নরসিংদীর পলাশে এক ইউনিয়নে ১৪ ইটভাটা

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২

মো: খায়রুল ইসলামঃ

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অব্যাহত বায়ুদূষণে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিয়মনীতি না মেনে ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপন হলেও নেই প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ। অন্যদিকে নিয়মনীতি না মেনে ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের দায় নিতে রাজি নয় স্থানীয় কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।

নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৫টি অবৈধসহ জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৫০টি। এর মধ্যে পলাশের ডাঙ্গা ইউনিয়নে রয়েছে ১৪টি। যার মধ্যে ৯টি বৈধ ও ৫টি অবৈধ। তবে স্থানীয়রা বলছেন এই ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরও বেশি।
সরেজমিন দেখা গেছে, এক বা দুই ফসলি কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রায় সব ইটভাটাই ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন নিয়মনীতি না মেনে ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে কাজৈর, ইসলামপাড়া, গালিমপুর, ভিরিন্দা ও সান্তানপাড়ার ইটভাটায়। ট্রাক দিয়ে দিন ও রাতে সমানতালে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় সব রাস্তাঘাট। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশেপাশের বাড়িঘর। চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কৃষিজমি। ফল হচ্ছে না বিভিন্ন ফলফলাদির গাছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকদের এসব আগ্রাসনের প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসী ও কৃষকদের হুমকি দেওয়া হয়। এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও। কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র পেয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা-সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, যেসব জমিতে ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে এসব জমিতে ধানসহ কলা ও সবজি চাষ হতো। পরে এসব জমিসহ আশেপাশের নিকটবর্তী জমিগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে আশেপাশের সব জমি এখন আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষিজমির মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে বড় বড় গর্ত করার ফলে আশেপাশের ধানের জমিও ভেঙে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে রাস্তাও ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু সংখ্যক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে হেঁটেও চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।

কাজৈর এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, ‘বাড়ির আঙিনায় ফলফলাদির গাছে ফলন হতো। বাড়ির সামনে ইটভাটা হওয়ার কারণে এখন ফল ধরে না। ধুলোবালির কারণে দরজা জানালা বন্ধ করে পর্দা টানিয়েও রেহাই পাচ্ছি না। অভিযোগ জানালে ইটভাটা মালিকেরা বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেন।’

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ফসল হয় না এমন জমিতে কৃষি বিভাগের অনাপত্তিপত্র পেলেই ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে। কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয় না।

তবে আগে যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সেগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছাইদুর রহমান বলেন, ‘কোনো কৃষিজমিতে ভাটা করার অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয় না। কোথাও এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে সরেজমিন গিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, ‘নতুন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। অনুমতিবিহীন কোনো ইটভাটা নরসিংদী জেলায় চলতে পারবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’