বৃহস্পতিবার, ০৪ Jul ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

নরসিংদীতে এক বছরে ৭১ টি হত্যাকাণ্ড 

নরসিংদীতে এক বছরে ৭১ টি হত্যাকাণ্ড 

মো: খায়রুল ইসলামঃ
নরসিংদীতে গত এক বছরে ৭১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার তালিকায় রয়েছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রদলের দুই নেতা ও ব্যবসায়ী। পাশাপাশি ডাকাতি ৮, দস্যুতা ১৪, নারী ও শিশু নির্যাতন ৯৬ ও চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে ৭৭টি। তবে কাগজে কলমে এই রেকর্ড থাকলেও প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত জেলায় ৬৭টি খুন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মে মাসেই জেলায় ৭টি খুন হয়েছে। আর চলতি জুন মাসে খুন হয়েছে ৪টি।

এর মধ্যে শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান, রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিককে গুলি করে হত্যা, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল নামে দুই ছাত্রনেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, মনোহরদীতে জাহাঙ্গীর নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা এবং রায়পুরায় পোলট্রি ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়াকে হত্যার ঘটনায় আলোড়ন তৈরি হয়।

নরসিংদীতে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন কাজী আশরাফুল আজীম। জেলায় গত আড়াই বছরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানাগুলোতে পুলিশকে মামলা নিতে দেখা যায়নি। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, গত আড়াই বছরে অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে অসংখ্য অভিযোগ দিলেও আমলে নেয়নি পুলিশ। অপরাধ করে পার পাওয়ার ফলে সম্প্রতি অপরাধের মাত্র আরও বেড়ে গেছে। প্রায় আড়াই বছর পর গত ১৩ জুন পুলিশ সুপারের বদলির আদেশ হয়। তারপরও স্বপদে বহাল আছেন তিনি। এ দীর্ঘ সময়ে দুই শতাধিক খুন হওয়ার পরও পুলিশ সুপারের দাবি তার আমলে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন পুরো জেলাকে।

আর যেসব কারণে অপরাধের মাত্রা বেড়েছে বলে অভিজ্ঞজনরা মনে করছেন, তার মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতার অভাব, জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় বসবাস না করা, রাজনৈতিক দলগুলোতে নিজেদের মধ্যে চরম অস্থিরতা ও দলীয় কোন্দল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতার অভাব। রাজনৈতিক দলের কিছু চিহ্নিত নেতা এবং প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অপরাধীদের অনেকটা প্রকাশ্যেই আশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া মাদক সিন্ডিকেট, বালুমহাল ও জমি জবরদখলের ভাগাভাগি নিয়েও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

জেলার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সর্বস্তরের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নরসিংদীকে নিরাপত্তাহীন জেলা বললেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব। তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ জেলা একটি নিরাপত্তাহীন জেলা। আমি ওপরমহলেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের সরকারের এত উন্নয়নের পরও আমরা কেন নিরাপত্তাহীন ও বিচারহীনভাবে থাকব?’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর গত বছরের চেয়ে হত্যাকাণ্ড কম সংঘটিত হলেও সংখ্যাটা উদ্বেগজনক। তারপরও এ পরিস্থিতিতে তুষ্ট থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যথায় জেলাবাসীকে আরও কঠিন মূল্য দিতে হবে।’

কাগজে কলমে আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে পুলিশ অপরাধের যে সংখ্যা দেখায় তা মোটেও সত্য নয় বলে মনে করেন নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ অপরাধ সংঘটিত হয় তা আসলে রেকর্ড হয় না। সম্প্রতি এক মাসে জেলায় ছয়টি লাশ পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলার এসব অবনতির কথা জানতে চাইলে সভায় পুলিশ সুপার মনঃক্ষুণ হয়ে কথা বলেন। এ জেলায় আগে টেঁটাযুদ্ধ হতো, এখন দিনদুপুরে গুলি করে খুন করা হচ্ছে। সর্বসাধারণের পাশাপাশি আমরাও কেউ নিরাপদ নই।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘পুলিশের উদাসীনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা না নেওয়ায় নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। বর্তমান পুলিশ সুপার এ জেলায় যোগদান করার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলেও মিথ্যা মামলা ও বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে বিরোধী দল দমনে তিনি সফল হয়েছেন। এ আর কম কি’

এ ব্যাপারে জানতে নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি) কথা বলতে হলে স্টাডি করে বলতে হবে। খাতাপত্র দেখতে হবে। অফিসে আসেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিস্তারিত কথা বলব।’

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© কপিরাইট ২০১০ - ২০২৪ সীমান্ত বাংলা >> এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ

Design & Developed by Ecare Solutions