মো: খায়রুল ইসলামঃ
নরসিংদীর মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নির্বিচারে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের আঁধারে স্থানীয় মাটি-বালু ব্যবসায়ী সংঘবদ্ধ চক্র কৃষকদের জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
চিহ্নিত বালু খেকো সৈয়দেরগাঁও গ্রামের মারুফ মোল্লা, রসুলপুর গ্রামের শরীফ, রিপন বেপারী, কাজল, রিজভী, গালিব, সাগর মিয়াসহ ৮-১০ জন ব্যবসায়ী রাতের আঁধারে ড্রাম ট্রাকে করে এসব জমির মাটি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ করেন আশপাশের বাসিন্দারা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাতিরদিয়া কলা বাজার সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষা ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে কয়েকদিন ধরে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কাটা শুরু করলে স্থানীয়রা বাঁধা দেন। পরে বাঁধার মুখে মাটি ব্যবসায়ীরা কাজ বন্ধ রাখেন।
তারা জানান, এসব জমি থেকে মাটি কেটে নিলে সরকারী খাদ্য গোদাম, ঈদগাহ মাঠসহ বহু বাড়ি-ঘর হুমকিতে পড়বে।
ক্ষতিগ্রস্ত আছমা বেগম, রেজাউল হক আলফু, শফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ইমান হোসেন, কাশেম মেম্বার, সফর রাজসহ স্থানীয়রা জানান, চিহ্নিত বালু খেকো ও ভূমিদস্যুরা অবাধে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন। তারা রাতের আঁধারে ৩০-৪০টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব মাটি বিক্রি করছে। এতে অনেক জমি বড় গর্তসহ পুকুরে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাটি বহনে বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত করছে এসব ড্রাম ট্রাক। ভোররাত পর্যন্ত বিকট শব্দে এসব ড্রাম ট্রাক চলাচলে নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের।
মো. কিরন মিয়া বলেন, রাতের আঁধারে এক্সাভেটর (ভ্যাকু) দিয়ে আমাদের ফসলি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অসাধু ব্যবসাীরা। তাদেরকে বাঁধা দিলে আমাদের গাড়ির নিচে ফেলে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। উপায় না পেয়ে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানাই। পরদিন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস না দিয়ে উল্টো মাটি ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলেন। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ জন আবার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে মাটি ব্যবসায়ী শরীফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক আওয়ামী লীগ নেতার উপর দায় চাপিয়ে সংযোগ কেটে দেন।
মারুফ মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে তিনিও সংযোগ কেটে দেন।
মনোহরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফ দস্তগীর বলেন, ‘একটি মাদরাসায় মাটি দেওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি অনুরোধ করেছিলেন। পরে তাদেরকে নদের পাড় থেকে মাটি নেওয়ার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে মাটি অন্যত্র বিক্রি করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিবা খান বলেন, ‘কোনও অবস্থায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না। মাটি ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরও যারা অবৈধভাবে মাটি কেটে পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মনোহরদীতে রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি বিক্রির অভিযোগ
Date: