছে। চলে যাচ্ছে কা‌জের ব‌াহনায় পা‌লি‌য়ে যাচ্ছে গন্তব‌্যস্থানে।

তি‌নি বলেন, এক শ্রেণির পেশাদার যানবাহন পাচারকারী চক্র অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার জন‌্য সহায়তা করছে।

তি‌নি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কুট‌নৈ‌তিক সম্পর্ক জোরদার কর‌ছে। প্রত‌্যাবাসন প্রক্রিয়া তরা‌ন্বিত কর‌তে আন্তর্জা‌তিক ভা‌বে ল‌বিং ক‌রায় এক‌টি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এ সম‌য়ে তা‌দের পা‌লি‌য়ে যাওয়ার মত ঘটনা দে‌শের জন‌্য অশ‌ণি সং‌কেত।

অনলাইন নিউজর্প্টোল কক্সটাইমস ২৪ এর সম্পাদক মঈনু‌দ্দিন শা‌হিন ব‌লেন, এ খবর প্রত‌্যাবাসন বিরোধী চক্র ও দেশে ফিরতে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাথা ব‌্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সবসময় সন্ত্রাসী কার্যকলা‌পে মত্ত থা‌কে। রো‌হিঙ্গা‌দের ম‌ধ্যে স্বাভা‌বিক জীবন যাপ‌নের উপর ভরসা নেই। তারা ক‌্যা‌ম্পে নি‌জে‌দের ম‌ধ্যে আধিপত‌্য বিস্তা‌রে লে‌গে থাকে।এ কারণে রোহিঙ্গারা পালানোর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার পরিদর্শক শেখ শেখ মোঃ আলী বলেন, সরকারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব‌্যাহত করতে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করছে। তারা উখিয়া থেকে মহাসড়ক এবং গ্রামের বি‌ভিন্ন রাস্তা দিয়ে চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে।

তি‌নি বলেন, গত ক‌য়েক মাসে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি পৃথকদলে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ছয় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে ক‌্যাম্প ইনচার্জের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক‌্যাম্পে অপরাধ নির্মূলে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বেআইনি সমাবেশ করে অপরাধ সংঘটিত করতে দ্বিধা করে না। ক‌্যাম্পের অভ‌্যান্তরে একটা না একটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লেগেই থাকে। এসবের সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে এপিবিএন ব‌্যাটালিয়নকে। রোহিঙ্গাদের আটক করা হলেও আশ্রয় ক্যাম্পে ছেড়ে দেওয়ার কারণে দুঃসাহস বেপ‌রোয়া হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।
তি‌নি বলেন, এক বছরেই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এপিবিএন কর্তৃক অস্ত্র-গোলাবারুদসহ ২হাজার রোহিঙ্গাকে আটক ক‌রে কো‌র্টে সোপর্দ করা হ‌য়ে‌ছে।