সিভিল সার্জনের সহকারী বহুরূপী কাজী করিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

এন আলম আজাদ কক্সবাজার 

কাজী করিম উল্লাহ। কক্সবাজার সিভিল সার্জনের সহকারী।চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা কাজী করিম দীর্ঘ ২ যুগেরও অধিককাল বদলী ঠেকিয়ে বহাল তবিয়তে। একই কর্মস্হলে দীর্ঘদিন চাকরীর নেপথ্যে রয়েছে, ক্ষমতার
অপব্যবহার,সরকারি অর্থ লোপাট ও বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড। ম্যালেরিয়া বিভাগে ১৯৮৫ সালে চাকরীতে অভিষেক ঘটলেও নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির আগেই কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে বদলী হয়ে আসেন ৩য় শ্রেণীর এই কর্মচারী।সেই থেকে আর তাকে বদলীর কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।

দীর্ঘ এ সময়ে কয়েকবার বদলীর আদেশ আসলেও প্রতিবারই বিচক্ষণতায় তা ঠেকানোর দুঃসাহস দেখিয়েছেন তিনি।এভাবেই অবৈধ টাকা অর্জনে অনেক দুর এগিয়ে গেছেন দূর্নীতির এই স্বপ্নবাজ।শুধুই তাই নয়, সরকারি বিধি ডিঙিয়ে অফিস সহায়ক হয়েও নিজেকে তিনি জাহির করতেন স্বাস্থ্য সহকারী হিসাবে।
স্বাস্হ্য বিভাগের প্রশাসনিক শাখায় এ পদের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও অফিসার মর্যাদা পেতেই এ অবৈধ কৌশল ব্যবহার করতেন তিনি।অভিযোগ রয়েছে অফিস সহায়ক পদে দূর্নীতি ছাড়া অন্য কোন ভূমিকা না রাখলেও নানা তদবিরে সহকারী পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন এই দোর্দন্ড প্রতাপশালী
প্রায় দেড় যুগ পূর্বে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকে ম্যানেজ করে অফিস সহকারী পদ ভাগিয়েছেন করিম – এমনটি জনশ্রুতি অফিস পাড়ায়।

দায়িত্ব ভাগিয়ে বেসরকারি প্যাথলজী ও হাসপাতাল এবং হোটেল মোটেল জোনের আবাসিক ও রেস্তোরা গুলো থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের ভয় দেখিয়ে গণহারে চাঁদাবাজি করছেন এ করিম। এ কাজে তার নেপথ্যের মোড়ল একই অফিসের প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলাম। নানা অনিয়ম দূর্নীতির মহানায়ক হিসাবে যার নাম স্বাস্হ্য বিভাগের অন্ধরে অন্ধরে প্রোথিত।
তথ্যানুসন্ধানে রফিক – করিমের নেতৃত্বে পুরো জেলাব্যাপী এ কাজের শক্ত সিন্ডিকেটও রয়েছে।জেলার ৮ উপজেলার নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকদের কয়েকজন অসাধুও এ সিন্ডিকেটের সভ্য।তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় সদর সহ অন্য উপজেলাগুলোর হোটেল রেস্তোরাঁ সহ পণ্য সামগ্রীর গুদামের মালিকদের কাছথেকে আইনের ভয় দেখিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন দীর্ঘদিন।চাঁদা বাজিতে ব্যর্থ হলে বড় ধরনের অভিযানের হুমকিও দেন দূর্নীতিবাজ এ সিন্ডিকেট।করিমের যোগসাজসে দূর্নীতির এজেন্ট খ্যাত কয়েকজন নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক নিজেদের ভোক্তাধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকও পরিচয় দেন।

এমনকি তারা চাহিবামাত্র নগদ অর্থ পেলেই ভোক্তাধিকারের অভিযান থেকে নিরাপদ থাকবেন এমন প্রতিশ্রুতিও দেন কালেভদ্রে। হাসপাতাল, ক্লিনিক প্যাথলজী ও রেস্তোরার ফিটনেস সনদ দেখভালের দায়িত্ব স্যানিটারী পরিদর্শকের হলেও সিভিল সার্জন অফিসের করিম কখনো কখনো গাড়ি হাঁকিয়ে রেস্তোরা গুলোতে উপস্থিত হন।জেলার সদর সহ অন্য ৮ উপজেলায় চাঁদাবাজীর এমন কান্ডে সরকারি প্রঙ্গাপনেরও অবঙ্গা করছেন চক্রটি।৮৭ সালের পর থেকে ফিটনেস সনদের ফি, সরকারিভাবে বৃদ্ধি করা না হলেও সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এর কর্মচারীদের কাছ থেকে ৫০ ও ১০০ টাকার স্হলে তিনগুণ বেশি ফি,দিতে বাধ্য করছেন চক্রটি।শুধু তাই নয়, আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কর্মচারী কম দেখিয়ে নামেমাত্র ফি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বহু কর্মচারীদের কাছ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেটের অনুকূলে নেয়া বিপুল টাকা বেমালুম হজম করছে।কাজী করিমের লালিত এসব অসাধুরা নির্দিষ্ট চাহিদার টাকা না পেলে অভিযানের হুমকি ও
অস্বাস্থ্যকর দেখিয়ে জোর পূর্বক অবৈধ টাকা দিতে বাধ্য করেন এবং মামলার ভয় দেখান।,রামু চৌমুহনীর এক আলোচিত প্যাথলজীর অরুন নামের এক কর্মচারী বলেন,সিভিল সার্জন অফিসের সহকারী পরিচয়ে প্রতিমাসে একজন ফোন করে টাকা চান।মালিকের অনুপস্থিতিতে তিনি ফোন রিসিভ করেছেন মাত্র এমনটি বললেও ঐ প্রান্ত থেকে হুমকি আসে লাইসেন্সের মেয়াদ গেছে।জানতে পারি ঐ পদবী ব্যবহারকারী আর কেউ নন, তিনি সিভিল সার্জন অফিসের কাজী করিম।তিনি ইতিমধ্যেই অবৈধ অর্থ অর্জনে কয়েকজনের যোগসাজসে স্যানিটেশন আইনের ভয় দেখিয়ে কয়েকটি ঘটনারও অবতারণা করেছেন। জেলা শহরের হাসপাতাল সড়কে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঙ্জাম ও যন্ত্রাংশের অপ্রতুলতা এবং মানহীনতার অভিযোগ এনে কক্স ন্যাশনাল হাসপাতালকে প্রথম দিকে অনুমোদন না দিয়ে লঙ্কা কান্ড ঘটিয়ে বসলেও পরক্ষণে ঘটনাস্থলে সাবেক সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।তার মধ্যস্হতায় বিষটি তৎক্ষনাত সুরাহা হলেও রফিক করিম সিন্ডিকেট অনুমোদনের বিনিময়ে ২থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়েছেন – এমন সংবাদ প্রকাশিত হয় কয়েকটি স্হানীয় ও জাতীয় দৈনিকে।তাছাড়া এসব দৈনিক গুলোতে এ চক্রের চাঁদাবাজির নানা খবরও প্রকাশ হয় একাধিকবার। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব অনিয়ম তদন্ত না করায় এ সিন্ডিকেট চাঁদাবাজীতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।এর জলন্ত দৃষ্টান্ত উন্মোচিত হয় চকরিয়া উপজেলার বানিয়াছড়া বাজারে চাঁদাবাজীকালে।ঐদিন তাদের অনুগতরা ম্যাজিষ্টেট পরিচয়ে অভিযানের হুমকি দিয়ে ধরা খায়। ধৃতদের দু’জনই করিম- রফিক সিন্ডিকেটের বলে গুঞ্জন উঠে দাপ্তরিক পাড়ায়।এদের একজন আশরাফ আলী ও অন্যজন হাসান মুরাদ ছিদ্দিকী।চকরিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের এ দু,কর্মচারীর এমন চাঁদাবাজি তৎপরতায় সন্দিহান রেস্তোরার মালিকরা তাদের ধরে চকরিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ানের কাছে সোপর্দ করেন।তাদের কাছথেকে চাঁদাবাজীর প্রায় ২৪ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট উদ্ধার হয় সেইদিন। স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও সহকারী স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পরিচয়ী এ দু’জন ঘটনার দিন কেনইবা বিচারিক হাকিম পরিচয় দিয়েছিল তা নিয়েও রয়েছে নানা রহস্য। এ কান্ডের নেপথ্যে কাজী করিম ও অন্য কয়েকজনের ভূমিকা রয়েছে বলে রেস্তোরার মালিকদের অভিযোগ।সুচুতুর করিম নিজেকে আড়ালে রেখে স্বাস্থ্য বিভাগের চাঁদাবাজি বানিজ্যে এসব অসাধুদের ব্যবহার করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছেন – খোদ সহকর্মীদের মধ্যেও এমন গুঞ্জন উঠেছে।ম্যাজিষ্টেট পরিচয়ে চাঁদাবাজিকালে ধৃত দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিতে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব ভার দেওয়া হলেও এ রিপোর্ট লেখাকালীন ১৯৮০ সালের সরকারি চাকরী বিধির (গ) ধারা ভঙ্গকারী এ দুজনের বিরুদ্ধে আদৌও কী ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।

সিন্ডিকেট দূর্নীতির কারিগর কাজী করিম উল্লাহ দীর্ঘ ৩০ বছরের চাকরী জীবনে অবৈধ পথে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তার সহকর্মী থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের ভাষ্য।এ পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ায় প্রায় ১০ শতক জমির মালিক হিসাবে তার নাম আলোচনায় আসলেও অনেকের বিশ্বাস বিশাল অর্থ ভান্ডার সহ কয়েকটি ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করেছেন এই করিম।এছাড়া দু’একটি বেসরকারি হাসপাতালেও শেয়ার রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মচারীর।অন্য একটি সুত্রমতে কাজী করিম কর্মস্থলের চাইতে সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামের রাউজানকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।কক্সবাজারে ভূ-সম্পত্তি ও অর্থবিত্ত দৃশ্যমান হলে আইনের মুখাপেক্ষী হতে হবে ভেবে তিনি চট্টগ্রাম শহর ও নিজ বাড়ি রাউজানে এসব সম্পদ গড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে ঙ্গাত আয়বর্হিভূত বিপুল সম্পদ অর্জন করলেও তিনি সরকারের কাছে দেয়া সম্পদের তথ্য বিবরণীতে এসব এড়িয়ে গেছেন।
দূর্নীতির সোলএজেন্ট খ্যাত কাজী করিম সরকারি স্বার্থ জলাঞ্জলি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ সুযোগে কাজী করিম তার চাঁদাবাজি কর্মকাণ্ড আরও বিস্তৃত করার নতূন মিশনে এগুচ্ছে বলে তার সহকর্মী ও ভুক্তভোগীরা জানান।
অতিদ্রুত কাজী করিমের গ্রামের বাড়ি রাউজানে এবং কর্মস্থল কক্সবাজারে গোপন তদন্ত করলে স্বাস্থ্য বিভাগের এ বহুরুপী দূর্নীতিবাজ কীভাবে টাকার কুমির বনে গেল সেই জিজ্ঞাসার ইতি ঘটবে বলে সচেতন মহলের বিশ্বাস।

এসব ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিসের সহকারী কাজী করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি কোনদিন হোটেল রেস্তোরাঁয় তদারকিতে যাইনি।তবে সিভিল সার্জন স্যার ও অন্যান্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে অভিযানে সঙ্গী হয়েছি। ফিটনেস সার্টিফিকেটে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না।এ টাকা চালান রশিদে জমা দেয়ারও তেমন বাধ্যবাধকতা নেই।নির্ধারিত ১শ টাকার বাইরে অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোন সুযোগও নেই।তবে কেউ কর্মচারীদের ৫০ টাকা বেশি দিলে আমার বলার কিছুই নেই। স্বাস্হ্য বিভাগে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বদলীর গৎবাধাঁ নিয়ম নেই তাই ঠেকানোর অভিযোগও অবান্তর।তবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ চাইলে বদলী করতে পারেন, বলেন এই কর্মচারী।ফিটনেস সার্টিফিকেট সিভিল সার্জন অফিস থেকে অনুমোদিত করা হলেও সরকারি বিধির বাইরে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

তিনি এ কথা বললেও সদর উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক জহর লাল পালের কথা ভিন্ন।তিনি জানান,জেলা অফিসের নির্দেশই আমরা অভিযান করি।সিভিল সার্জন অফিসের কাজী করিমই এ বিভাগটি দেখভাল করেন।আমরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বাইরে কোন অভিযান ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে সুপারিশ করি না।তাই নিরাপদ খাদ্য বিভাগটি ফিটনেস সার্টিফিকেটও প্রদান করেন না। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই।সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্ববানদের উপরই সব দোষ চাপান এই নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক।
কাজী করিমের সরকারি বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মহিউদ্দিন বলেন,ফিটনেস সার্টিফিকেটে অত্যধিক ফি, নেয়ার অভিযোগটি তদন্ত করে দেখব।আসলে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের এসব ভৌতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি ঙ্গাত নয়।শীগ্রই এসব জেনে তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্হার আশ্বাস দেন স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই কর্মকর্তা।