।। এম আর আয়াজ রবি।।
চট্টগ্রাম থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজার পর্যন্ত একটি পরিকল্পিত রেল লাইন হোক এটা সময়ের দাবির সাথে, সবার দাবিও ছিল। এটার জন্য আমরা অনেক লেখালেখি করেছি, শ্রম দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি। সেই সংগ্রামের বাস্তব ফসল আমাদের কাছে দৃশ্যমান। আগামী সেপ্টেম্বর অক্টোবরে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন উদ্বোধন হবার অপেক্ষায়! কিন্তু অপরিকল্পিত রেল লাইনের কারনে দক্ষিন চট্টগ্রামের উপজেলা সমুহ মারাত্মকভাবে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় নিমজ্জিত! আজকে শত শত ঘরবাড়ি, গবাদি পশু-পাখি, শস্যমাঠ, তরিতরকারির খেতসহ হাজার হাজার মানুষ বন্যায় পানির নিচে। তারা আজ খাদ্য, পানীয় জল ও নিরাপত্তা সংকটে। তাদের জীবদ্দশায় এরুপ পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়নি। আজ কেন এরুপ অবস্থা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আমরা কোনভাবেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিরোধী নয়। আমরা পরিবেশ, প্রতিবেশ বিধ্বংসী কার্যকলাপের বিরোধী- আমরা ইকোসিস্টেম, বাস্তুসংস্থান ও প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংস করে অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিপক্ষে।
অনেক ময়-মুরব্বিদের বলতে শুনেছি, অন্তত গত ৫০/৬০ বছরেও এমন বন্যা তারা চোখে দেখেননি। সাতকানিয়া-চন্দনাইশ-চকরিয়া-ঈদগাঁ ও রামুর মানুষ আজ পানিবন্দী। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন তারা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অপরিকল্পিত রেললাইনের উভয় পাশে পানি আটকে রীতিমতো অভিশাপ হয়ে ওঠেছে সেই সাধের রেল লাইন। তার সাথে সমান তালে রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল, ভরাট, অপরিকল্পিত নগরায়ন। নদী, খাল ও প্যারাবন দখলতো এখন রীতিমতো উৎসবের আবহ সৃষ্টি করেছে!
ভবিষ্যতে অভিশাপ হয়ে উঠবে মাতামুহুরি, বাঁকখালী নদী। বাঁকখালী নদীর উপর ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দিত বিমানবন্দর! যে বিমান বন্দরে বিমান গুলো সমুদ্রের পানি ছুঁয়ে উড্ডয়ন-অবতরণ করবে!
অন্যদিকে মহেশখালীতে চলছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ডীপ সী পোর্ট, কক্সবাজার সদরে পাহাড় কেটে আবাসস্থল নির্মান, বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর স্থাপনা তৈরি তো আছেই। এদিকে উখিয়া টেকনাফের বনভুমি, পাহাড়, জীব বৈচিত্র্য, প্রান প্রকৃতি ধ্বংসের কথা তো বলাই বাহুল্য! ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা বিস্ফোরণ, সাথে আছে মাথার উপর ৭ লক্ষ মেট্টিক টনের কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস, ভু-উপরিস্থ পানির স্তর ইতিমধ্যে গিলে খেয়ে এখন ভূ-ভ্যন্তরস্থ পানিও তুলে সাবাড়ের দিকে! যেকোন মুহুর্তে উখিয়া টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অংশ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হতে ঢের বাকী নেই!!
আবার এসব দেখিয়ে দিলে হয়ে যায় উন্নয়ন বিরোধী!!
(লেখক: সাংবাদিক, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী)