নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ডীয় ও মালিকানাধীন সম্পত্তি দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ইতোমধ্যে জমিটি হাতিয়ে নিতে ওই চক্রটি বিজ্ঞ কক্সবাজার যুগ্ম জেলা জজ (প্রথম) আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। যার মামলা নম্বর অপর মিচ—৫৫/২০২১। এ নিয়ে শিক্ষক—শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিন্তু অজানা কারণে নিরব ভূমিকায় রয়েছে স্কুল পরিচালনা কমিটি।
ঈদগাহ উপজেলার এরশাদুল হক অভিযোগ করেন, এই মামলার রায় যদি ওই প্রভাবশালীর অনুকূলে চলে যায় তখন এই বিদ্যালয়ের জমিজমা তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হবে। তখন তিনি তার মত করে স্কুলের সকল জমিজমা যে কারো কাছে বিক্রয় ও হস্তান্তর করার চেষ্টা করতে পারেন। অন্যদিকে এমন সময়ে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছেন বলেও অভিযোগ করেন এরশাদুল।
বেলাল উদ্দিন নামের এই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুল সংশ্লিষ্টরা এই জমি রক্ষায় কোনো রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেনা। উল্টো নিরব দর্শকের মতোন করে ঘুমিয়ে আছে। স্কুলের জায়গার জন্য হঠাৎ তিনি মামলা করলেন তা আমাদের বুঝে উঠছেনা। জয়নাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি জানায়, স্কুলটি জালালাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান ঈদগাঁও বাজারের প্রধান সড়ক ডিসি রোড সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত এবং স্কুলটি ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের মরহুম খান সাহেব মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ওয়াকফকৃত জমিতে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। যিনি বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দাদা। প্রতিষ্ঠাকালীন এই বিদ্যালয়ের নাম ছিল ঈদগাঁও এম আহমদ এম ই স্কুল প্রকাশ ঈদগাহ হাই স্কুল। তাঁর দানকৃত জমিতে বিদ্যালয় সংকুলান না হওয়ায় তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর নিকট থেকে বিদ্যালয়ের নামে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি কিনেন এবং দানকৃত ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের জরিপ মতে পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ড করা হয় এবং সেই সময় থেকে থেকে এখন পর্যন্ত উক্ত জমি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভোগ দখলে আছেন। জমির কিছু অংশে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও মাঠ এবং বাকি অংশের জমিতে স্কুলের নামে দোকান রয়েছে। ওইসব দোকান থেকে উপার্জিত অর্থ সমূহ দিয়ে এলাকার হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের কল্যাণ এবং স্কুলের ছাত্র—ছাত্রীদের কাজে ব্যবহৃত হয়।
জানা যায়, স্কুলের জমি বাগিয়ে নিতে ওই প্রভাবশালী গত বছর ২৪ মার্চ বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ (প্রথম) কক্সবাজার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি—সম্পাদক এবং প্রধান শিক্ষককে বিবাদী করা হয়। এছাড়া আরো ১৪ জনকে মোকাবেলা বিবাদী করা হয়। তারমধ্যে তিনজন মামলা হওয়ার অনেক আগেই মারা যায়। এদের মৃত ৩ জন হলেন সুখেন্দু ভূঁইমালীর পুত্র মিলন মল্লিক এবং মৃত হরেন্দ্র মালির দুই পুত্র খোকন মল্লিক ও সুবল মল্লিক। বাকি ১১ জন দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো জীবিত আছেন। ওয়াকফ এস্টেটের দোহাই দিয়ে সম্পত্তির রেকর্ডপত্রে বিদ্যালয়ের সেক্রেটারি প্রধান শিক্ষকের স্থলে বাদি তার নাম লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন এ মামলায়। জমির রেকর্ডপত্রে বাদীর নাম লিপিবদ্ধ হলে বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি তাঁর বাক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হবে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। মামলা দায়েরের বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো ঈদগাহজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
শফিক নামের এক ব্যক্তি বলেন, স্কুল সংশ্লিষ্টরা জমি রক্ষায় আইনগত ও প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। জেলার সচেতন মহলের দাবী যদি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি বেদখলে চলে যায় তাহলে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন—ভাতা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে এলাকার দরিদ্র ও গরিব শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। ঈদগাহ স্কুলের সাবেক ছাত্র এবং কৃতি খেলোয়াড় আজিজ বলেন, বিষয়টি এলাকাবাসীকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রিয় বিদ্যালয় রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।