বিজয়ের মাসে আমি জয়ের ধ্বনি শুনি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯

যেখানে দেখিবে যা পড়িয়া দেখিবে তা, শিখিলেও শিখিতে পারো নতুন কিছু। একটু কবিতার মতো ছন্দ করে লিখলাম কথাগুলো। তবে প্রকৃত ঘটনা যা আমাকে মুগ্ধ করেছে তার বর্ণনা নিচের অংশটুকু।

“মাওয়ায় ফেরিতে মুড়ি বিক্রেতা মজিবর ভাইয়ের সাথে কথোপকথন। মুড়িতে বাড়তি পেঁয়াজ দিতে দিতে বললেন, খান- পেঁয়াজের দাম কইম্যা গেছে- ৮০ টাকা কেজিতে কিনছি। সামনের সপ্তাহে ৫০-এ নামব। পদ্মা ব্রিজ হয়ে গেলে ফেরি থাকবে না- কী করবেন? আত্মবিশ্বাস নিয়ে হেসে বললেন- অনেক কাজ পারি- মাটি কাটা, রিকশা চালানো ইত্যাদি। ২৫ বছর আগে শিবচরে পদ্মায় বাড়ি চইল্যা গেছে। বাইচ্যা আছি, কাজ কইরা খাই- দেড় বছর পরের চিন্তা তখন করমু। দোয়া কইরেন।”

চমৎকার কথাগুলো লিখেছে আমার এক ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বন্ধু, ব্যাংক এক্সিকিউটিভ- আহমেদ শাহিন। পদ্মা নদীর মাওয়ার ফেরিতে মুড়ি খাওয়া, সাথে টেলিফোন ক্যামেরায় তোলা একটি ছবি এবং কিছু কথা। শাহিনের উপরের কথাগুলো পড়তেই মনে ধরল, এ তো শুধু কিছু কথা নয়, এর মধ্যে রয়েছে একজন আত্মবিশ্বাসী মেহনতি মানুষের হৃদয়ের কিছু বাণী।

মজিবর ভাই শুধু আশার বাণী দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। সে তাঁর কর্মের নিশ্চয়তার ওপর তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছে। “২৫ বছর আগে শিবচরে পদ্মায় বাড়ি চইল্যা গেছে। বাইচ্যা আছি, কাজ কইরা খাই- দেড় বছর পরের চিন্তা তখন করমু।”

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন, বন্ধুর ফেসবুকের স্ট্যাটাসে মজিবর ভাইয়ের কথাগুলো হৃদয়ে বেশ লেগেছে। অন্যের কথা নয় এবার আমি আমার নিজের কথা বলি। হাজারও সুযোগ সুবিধা রয়েছে জীবনে, বসবাস সুইডেনে, হঠাৎ যদি চাকরি না থাকে বা অসুস্থ হই কোনো সমস্যা নেই। সব কিছুর সুন্দর একটি ব্যবস্থা রয়েছে সত্ত্বেও সারাক্ষণ চিন্তিত থাকি কী হবে, কী করতে হবে, কি না করতে হবে ইত্যাদি।

সুইডেনে যেমন ইন্সুরেন্স রয়েছে বাড়ি, গাড়ি, অবসর সময়, জার্নি, চিকিৎসা, কর্ম বলতে গেলে পুরো জীবনের সব কিছুর ওপরে। তার পরও চিন্তিত এক ঘণ্টা পরে কী হবে, আগামীকাল কী হবে ইত্যাদি। অথচ মজিবর ভাই কী সুন্দর এবং সহজ করে বলে দিল তাঁর জীবনের পরবর্তী সময়গুলো কীভাবে সে পার করবে। তাঁর আত্মবিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করেছে যা বন্ধু শাহিনের স্ট্যাটাসে ফুলের মতো ফুটে উঠেছে।

মজিবর ভাই বহু কর্মে পারদর্শী। যেমন বলেছে “অনেক কাজ পারি- মাটি কাটা, রিকশা চালানো ইত্যাদি।” এই যে পারা নানা ধরনের কাজ করতে, এটাই তার জীবনের আত্মবিশ্বাস।

বর্তমানে নতুন প্রজন্ম হতাশ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে হতাশা, প্রশিক্ষণে হতাশা, পরিবারে হতাশা, বলতে গেলে সারা দেশ হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছে।

ঠিক তেমন একটি সময় মজিবর ভাই তাঁর আশার বাণী শুনিয়ে গেল। সাথে আমার হৃদয়ে বিজয়ের মাসে সে বাড়িয়ে গেল নতুন করে জীবনে চলার আত্মবিশ্বাস। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

অধিকার নিউজ