পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ঘাটতি নেই, তবুও নিয়ন্ত্রণহীণ বাজার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২০

পাবনা প্রতিনিধি : পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও খারাপ আবহাওয়া, আমদানী সংকটসহ নানা অজুহাতে পাবনায় নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় দাম কমলেও, অসাধু চক্রের কারসাজিতে ক্রমাগত ওঠা নামায় শনি ও রবিবার পেঁয়াজের দাম ছাড়ায় ডাবল সেঞ্চুরির ঘর। সোমবার ও মঙ্গলবার বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে মান ভেদে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। বাজারের এমন অস্বাভাবিক আচরণে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা, বিভ্রান্ত কৃষক ও বিক্রেতারাও। বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্ধারিত দাম বেঁধে দেওয়াসহ নজরদারী বাড়ানোর দাবী তাদের।

চাষীরা জানান, অকাল বন্যায় রোপণে কিছুটা দেরী হলেও আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে আজন্ম লোকসানের সাথে পরিচিত পাবনার চাষীদের এ বছর লাভের অংক ছাড়িয়েছে সর্বকালের রেকর্ড। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে মাঠে মাঠে পেঁয়াজ উত্তোলনে চাষীদের এখন দারুন ব্যস্ততা।
চাষীরা বলছেন, এ বছর পেঁয়াজের যে দাম তাতে লোকসান হচ্ছেনা কারোই। মণ প্রতি ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পেলেই তারা ভালো লাভ পাবেন। মৌসুমের শুরু থেকে এমন দাম পেলেও, গত এক সপ্তাহে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মণ প্রতি দু থেকে তিন হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে মণ প্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। কখনো শৈত্য প্রবাহ, কখনো বৃষ্টির অজুহাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থসিদ্ধি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের দামের আকাশ পাতাল ফারাকে বিভ্রান্তিতে পরছেন চাষী ও খুচরা বিক্রেতারাও। বাজার নিয়ন্ত্রনে দ্রুত পদক্ষেপ চান তারা।

পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর এলাকার এলাকার কৃষক তোপাজ্জল হোসেন জানান, শৈত্য প্রবাহ ও বৃষ্টির কারণে শনি ও রবিবার আমাদের গ্রামের চাষীরা পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে তুলতে পারেনি। কম উত্তোলন করায় বাজারে সরবরাহ কম হয়েছে। এই সুযোগে অসাধু চক্র গুজব ছড়িয়ে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মোবাইল ফোনে মুহুর্তেই সে খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায়, সারা দেশেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মহিদুল হক বলেন, সরকারী নজরদারী না থাকায় বাজারে যে যার মত দাম নির্ধারণ করছে। গত মঙ্গলবার আমি ৪০০০ টাকা মণ দরে দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করেই প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি। আমার জীবনে কখনো পেঁয়াজের এমন দাম দেখিনি।

মঙ্গলবার সকালে পাবনার বড় বাজারে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতা, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতার সাথে। তারা জনান, ভারতের রপ্তানী বন্ধের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি পাগলা ঘোড়ার মত লাগামহীন হওয়া বাজারের উর্ধ্বগতি রুখবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, কৃষিবিভাগ এমন আশ^াস দিলেও এখনো নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়েছে উৎপাদন, বাজারেও সরবরাহে ঘাটতি নেই তাহলে কেন এই পরিস্থিতি, এর সদুত্তর দিতে পারেনি কোন ব্যবসায়ীরাই। নাম প্রকাশ করে কোন বক্তব্যও দিতে রাজি নন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক আজহার আলী সরকার জানান, চলতি বছর পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের ৯ হাজার ৮০০ হেক্টর লক্ষমাত্রায় অর্জিত হয়েছে ৯ হাজার ২৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে চার হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ উত্তোলনের পর এখনো মাঠে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির পেঁয়াজ। ফেব্রুয়ারীর শুরুতেই হালি পেঁয়াজও বাজারে উঠতে শুরু করবে। সে পর্যন্ত সংকট হবার কোন কারণ নেই। গুজব ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে, এ ব্যপারে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরী।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, সরবরাহ কম থাকার সুযোগে মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন। এ ব্যপারে সতর্ক করা হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই দাম অনেক কমে এসেছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন আরো কঠোর হবে।

টিনিউজ/এইচআর