প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনাকে সচিবালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন এবং নথি চুরির মামলা

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২১

ডেস্ক নিউজঃ
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সচিবালয়ে  সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রথম আলো’র বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামকে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবং তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় নেওয়া হয় রোজিনাকে। পরে গ্রেফতার দেখানো হয়।

প্রথম আলোর এই সিনিয়র সাংবাদিক সম্পর্কে যতোটুকু জানা গেছে তিনি একজন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন মুলক সংবাদ কর্মী হিসেবে বেশ সুনামের সহিত দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি বেশ কিছু পুরষ্কার ও পেয়েছেন।

রোজিনা’র বিরুদ্ধে সরকারি নথি অনুমতি ছাড়া মোবাইলে ধারণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। আটক অবস্থায় তাঁকে হেনস্থা করার পাশাপাশি মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। গলা ও মুখে চেপে ধরার কারনে তিনি দু’বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার কথাও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম দাবি করেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের পিএসের রুমে গিয়ে সরকারি নথির ছবি তোলা এবং গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নেওয়ার কারণে থানায় অভিযোগ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। আজ (১৮ মে ২০২১) মঙ্গলবার তাকে আদালতে তুলে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা ইসলাম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অনন্য। আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর স্বীকৃতি আছে। এমন একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা অন্যায়, অনভিপ্রেত। কী কারণে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে হাসপাতালে না নেওয়ার বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। রোজিনাকে হেনস্তা করার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে হবে।

এদিকে গতোকাল রাত ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে এবং তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিকে রোজিনার গ্রেফতারে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন সহ সামাজিক সংগঠন সচিবালয় ও শাহবাগে বিক্ষোভ করে এবং তারা অতিস্বত্তর রোজিনারআমলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দাবী করে।

এ ঘঠনায় যারা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেনঃ

সিপিজে

বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) এক টুইট বার্তায় রোজিনা ইসলামকে আটক এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে সচিবালয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সিপিজে তাদের টুইটে সচিবালয়ে আটক অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে যাওয়া রোজিনা ইসলামের একটি ছবিও ব্যবহার করেছে।

বিএমসএফ

প্রথম আলোর সিনিয়র এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের উপর নির্যাতনের ঘঠনায় নিন্দা ও গভীর উদ্যেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম( বিএমএসএফ)। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এই সংগঠনের নেতারা বলেন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একজন সাংবাদিকের উপর হামলা ও আটকে রাখা মানে সারাদেশের গনমাধ্যমের টুটি চেপে ধরার সামিল। গনমাধ্যমের উপর এসব দমন পীড়ন বন্ধ করতে হবে। এবং অবিলম্বে রোজিনাকে স্বসম্মানে মুক্তি দিয়ে তার কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে হবে।  অন্যথায় সাংবাদিকেরা একযোগে দুর্বার আন্দোলনের ডাক দিতেও পিচপা হবেনা।

জাতীয় পার্টি

রোজিনা ইসলামকে আটক ও হেনস্তার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় একজন নারী সাংবাদিকের ওপর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগের এই আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র

রোজিনা ইসলামকে আটক ও হেনস্থার নিন্দা জানিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রোজিনা ইসলাম কাজ করছেন। তিনি তার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে এনেছেন। করোনাকালে জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতাগুলোও তার প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এমন একজন সাংবাদিককে পেশাগত কাজের সময় এভাবে আটক করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রোজিনাকে আটকের এ ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

কক্সটাইমস ২৪/ ১৮ মে ২০২১