পেটের ভেতরে গজ রেখে সেলাই, থানায় অভিযোগ

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৩

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ভাঙ্গায় গ্রীন (প্রাঃ) হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অমি আক্তার (১৮) নামের এক প্রসুতীর সিজারের সময় পেটের মধ্যে গজ রেছে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিকেলে (২৭ আগষ্ট) এ বিষয়ে ভুক্তভোগির স্বামী তুষার মিয়া ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দেন। তবে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষের কে.এম মফিজুর এ বিষয়ে ফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তারঁ স্ত্রীকে সিজারের জন্য ভাঙ্গা গ্রীন (প্রাঃ) হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে ডাক্তার তামান্না হাসান ও ডাক্তার গোপাল দাসের তত্বাবধানে তাঁর স্ত্রীর অপারেশন করা হয়। এসময় তাঁর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তারপর ২৭ মার্চ তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রীর হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গ্রীন হসপিটালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারঁ স্ত্রীকে পুনঃরায় হসপিটালে নেওয়া হয়। এসময় আবারো কিছু পরিক্ষা-নিরিক্ষা করেন তারা। কিন্তু, এতে রোগীর সঠিক কোন সমস্যা নির্ণয় করতে না পেরে বরং তুষারকে বলা হয় তাঁর স্ত্রীর থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে সেখান থেকে ফরিদপুরের এক অভিজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো হলে তিনি জানান, তাঁর স্ত্রীর থাইরয়েডের কোন সমস্যা নাই। এ ভাবেই কয়েকমাস যাবত তাঁর স্ত্রীর পেটের যন্ত্রনায় ভুগেন। এক পর্যায়ে, গত ২৩ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে তাঁর স্ত্রী মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা ল্যাবএইডে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর অভিজ্ঞ চিকিৎসকগন আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর সঠিক সমস্যা নির্ণয় করতে সক্ষম হন এবং তাঁর স্ত্রীর পেটের মধ্যে গজ ও মলমুত্র রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। এরপর সেখানে পুনঃরায় তাঁর স্ত্রীকে অপারেশন করার মধ্য দিয়ে পেটে থাকা গজ ও মলমুত্র বের করা হয়। এতে তুষার সামাজিক, মানুষিক ও অর্থনৈতিকভাবে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হন। পরবর্তিতে, এ ঘটনায় তাঁর পরিবার ও আত্বীয় স্বজনদের মাধ্যমে গ্রীন হসপিটালের সেবার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিলে তিনি জানতে পারেন, ওই প্রতিষ্ঠানে যে সকল ডাক্তারদের নাম বলে সিজার করানো হয়, সেসব চিকিৎসক দ্বারা রোগীদেরকে অপারেশন না করিয়ে অনভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স দিয়ে সিজার করানো হয়। যেমনটি তাঁর স্ত্রীর বেলায় ঘটেছে বলেও অভিযোগ করেন তুষার মিয়া। এ ঘটনায় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থাসহ একটি সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তুষার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

ডাক্তার তামান্না হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ও একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষের কে,এম মফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে মুঠোফোনে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি, অভিযোগের কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রাণেশ পন্ডিত জানান, আজ বিকেলে একটি অভিযোগ পেয়েছি, এ বিষয়ে আগামীকাল খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, অভিযোগের সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টির তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া জানান, ঘটনার তদন্তে তিনি সরেজমিনে কাজ করছেন। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার শাহজাহান (পিপিএম) সমকালকে জানান, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।