অফিসের পিওন হলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৩

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ১০ বছর পর গত ৯ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের ২১ দিন পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নবগঠিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই কমিটিতে একজন সরকারি চাকরিজীবীকে সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। গত (৩১ জুলাই) সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুল রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এতে সভাপতি পদে জাকিরুল ইসলাম লিমন ও সাধারণ সম্পাদক পদে সুমন রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই ঘোষণার পরেই বাঁধে বিপত্তি। দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে চলছে তুমুল সমালোচনা।

সুমন রহমান সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এমএলএসএস (অফিস সহায়ক) পদে চাকরি করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, উশৃংখল জীবন যাপন, মাদকাসক্ত ও চুরি ছিনতাইয়ের কারণে একসময় চুলকানি সুমন হিসেবেই পরিচিত ছিল সুমন রহমান। ইতিমধ্যে বিয়ে করেছেন দুইটি।

সময়ের পরিবর্তে পরিবর্তন করেছে নিজেকে। চুলকানি সুমন থেকে বর্তমানে তিনি পীর সুমন নামেই তাকে সবাই চিনে এবং জানে।

সুমন রহমান পৌর এলাকার দিয়ার ধানগড়া (সর্দার পাড়া) মহল্লার বাসিন্দা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশীরা জানান, পীর সুমনের বাবা পেশাদার একজন নাপিত ছিলেন। সুমনের চাচারাও সবাই নাপিতের কাজ করেন।

এ বিষয়ে জানতে সুমন রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেলে তিনি মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, ‘সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিরত অবস্থায় কেউ দলীয় পদ নিয়ে রাজনীতি করতে পারবেন না। বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি।

সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ভূমি অফিসের চক্রে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তাই ভূমি অফিসের পিয়ন মো. সুমন রহমান সরকারি চাকরিতে (এমএলএসএস পদ) থাকা অবস্থায় সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।

এ বিষয় জানতে চাইলে মো. সুমন রহমান বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি পিয়ন পোস্টে। আমি চাকরি ছেড়ে দেব। কমিটি ঘোষণা হয়েছে মাত্র। কোর্টে শুনানি হবে তারপর সিদ্ধান্ত নেব চাকরি ছাড়ার।’

৩০ লাখ টাকার বিনিময় পদ বাগানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি হাসি দিয়ে বলেন, ‘সবকিছু বলা সম্ভব নয়। চাকরি ছেড়ে দিলে কাগজপত্র পাঠিয়ে দেব।’

এর আগে তিনি জেলা ও পৌর ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে কথা বলতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরে পরে কেটে দেন।

এদিকে ভূমি অফিসের পিয়ন সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে দাবি করলেও এখনও অবমুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন সদর উপজেলার মেছরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সরকারি কর্মচারী (পিয়ন) ধানগড়া মহল্লার সুমন রহমান ওরফে ‘পীর সুমন’। কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভাপতি হয়েছেন জাকিরুল ইসলাম লিমন। এরপরই অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিকভাবে সুমন এ পদ পেয়েছেন।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯’র ২৫ ধারা অনুযায়ী, সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক দলের বা সহযোগী সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। বাংলাদেশে বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বা সহায়তা করতেও পারবেন না। তবে পদ পাওয়ার আগে তিনি চাকরি ছেড়েছেন কিনা, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অন্তত এক মাস আগে চাকরি ছাড়ার আবেদন করতে হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিরত কেউ দলীয় পদ নিয়ে রাজনীতি করতে পারবে না। তাঁকে অবমুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ইস্তফার আবেদন করেছেন তিনি। এরপর একটি প্রক্রিয়া আছে। তারপর অবমুক্ত হবেন। এ-সংক্রান্ত চিঠিতে সব তথ্য থাকবে। যদিও সুমন রহমান ওরফে পীর সুমনের ভাষ্য, ‘আমার বাবা-মা আওয়ামী লীগের ও ছোট ভাই জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নিজেও ছাত্রলীগ করেছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদের জন্য এক মাস আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’ তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, এসব নিয়ে গুঞ্জন শুরু হওয়ায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে সুমন বুধবার জেলা প্রশাসক বরাবর ইস্তফাপত্র দিয়েছেন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এভাবে পদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদি বলেন, ‘একজন পিয়নকে সাধারণ সম্পাদক করায় আমরা হতাশ। আমরা যারা শিক্ষিত হয়ে রাজীনিতিতে এসেছি, তারা আগামীতে হয়তো স্বেচ্ছাসেবক লীগ করব না।’

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন বলেন, সুমন ভূমি অফিসে চাকরি করলেও পদ পাওয়ায় তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেবেন বলে শুনেছেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ করতেন। মা ও ভাই জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সব বিবেচনায় হয়তো তাঁকে পদ দেওয়া হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় রয়েছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেনের দাবি, বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন না। কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, সুমন বিষয়টি আগে গোপন রাখলেও সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।