কক্সবাজারে আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার রায় ‘প্রদীপ ও লিয়াকতের’ ফাঁসি : ৬ জনের যাবজ্জীবন

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২

কফিল উদ্দিন আনু,কক্সবাজার :

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে দেড় বছর আগে সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার যে ঘটনা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিল, আলোচিত সেই সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের তিন সোর্সকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।


কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সোমবার বিকালে জনাকীর্ণ আদালতে এই আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে। আর তাতে আট আসামির সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ধূসর জ্যাকেট পরে কাঠগড়ায় থাকা প্রদীপ এবং তার পাশে থাকা লিয়াকতের মুখে এ সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

তবে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ছয় আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং এএসআই সাগর দেব এবং পুলিশের তিন সোর্স নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজের মধ্যে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কয়েকজন উচ্চস্বরে প্রতিবাদ জানান।
সিনহার বোন, এ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস তার স্বামীকে নিয়ে রায় শুনতে এসেছিলেন কক্সবাজারের আদালতে। প্রধান দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজার রায় আসায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

শারমিন বলেন, “প্রথম থেকে আমরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছি। সেটা আজকে রায়ে দেখেছি, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
“তবে যে সাতজন একদম খালাস পেয়েছেন, তাদের কিছুটা সাজা হলেও দেওয়া যেত। কারণ ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। সেটা হলে প্রত্যাশা বেশি পূরণ হত।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিনহার বোন বলেন, “সেদিনই আমরা সন্তুষ্ট হব, যেদিন সাজা কার্যকর হবে।”
সাতজনের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
অন্যদিকে খালাস পাওয়া এপিবিএন এর এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও কনস্টেবল মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এই রায়ে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। প্রমাণ হয়েছে যে,এই দেশে আইনের শাসন আছে, ন্যায়বিচার আছে। এই ন্যায়বিচারের নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আরও একধাপ এগিয়ে গেল।”
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর দিকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে।
তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর একদল তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে এসেছিলেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর বেরিয়ে আসে, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কীভাবে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন পোশাকী বাহিনীর কর্মকর্তা প্রদীপ।

তথ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে গিয়ে সিনহা ও তার সঙ্গীরা টেকনাফের নিরীহ মানুষের উপর ওসি প্রদীপের ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী’ জেনে গিয়েছিলেন। এরপর বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করা হয়। প্রদীপের নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত।
এদিকে আলোচিত এ রায়কে কেন্দ্র করে দিনভর কক্সবজার আদালত এলাকায় উৎসুক মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখের পড়ার মতো।

সীমান্তবাংলা/রম/৩১ জানুয়ারি ২০২২