সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবছার কামাল (নোবেলের) হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে মরিয়া

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

টেকনাফের হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামি নুরুল আবছার নোবেল নামের এক ব্যক্তি। এমন কি কমিটি সংক্রান্ত বৈঠকে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান। এসময় কতিপয় আদালতের সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের তান্ডব, হুমকি ও মারধরের ভয়ে বর্তমানে বিদ্যালয়ে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মাষ্টার রশিদ আহমদ।

জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২১ মে রবিবার সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক বৈঠক আহবান করে। হ্নীলার মরহুম আব্দুস সালাম কোম্পানির পুত্র শেখ মো: রফিক উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল-২০২৩ ইং তারিখে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ শূন্য হওয়ায় সভাপতি নিয়োগ সংক্রান্ত এক বৈঠকে গত ২১ মে হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ নূরুল আবছার, প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত সকলে পরিচিত পর্ব শেষে সভাপতি নির্বাচনে কার্যক্রম শুরু করলে মাষ্টার রশিদ আহমদ ও আবছার কামাল নোবেল সভাপতি হিসাবে প্রার্থীতা ঘোষণা দেন। প্রথমে আবছার কামাল নোবেলের পক্ষে তার বোন পারভিন আক্তার বিউটি আবছারের সভাপতির প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ম্যানেজিং কমিটির সিনিয়র দাতা সদস্য মাষ্টার রশিদ আহমদ ও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন।

মাষ্টার রশিদ সভাপতির প্রার্থী ঘোষণা দিতে না দিতেই আবছার কামাল ও তার লোকজন মারমুখী হয়ে উঠে। তাহার উৎপেতে থাকা বাহিনী হৈচৈ অশ্লীল গালমন্দ শুরু করে। আবছার কামাল তখন দম্ভ করে বলেন,হ্নীলা গার্লস স্কুল আমার পৈত্রিক সম্পত্তি! আমার পিতা স্কুলের জমি দাতা। আমার বাইরে কেউ কথা বললে তাকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। আমার ভাই মরণে উত্তরাধিকার সূত্রে আমিই সভাপতি।

এক পর্যায়ে আবছার ও সজ্জিত বাহিনী ধর ধর মার বলে চিৎকার করতে থাকে। এক পর্যায়ে সভা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অবস্থা বৈগতিক দেখে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার দ্রুত স্কুল ত্যাগ করেন।

একাডেমিক সুপারভাইজার চলে যাওয়ার মুহূর্তেই সভাপতি প্রার্থী মাষ্টার রশিদ আহমদ ও তার ৩/৪ ছেলে কে আবছারের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী আক্রমন করে। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিষয়টি উপজেলার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট অবহিত করেন।জানা যায়, মরহুম আব্দুসসালাম কোম্পানির পুত্র তথাকথিত সভাপতির দাবীদার আবছার কামাল নোবেল কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুড়িশিয়াল আদালতে একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি।

টেকনাফের এক আইনজীবীকে মারধরের ঘটনায় তারা ৩ ভাই কে সাজা দিয়েছে আদালত। মামলা হওয়ার এক যুগ পর সম্প্রতি ১২ এপ্রিল বুধবার কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুড়িশিয়াল আদালতের বিচারক কৌশিক আহমেদ খন্দকার এই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে আব্দুস সালাম কোম্পানির ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)কে ১ বছর, আবছার কামাল (৩৭)কে ৬ মাস ও আনোয়ার (৪০)কে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব পানখালী এলাকায় নিজের বসত-বাড়ির উঠোনে যাকাতের টাকা বিলির সময় অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম চৌধুরী ও তার পরিবারের উপর একই এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আবছার, মো: আনোয়ারসহ বেশ কয়েকজন এই হামলা চালায় ।এতে গুরুতর আহত হন প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট শাহ আলম চৌধুরী।
পরে এই ঘটনায় আহত অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন৷ মামলা নং- ১২৩/২০১০। পরে এই মামলায় দীর্ঘ শুনানীর পর বিজ্ঞ আদালত রায় দেন। রায়ে আসামী জাহাঙ্গীর আলমকে ১ বছর, নুরুল আবছার নোবেল কে ৬ মাস ও মো. আনোয়ারকে ৬ মাস সাজা দেওয়া হয়। তবে মামলা থেকে দেলোয়ার, রফিক, সরোয়ার ও নুরুল আমিনকে খালাস দেওয়া হয়। এছাড়া আবছার কামাল নোবেল এর বিরুদ্ধে ও ৬০৬/১১ ধারা নারী নির্যাতন সহ বহু মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এব্যাপারে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো: নুরুল আবছারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি হৈচৈ ও অপ্রীতিকর ঘটনার কথার প্রসঙ্গে বলেন তখন সেখানে এমন কোন কিছুই ঘটেনি ,তিনি বলেন সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে এই কমিটি নির্ধারণ করা হবে ।

সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি সভাপতির পদে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি যেই হোক, সভাপতি হওয়ার কোন প্রকার সুযোগ নেই বলে জানান।

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমি ভিতরে ছিলাম বাহিরে হৈচৈ শুনতে পেয়ে উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার চলে যান।

হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন সদস্য জানায়, একজন দন্ডিত আসামী কিভাবে স্কুল গভর্নিং বডির সভাপতি প্রার্থী হয় ! এছাড়া একজন নম্র ভদ্র ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত মাষ্টার রশিদ আহমদের উপর এধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।

এ বিষয়ে নুরুল আবছার নোবেলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমার আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বানোয়াট তিনি বলেন এই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আমি দাতা সদস্য আমার ভাই রফিক দির্ঘদিন সভাপতি ছিলেন তাহার মৃত্যুর পর পদ শূন্য হওয়ায় আমরা অত্র বিদ্যালয়ে সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে সভাপতি প্রস্তাবিত করে এতে আমাকে সবাইর সমর্থন দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমিটির কার্যক্রম বন্ধ করার পাঁয়তারা চালায় অন্যতায় একাডেমিক সুপারভাইজার বিরক্ত হয়ে চলে যায়।