লবণশিল্পকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষায় কক্সবাজারের চাষীদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একাধিক সুপারিশ

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১

 

এন আলম আজাদ,কক্সবাজার

জাতীয় আয়ে অন্যতম অংশীদার কক্সবাজারের লবণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন দাবী জানিয়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক মিল মালিক ও সাধারণ জনতা।এসব দাবি দ্রুুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তারা।এসব দাবি সস্বলিত আবেদনে এ পেশায় সংযুক্তরা বলেছেন “স্বদেশী লবণ কিনে হও ধন্য” সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এ আকাংন্কা মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিশেষ করে মৌসুমী প্রান্তিক লবণ চাষীরা সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় লবণশিল্পের এখন বাঁচি মরি অবস্থা। এ পরিস্থিতি উত্তরণে প্রান্তিক চাষীদের ভর্তুকি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে।তারা প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমুখী নানা তৎপরতার প্রশংসা করে ঐ আবেদনে উল্লেখ করেছেন,তিনি কৃষক সমাজের আত্নার আত্নীয়। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে তাঁর এ মমতাময়ী নির্দেশ লবণ শিল্পকে আরো গতিশীল করার মহৎপ্রয়াস লক্ষনীয় হয়েছে।কিন্তু তাঁর এ নির্দেশের সামান্য টুকুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না মাঠ পর্যায়ে।এতে করে এ শিল্পে জড়িতরা রয়েছে মহাবিপাকে।একদিকে উৎপাদিত লবনের ন্যায্য মুল্য ও অন্যদিকে লবণশিল্পে কালো বাজারি চক্রের অপতৎপরতায় দারুন বিচলিত তারা।
কৃষক সমাজ বলেছেন, সমুদ্র উপকূলীয় বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের এ জেলাটি ভৌগোলিক দিকদিয়ে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা। প্রবাহমান নদীর ভয়ংকর উচ্ছাস ও গর্জনে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ৬টি মাস ভয়-ভীতিতে কাটাতে হয়। ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিলের মহা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লবণ শিল্পেরও চরম ক্ষতি হয়।এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনী এখনো।এরপরও ভীতসন্ত্রস্ত এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা বাপদাদার ন্যায় তারাও লবণ শিল্পকে আকঁড়ে ধরে আছেন। এদের মধ্যে কেউ জমির মালিক, কেউ লবণ ব্যবসায়ী, কেউ লবণ উৎপাদনকারী আবার কেউ লবণ বহনকারী শ্রমিক।তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অর্থনৈতিক সোপান উৎপাদিত লবণ।কিন্তু বর্তমানে এ শিল্পে জড়িতদের ঘরে ঘরে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ।প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় লবণশিল্পে এখন ঘোর অমানিশার দুর্দিন।এ শিল্প কালোবাজারিরা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।তারা দেশীয় লবণ উৎপাদন বন্ধ রেখে পাশ্ববর্তী দেশ থেকে লবণ আমদানিতে মরিয়া।দেশীয় লবণের চাহিদা আকাশচুম্বী হলেও অসাধুরা বিদেশি লবণের প্রতি ঝু্ঁকে পড়ায় এ জেলার লবণ উৎপাদনের কারখানা হিসাবে স্বীকৃত সদর উপজেলার ইসলামপুর,চৌফলন্ডী, পোকখালী -গোমাতলী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া,পেকুয়া ও টেকনাফের হাজার হাজার একর লবণ জমি এখন অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কৃষকরা লবন চাষে আগ্রহী হলেও তাদের উদ্বুদ্ধ ও আর্থিক সহযোগীতার প্রশাসনিক কোন ভুমিকা নেই।তাই লবণশিল্পের সম্পৃক্তরা সরকারের বাঘাবাঘা মন্ত্রী আমলাদের এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখার আখাংন্কাকে মায়াকান্না মনে করছে।উচ্চ পর্যায়ের এমন নিরবতায় লবণশিল্পে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।লবণ উৎপাদন দেশের চাহিদা পূরণের পর গত কয়েক বছরে কয়েকটি দেশে গুণগত মানের এ লবণ রপ্তানি হলেও ফি’বছরে এ প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা তা নিয়েও সন্ধিহান কৃষক সমাজ।
লবণ শিল্পের এমন দুরবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রান্তিক চাষি ইসলামপুরের রফিকুল ইসলাম বলেন,লবণ চাষের জন্য শ্রমিক প্রতি ৩ কানি জমি বর্গা নিতে গিয়ে গৃহপালিত গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাস-মুরগি বিক্রি করে টাকার জোগাড় করা হয়।এতেও সংকূলান না হলে বিয়ের অলংকার বন্ধক বা বিক্রি করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে জীবিকা বাঁচিয়ে রাখি আমরা।কিন্তু ন্যায্য মুল্য না পেলে ঘরবাড়িতে না খেয়ে উপোস থাকতে হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা সভাপতি সামশুল আলম আজাদ জানান,ইতিমধ্যে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।তিনি কৃষকের বন্ধু।হয়তো প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আসবে এ শিল্প রক্ষায়।তা না হলে লবণশিল্পে জড়িতদের প্রতিটি ঘরে দুঃখ দুর্দশা নেমে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কক্সবাজারের ইসলামপুরের সালমা সল্টের মালিক জাহাঙ্গীর আলমও লবণ উৎপাদনে সরকারের সুদৃষ্টি চান।তিনি কালোবাজারি চক্র দমণে আইনি সহযোগীতা সহ লবণমাঠে সরকারের ভর্তুকি প্রণোদনার উপর গুরুতারোপ করেন।তিনি আরও জানান,এই সুবিধা গুলো সরকার বিবেচনায় নিলে লবণশিল্প ঘুরে দাঁড়িয়ে জাতীয় আয়ে আগের চেয়ে বেশি ভুমিকা রাখবে।

( সীমান্তবাংলা/ শা ম/ ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১)