যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলন ততোই জোরালোভাবে আলোচনায় আসছে কে হতে যাচ্ছেন আগামীতে দলটির সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন পদ পদবীর জন্য শুরু হয়েছে নেতাকর্মীদের দৌড় ঝাপ।
এদিকে টানা দুই মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদেরের পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। তিনি আবারো সম্পাদকের দায়িত্বে আসছেন নাকি পদটিতে পরিবর্তন আসছে-এই আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের দায়ত্বশীলদের ভেতরে। তবে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে কেউ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের ইতিহাস নেই।
অন্যদিকে সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষ বিএনপি আওয়ামীলীগকে চ্যালেঞ্জ করে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিতে পরিবর্তন আসতে পারে- এই ধারণা উড়িয়ে দিচ্ছেন দেশের বিজ্ঞ মহল। আর এই ধারণা থেকেই দলটিতে সাধারণ সম্পাদক পদের আশায় বেশ কয়েকজন নেতার দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে এবং তারা নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করছেন দলের হাইকমান্ডের কাছে।
আগামী ডিসেম্বরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দলটির শীর্ষ পদ, সভাপতির দায়িত্বে ৪১ বছর ধরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়।
দলের শীর্ষ পদে অন্য কারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নজির নেই। এখন পর্যন্ত সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
তাই এটা নিশ্চিত যে শেখ হাসিনাই এবারো সভাপতি পদে থাকছেন। ফলে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই মূল আলোচনা।
দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। টানা দুই মেয়াদে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আবার এই পদে দায়িত্ব এই পদে থাকতে আগ্রহী, এমন ধারণাই করছেন দলের ভেতরের অনেক সিনিয়র নেতা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নাম আলোচনায় ছিল। এবারও ড. রাজ্জাকের নাম আলোচনায় এসেছে এবং তিনিও আগ্রহী বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমানও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী হয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড: হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নাম ও উঠে এসেছে ।
দলটির গঠনতন্ত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হওয়ার কোনো বিধান নেই। তাই কেউ নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেননি।
তবে আগ্রহীরা দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ দলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের অনেকে নিজে থেকেই উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে দলের কোন্দল মেটাতে ভূমিকা রাখছেন।
মোটকথা আগ্রহীদের নিজের সাংগঠনিক তৎপরতা এবং দক্ষতা তাদের দলের নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেখানোর চেষ্টা করছেন অধিকাংশ সিনিয়র নেতা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক কে-এ ব্যাপারে অতীতে তাদের দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনের কিছু দিন আগে ইঙ্গিত দিতে দেখা গেছে। তবুও আগ্রহীরা অনেক আগে থেকেই তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে আসল ব্যপার হলো এখনো দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত আসেনি।
এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যারা দায়িত্ব পাবেন, এই নেতৃত্বকে নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন, সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এবার বিরোধীদল বিএনপি মরিয়া হয়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে এবং নির্বাচনে অংশ নেবে।
সেকারণে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি ঘটনাবহুল হতে পারে। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আসবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে।