দিনরাত ঘুমাতে পারিনি তোকে বুকে নিয়ে বসে ছিলাম, মৃত্যুর আগে সন্তানের কাছে মায়ের চিঠি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯

মৃত্যুর পর খোলা মায়ের চিঠি! মা মারা যাওয়ার কিছু দিন পর,মায়ের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি পায় তার একমাত্র ছেলে। চিঠিতে লেখা ছিল খোকা,এই চিঠি যখন তোর হাতে পড়বে তখন আমি তোর কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাবো, যেখান থেকে কেউ কোনো দিন ফিরে আসে না। খোকা, তোর অনেক কথাই মনে নেই,তাই এই চিঠিতে লিখে গেলাম তোর মনে না থাকা সেই কথা গুলি।

তুই যখন ছোট্ট ছিলি একবার তোর জ্বর এসেছিলো,আমি তিন রাত ঘুমাতে পারিনি তোকে বুকে নিয়ে বসে ছিলাম,কারন তোকে বিছানায় শোয়ালেই তুই কেঁদে উঠতি। তোর বাবা আমাকে বলেছিলো তোকে শুইয়ে রাখতে কিন্তু আমি পারিনি ! সে জন্য আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছিলো তোর বাবা। তোকে যখন রাতে বিছানায় শোয়াতাম, তুই প্রশ্রাব করে বার বার বিছানা ভিজিয়ে ফেলতি তখন আমি তোকে আবার শুকনো জায়গায় শোয়াতাম আর আমি তোর প্রশ্রাবে ভেজা জায়গায় শুয়ে থাকতাম।

তোর বাবা যখন মারা গেলো, তখন অনেক কষ্টে আমাকে সংসারটা চালাতে হয়েছিলো,একটা ডিম ভেজে দুই টুকরো করে তোকে দু’বেলায় দিতাম,এমনও দিন গেছে শুধু লবন দিয়ে ভাত খেয়েছি আমি,কিন্তু তোকে বুঝতে দেই নাই আমি।একদিন রান্না করার মতো কোনো চাল ছিলো না ঘরে,তখন কোনো উপায় না পেয়ে একবাড়িতে কাজ করে কিছু চাল এনে ভাত রেঁধে খাইয়েছিলাম তোকে। হয়তো তুই ভুলে গেছিস,যখন তোর এস এস সি পরিক্ষিার ফি দিতে পারছিলাম না তখন তোর বাবার দেয়া শেষ স্মৃতি নাকফুলটা বিক্রি করে দিয়েছিলাম,আরো অনেক কথা আছে যা লিখতে গেলে হয়তো খাতা শেষ হয়ে যাবে,কিন্তু লেখা শেষ হবে না। ভাবছিস এতো কথা তোকে কেন লিখে গেলাম, খোকা তুই যখন বড়ো হলি একটা ভালো চাকরি পেলি, এর কিছুদিন পরে বিয়ে করলি,তখন আমি তোদের নিয়ে ভালোই ছিলাম।

মনে আছে খোকা ? একদিন ঘর থেকে কিছু টাকা চুরি হলো,সেদিন তুই আমাকে জিগ্যেস করেছিলি আমি তোর টাকার ব্যাপারে কিছু জানি কি না, তুই আমাকে সরাসরি কিছু না বললেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুই আমাকে চোর ভেবেছিলি। এর কিছুদিন পর তুই আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে অন্য একটি ঘরে রেখে দিলি। খোকা আমার সেই ঘরটিতে থাকতে অনেক ভয় করতো,কারন ঘরটি তোদের কাছ থেকে অনেক দুরে ছিলো,খোকা তোকে একদিন বলেও ছিলাম আমার একা একা থাকতে ভয় লাগে, তুই বলেছিলি মরন আসলে যে কোনো যায়গায় আসবে।

আমার হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়ে ছিলো তাই তোকে বলেছিলাম খোকা, আমাকে কিছু ঔষদ কিনে দিবি,তুই বলেছিলি এই বয়সে ঔষধ খাওয়া লাগে না, এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে। খোকা বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না, শরীরে ফোসকা পড়ে গিয়েছিলো শরীর থেকে পঁচা গন্ধ আসতো, কতো দিন যে স্নান করিনি তা ঠিক বলতে পারবো না, খোকা তোর ঘরটা ছিলো আমার ঘরের থেকে অনেক দুরে,কখন আশিস কখন চলে যাস আমি কিছুই দেখতে পারতাম না, তবুও পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম,খোকা, তুই যখন ছোট ছিলি আমি খেতে বসলে তোকে কোলে নিয়ে খেতে বসতাম,তবুও কখনো তোকে চোখের আড়াল হতে দিতাম না।

খোকা, যখন তুই আমার কোলে পায়খানা করে দিতি,তোর পায়খানা পরিস্কার করতে আমার একটুও ঘৃনা লাগতো না,কিন্তু তুই যখন আমার কাছে আসতি তখন নাকে রুমাল দিয়ে আসতি, ক্যানোরে খোকা আমার শরীর দিয়ে গন্ধ আসতো বলে ? এক কাপড়ে আমাকে কতো মাস যে থাকতে হয়েছে তা আমি ঠিক বলতে পারবো নারে, খোকা। তুই যখন অনেক দিন পর একবার আমাকে দেখতে এসেছিলি আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোকে বুকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু খোকা পারিনি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে,কারণ, আমার শরীরে তো অনেক ময়লা ছিলো,তাতে যদি তোর দামি সার্ট প্যান্ট নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়েতে তোকে বুকে নিতে পারিনি সেদিন খোকা কখনো আমাকে একবারও জিগ্যেস করিসনি, মা তোমার কিছু খেতে মন চায়,খাওয়ার কথা থাক,, কতদিন যে তোর মুখে মা ডাক শুনিনি,তাও ঠিক বলতে পারবো না।

খোকা আমার কি অপরাধ ছিলো, যে আমাকে তোর কাছ থেকে অনেক দুরে রাখলি, খোকা, তুই কি পারতি না আমাকে তোর কাছে রাখতে ? খোকা তুই কি পারতি না,আমাকে একটা কাপড় কিনে দিতে ? খোকা, তুই কি পারতি না, আমাকে একটা ডাক্তার দেখাতে? আমাকে একটা ডাক্তার দেখালে হয়তো এই পৃথিবীতে আরো কিছুদিন থাকতে পারতাম,খোকা, কোনো মা তার সন্তানের কাছে পেট ভরে খেতে চায় না,শুধু মন ভরে *মা* ডাক শুনতে চায়,যা তুই কখনোই বুঝতে চাসনি। খোকা তোকে একটি শেষ অনুরোধ করছি,আমার এই চিঠিটা তোর সন্তানদের পড়ে শোনাবি,কারণ, তুই বৃদ্ধ হলে তোর সাথে তোর সন্তানেরা যাতে এরকমটি আর না করে। ভালো থাকিশ খোকা।