নরসিংদী প্রতিনিধি :
নরসিংদীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দৌড়বিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘রায়পুরা ম্যারাথন’। ম্যারাথনে তিন ক্যাটাগরিতে দেশ-বিদেশের ৭০০ জন দৌড়বিদ অংশ নেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে।
রায়পুরা রানার্স কমিউনিটির উদ্যোগে এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তিন ক্যাটাগরিতে এটাই প্রথম ফুল ম্যারাথন। এতে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, রাশিয়া, চীন, জাপান ও চেক রিপাবলিকের ১৫ জন নাগরিকসহ ৭০০ দৌড়বিদ অংশ নেন।
এবার তিনটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠেয় ফুল ম্যারাথনে ৪২ কিলোমিটারে ১০০ জন, হাফ ম্যারাথনে ২১ কিলোমিটারে ৩০০ জন ও ১০ কিলোমিটার ম্যারাথনে ৩০০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। তবে অনুষ্ঠিত এই ম্যারাথনে সর্বমোট ১০০০ দৌড়বিদ রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
শুক্রবার শীতের ভোরে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ মাঠে একত্রিত হন দৌড়বিদরা। আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন তারা। বিভিন্ন বয়সি ও পেশার দৌড়বিদের উপস্থিতিতে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দৌড়বিদের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা ভোর সাড়ে ৪টায় রায়পুরা উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে নরসিংদী-রায়পুরা আঞ্চলিক সড়কের হাসনাবাদ ১০ নম্বর ব্রিজ এলাকা হয়ে আবার উপজেলা পরিষদে এসে দৌড় শেষ হয়। প্রতিযোগীদের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার, গ্রামপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যসহ ২০০ স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত ছিলেন। চিকিৎসাসেবার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিকেল টিম কাজ করেছে।
এ ম্যারাথনকে ঘিরে নরসিংদী-রায়পুরা আঞ্চলিক সড়কসহ শ্রীরামপুর রেলগেইট-টু-রায়পুরা বাজার সড়কে মধ্য রাত থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে রায়পুরার রানার্স কমিউনিটির আয়োজনে দুইবার হাফ ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়।
ফুল ম্যারাথনের চ্যাম্পিয়ন পাবনার ইমরান হাসান বলেন, এর আগে ২০২৩ সালে রায়পুরা হাফ ম্যারাথনে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, ২০২৪ সালেও ফুল ম্যারাথনে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
স্বেচ্ছাসেবী ভলান্টিয়ারদের নিয়ে সুন্দর পরিবেশে এমন একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় রায়পুরা রানার্স কমিউনিটি উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতায় তরুণরা আনন্দিত ও উৎসাহিত হবে। মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ থেকে তরুণ সমাজ দূরে থাকতে পারবে বলেও তিনি মনে করেন।
‘রায়পুরা ম্যারাথন’ আয়োজক কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেন, যুব সমাজকে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ ও ফোন আসক্তি থেকে ফিরাতে আমাদের এই উদ্যোগ। সামাজিক ব্যবস্থা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে পরবর্তীতে আরও বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যারাথনের আয়োজন করা হবে। ম্যারাথনে দৌড়বিদের অংশগ্রহণ ও আয়োজনের সার্বিক পরিস্থিতিতে সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পরে বিজয়ীদের মেডেল, সনদ ও গাছেরচারা দেওয়া হয়। এছাড়া তিন ক্যাটাগরিতে মোট ৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী।
এছাড়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুর এলাহী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শামসুল আরেফীন, নরসিংদী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের আহবায়ক মাহবুবুর রহমান মনির, রায়পুরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, সুধী সমাজ ও আয়োজকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্ম লাইনচ্যুত হয়ে যাচ্ছে, তাদের সঠিক ট্র্যাকে ফেরাতে এই আয়োজন কাজে আসবে। শিশুরা বর্তমানে খেলা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। তারা মোবাইলসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বেশি সময় পার করছে। তারা মাঠে এসে খেলাধুলা করলে স্বাস্থ্য, মন ও মনোযোগ সব বৃদ্ধি পাবে। আমরা সুস্বাস্থ্য তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই। ভবিষ্যতে এ আয়োজনের কলেবর বৃদ্ধি পাবে। অন্য উপজেলায়ও এর আয়োজন করা হবে।