উখিয়া ভূমি অফিস অনিয়ম ও দুর্ণীতির আখড়াঃ সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের হাতে সেবাগ্রহীতারা জিম্মি!

Date:

 

[ কক্সবাজার প্রতিনিধি ]
সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে, সেবা প্রার্থীদের দোরগোড়ায় প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করার জন্যই ভুমি সেবাকে ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি বর্তমান সরকারের একটি খুবই ভালো উদ্দ্যোগ। সেই সাথে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে ভুমি অফিস তৈরি করে সেবা প্রদানের চেষ্টা করাও সেবা প্রার্থীর সেবা নিশ্চিত করার অন্যতম কারণ।

কিন্তু উখিয়া উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর ব্যাপারে সেবাগ্রহীতা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। ভুক্তভোগীদের মতে-এখানে চলছে অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি- যা রীতিমতো স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। অনিয়ম, দুর্ণীতি, সিন্ডিকেট ও দালালদের হাতে সেবাগ্রহীতারা এক প্রকার জিম্মি। অনৈতিক ও অবৈধভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার স্ফীড মানি বা আন্ডার টেবল এ লেনদেন হয় বলে ভুক্তভোগীদের বিস্তর অভিযোগ।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপে জানা যায়, কানুনগো/সার্ভেয়ার, তহসিলদার, অফিস সহকারী, জারিকারক, পিয়ন-দালাল সবাই অনৈতিক (ঘুষ) লেনদেনের সঙ্গে কমবেশি জড়িত রয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসের এই অবৈধ লেনদেনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কর্মচারী-দালাল সিন্ডিকেট চক্র। ভুমি অফিস বা তহসিল অফিসের সাথে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট না হয়ে অথবা মাষ্টার রোলের কর্মী না হয়েও অনেকে এখানে কাজ করে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীসুত্রে জানা যায়। মুলতঃ এসব তথাকথিত কর্মীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ক্লাইন্টস বা সেবাপ্রার্থী (খরিদ্দার) সংগ্রহ করে কর্তাব্যক্তিদের সাথে মোটা টাকার লেনদেনে ফাইল সচল রাখার বন্দোবস্ত করে থাকে। বিশেষ করে, ভুমি ও তহসিল অফিসকে দালাল চক্রের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয় তাদের মাধ্যমে। টাকা ছাড়া বা অবৈধ লেনদেন ছাড়া সেবাপ্রার্থীর কোন ফাইল মোভ করেনা, লাল ফিতায় আবদ্ধ থাকে জনম জনম। মুলতঃ শষ্যের ভিতর আষ্ঠেপৃষ্টে আবদ্ধ থাকা এসব ভুতদের কারণে সহকারি কমিশনার ( ভুমি) এর তীক্ষ্ণ নজরদারিতেও অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছেনা বলে জানান ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-ঘুষ দুর্ণীতির সাথে সংশ্লিষ্টরা আরও কৌশলী হয়ে দ্বিগুন উৎসাহে এসব অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েক দিন যাবত উখিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উখিয়া সদর ভুমি অফিসে সেবাগ্রহীতা/সেবাপ্রার্থী ও ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপকালে এবং সরেজমিনে ঘুরে উল্লেখিত অফিসগুলোতে ব্যাপক ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রচ্ছন্ন অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে। সেবা প্রার্থীদের মধ্যে যারাই অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, ঘুষ, দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট চক্র পরবর্তীতে তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন, ফাইল আটকে রেখেছেন, নানাভাবে ভোগান্তির ফাঁদে ফেলেছেন অথবা বিভিন্নভাবে-হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়।

ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় উপজেলা ভূমি অফিসে বন্দোবস্ত পাওয়া জমির ফাইল গায়েবের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, উখিয়া সদর কাজী পাড়া এলাকার জনৈক ভুক্তভোগীর ফাইল গায়েব করা হলে-সহকারি কমিশনার ( ভুমি) এর উপস্থিতিতে বিভিন্ন ডেস্ক তল্লাশী করে পাওয়া না গেলে ভুমি অফিসে মাষ্টার রোলে কাজ করা জনৈক সহকারীর ডেস্কে পাওয়া যায় এবং পরে এটি নিয়ে খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় বলে সুত্রে উঠে আসে। পরে সহকারি কমিশনার (ভুমি) সাহেবের হস্তক্ষেপে তা কোন প্রকার সামাল দেওয়া গেলেও এরুপ অহরহ ঘটনা ঘটেই চলছে ভুমি ও তহসিল অফিসে।

কিছু দুষ্কৃতকারী দালালচক্রের হাতে ভুমি অফিস জিম্মি হয়ে থাকলেও, তাদের প্রভাবে কেউ ‘টু শব্দের রা’ করার সাহস পাচ্ছে না। সাধারণ সেবা প্রার্থীরা মুখ খুলতে পারছেন না এসব অনিয়ম দুর্ণীতির বিরুদ্ধে। মারাত্মক নেতিবাচক অবস্থায় পর্যবসিত হয়ে যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। দালাল সিন্ডিকেটের চাহিদা মত টাকা (ঘুষ) দিতে না পারলে একজনের জমি অন্যজনের নামে খতিয়ান করে দেয়া হয় বলেও সরেজমিনে উঠে এসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, উখিয়া সিকদারবিল এলাকার এক ভুক্তভোগী তার বাবার নামীয় জমির খতিয়ান সৃজনের জন্য তিনি সম্প্রতি ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন। ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট দালাল চক্র তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা (ঘুষ) দাবী করেছেন। ঐ পরিমান টাকা দিতে না পারায় তার জমিটির খতিয়ান সৃজন হয়নি বলেও তিনি অত্র প্রতিবেদককে অবহিত করেন।

জনৈক ভুক্তভোগী চৌধুরী, ভুমি অফিসের কথিত সিন্ডিকেট চক্রের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অতিষ্ট হয়ে অত্র প্রতিবেদককে জানান-নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, দাখিলা প্রহণ, পর্চা, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, খাজনা দাখিল, খতিয়ান ইস্যু থেকে শুরু করে সবকিছুতেই চলে সরকারি নিয়মের অতিরিক্ত অনৈতিক লেনদেন । তিনি আরো জানান-অভিযোগ রয়েছে, উখিয়া ভুমি অফিসে দীর্ঘদিন যাবত কানুনগো পদটিতে লোকবল শুন্য। সার্ভেয়ারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কানুনগো-এর দায়িত্ব দেওয়ার কারনে ভুমি অফিসকে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রনে নেতৃত্বে রয়েছেন সার্ভেয়ার কাম কানুনগো মোঃ মোবারক হোসেন। তিনিই মুলতঃ তার সৃষ্ট সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীদের একপ্রকার জিম্মি করে প্রতিদিন জমির মালিকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা এই সিন্ডিকেট চক্রের গ্যাঁড়াকলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনৈতিক লেনদেন করছে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেছেন; দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নিয়ে অভিযোগ উঠলে অস্বীকার করতে সুবিধা হয়। অভিযোগ উঠলে বলে থাকেন ঐ নামের কোন লোক আমাদের অফিসে নেই। সুত্রে জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১ শত ৭০ টাকা। উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভুমি কার্যালয়গুলো তহসিলদাররা দলিলভেদে নেন ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ সরকারি নামজারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোন খরচ নেই। তবে চাহিদানুযায়ী অতিরিক্ত টাকা ( ঘুষ) না দিলে ভুমি কার্যালয় থেকে জমির নামজারি করতে পারেন না বলে অভিযোগ আছে অনেকেরই। ভুক্তভোগীরা আরো জানান, জমির খাজনা ( দাখিলা) দেওয়ার জন্য গেলেও ইউনিয়ন ভুমি অফিসে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা ( ঘুষ)।

উখিয়া সদরের ভুক্তভোগী জনৈক ভূইয়া জানান-উখিয়ায় নিষ্কণ্ঠক জায়গা কিনলেও বিনা হয়রানিতে ওই জায়গার মালিক হওয়া খুবই কষ্টকর। যদি কোন খুঁত থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তার সমাধানে পোহাতে হয় অন্তহীন দুর্ভোগ। যেহেতু এখানে প্রচলিত অনিয়মগুলোই নিয়ম, তাই দালাল চক্রের মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট নিয়মে গেলে তা অতি সহজেই হয়ে যায়।তাই ভোগান্তির ভয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনিয়মগুলো চোখবুজে সহ্য করছে সেবাগ্রহীতা ভুক্তভোগীরা। প্রতিটি নামজারিতে কম করে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা এমনকি অবস্থাবেধে তারচেয়ে অধিক পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তা লাখ টাকা পর্যন্ত পৌছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, উখিয়া রত্না পালং এলাকার একভুক্তভোগী জানান; খাজনা আদায়কালে অনৈতিক সুবিধা ( ঘুষ) নেয়ার জন্য নামজারির ফাইলে ইচ্ছা করে কাঠ পেন্সিল দিয়ে একটি কাগজের সঙ্গে ‘রেকর্ডে মিল নেই’ কিংবা ‘দখল নাই’ মর্মে লিখে দেয়া হয়। যাতে প্রকৃত ভূমির মালিককে বিভ্রান্ত করা যায়। এ অজুহাতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনৈতিক সুবিধা আদায় করে থাকেন। একই অবস্থা খাজনা দাখিলের ক্ষেত্রেও। খাজনা আদায়ের নামেও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

প্রতি পদে অনৈতিক ঘুষ দুর্ণীতির কারণে ভুমি অফিসে অনিয়মগুলোই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ সেবাগ্রহীতারা। জানা যায়, উখিয়া সদর ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে হলদিয়া পালং ও রত্না পালং ইউনিয়নও সংযুক্ত রয়েছে। আবার সোনার পাড়া এলাকায় অবস্থিত জালিয়া পালং ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহসিলদার পালংখালী ইউনিয়নেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সুত্রে জানা যায়, সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ বুধবার তিনি পালংখালী ইউনিয়নের অফিস করে থাকেন এবং সপ্তাহের বাকি দিন সোনার পাড়ায় অবস্থিত জালিয়া পালং ভুমি অফিসে অফিস করেন।
রত্না পালং এলাকার জনৈক এক প্রভাবশালী ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন-নাম প্রস্তাব (নামজারি), মিস মামলা, খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এখানে ঘুষ লেনদেন হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা সেবাগ্রহীতা/সেবাপ্রার্থীদের অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুষের অঙ্ক নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া প্রায় কোনো কাজই হচ্ছে না সেখানে, অভিযোগ ভুক্তভোগী ব্যক্তির। তিনি আরো বলেন, অফিস নিয়মে প্রত্যেক ধাপে ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। ঘুষ লেনদেনে সহযোগিতা করে দালালচক্র। উখিয়া সদর ভূমি অফিস ঘিরে তৎপর এই দালালচক্রে সদস্য সংখ্যা অন্তত ৮ থেকে ১০ জন। তাদের কাজ সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকার পরিমান নির্ধারণ করে চক্রের মুলহোতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।

রাজাপালং এলাকার জনৈক আলম অভিযোগের সুরে বলেন-সার্ভেয়ার ও কানুনগোর দায়িত্ব একই ব্যক্তি হবার কারণে, তার চাহিদা মতো সবকিছু না হলে ফাইল কোনভাবেই নড়ে না। ভুমি অফিসে তার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। আবার ভুমি অফিসের কর্তা ব্যক্তি ( এসি ল্যান্ড)’র নিজের এলাকায় তার বাড়ি হওয়ায় ক্ষমতা আরো বেশি বলে মনে হচ্ছে। এই এক ব্যক্তির হাতেই সেবাগ্রহীতারা মোটামুটিভাবে আটকানো।

ভুক্তভোগী উখিয়া পাতাবাড়ি এলাকার জনৈক বড়ুয়া অত্র প্রতিবেদককে জানান-অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। অনলাইনে আবেদনের পর আবার মূল কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। তখন তাদের নির্দিষ্ট পরিমান টাকা না দিলে অনলাইনেই ঝুলে থাকে ফাইল।

হলদিয়া পালং এলাকার জনৈক ভুক্তভোগী কামাল জানান-অনেকদিন যাবত তার ক্রয়কৃত ও এজমালী সম্পদের যথাযথভাবে ভাগ বাটোয়ারের পরে নামজারী করার কাজ করতে গিয়ে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এখনও তার কাজের লক্ষ্যনীয় অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি বলে অত্র প্রতিবেদককে জানান। একেক টেবিলে একেক কথা বলায়, তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। পরে ভুমি অফিসের একটি সহায়তাকারী( দালাল)’র পরামর্শে, তাদের নিয়মে অগ্রসর হলে, কাজের কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে বলে আশা করছেন তিনি।
ফলাইয়া পাড়া গ্রামের জনৈক জসিম উদ্দিন বলেন-ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনা দিতে চাইলে তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে তিনি দুই হাজার টাকায় দাখিলা কেটেছেন আর খাজনা জমা দেখানো হয়েছে ৮১২ টাকা।

সিকদারবিল গ্রামের বাসিন্দা আলম বলেন, ভূমি অফিসে তার একটি মিস মামলার তদন্ত এলে তহশিলদার ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তার ক্রয়কৃত ১২ শতক জায়গা অন্যের দাবি করায়, তিনি আদালত থেকে ১৪৪ নিয়ে আসার পরেও তহসিলদার প্রতিপক্ষ থেকে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে আমার মালিকানা ও দখলস্বর্ত নেই বলে প্রতিবেদন দেয়-যা আমাকে খুবই ব্যথিত করে। এভাবে সেবা নিতে আসা অনেক জমির মালিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
উখিয়া ভুমি অফিসের দালাল চক্রের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে অত্র প্রতিবেদককে বলেন, জমি নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করার পর তদন্ত করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে নাম প্রস্তাব পাঠানো হয় উপজেলা ভূমি অফিসে। কিন্তু এই নাম প্রস্তাব পাঠানোর জন্য জমি অনুপাতে ১ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

উখিয়া ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার কাম কানুনগো মোবারক হোসেনের সাথে ভুমি অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের ব্যাপারে আলাপকালে তিনি, উত্থাপিত বিষয় ও অভিযোগগুলো সম্পুর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘উখিয়া ভুমি অফিসে কোন সিন্ডিকেট আছে বলে আমার জানা নেই। এখানে সেবাপ্রার্থীদের নিরলসভাবে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এদিক থেকে কোনপ্রকার অভিযোগ নেই। কারও অভিযোগ থাকলে আমাদের সাথে আলাপ করলে আমরা যথাযথ আইনের ভিতর থেকে তার সুরাহা করার চেষ্টা করে থাকি। এখানে ‘স্ফীড মানি’ বা ‘আন্ডার টেবল মানি’ বলতে কিছু নেই। আমরা সরকারি নিয়মে সব কিছু যাচাই বাছাই করে, নিয়মের ভেতরে থেকেই কাজ করে থাকি। কারো কাগজ পত্রের অসম্পুর্ণতা বা যথাযথভাবে আবেদন না করার কারনে সেবা পেতে দেরি হতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু ইচ্ছে করে ফাইল লাল ফিতায় আবদ্ধ করে হয়রানি করার কোন ব্যাপার নেই। যারা বলছেন তারা নিশ্চয়ই না জেনে, না বুঝে বলছেন’।
তবে অনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উখিয়া সদর ইউনিয়ন তহসিলদার খালেদা বেগম বলেন, ‘আমি সদর ইউনিয়নে জয়েন করেছি মাস তিনেক হচ্ছে। আমার নিয়োগ প্রাপ্ত হবার পর, উখিয়া সদর তহসিল অফিসে সরকারি নিয়মের বাইরে কোনপ্রকার অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। পুর্ববর্তী তহসিলদারের সময় কী হয়েছে, না হয়েছে আমি তা বলতে পারব না। আমার জানা মতে এই অফিসের কেউ কোনো অনিয়ম বা সরকারি নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। সিন্ডিকেট বা দালাল চক্র বলতে কিছু নেই। ফাইল আটকের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এরুপ অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব’।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছালেহ আহমেদ বলেন, ‘ উখিয়া উপজেলা ভুমি অফিসে নিযুক্ত হয়েছি প্রায় ১ বছর হচ্ছে। ভুমি সেবা গ্রহীতাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা জনগণের সেবক। আমাদের কাছে সেবাগ্রহীতারা যারা আসেন, আসলেই তারা এক একজন রাজা বা জমির মালিক। আমরা তাদের সুষ্ঠু সেবা প্রদান করার জন্যই সরকারি সেবক বা খাদেম। আমাদের উচিত তাদের স্যার সম্বোধন করা’।

সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরো যোগ করেন-‘আমি সেবাগ্রহীতাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি রেজিস্ট্রার করেছি, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কতবার আমাদের কাছে এসেছে সেবা নেবার জন্য তা তদারকি করি। ভুমি অফিসে কে কতবার এসেছেন, সেবা না পেয়ে থাকলে রেজিস্ট্রার দেখে তাদের সেবা মসৃণ করার চেষ্টা করছি। সেবাগ্রহীতা আমাদের কাছে সরাসরি এসে সেবার ব্যাপারে কথা বলুক, সেবা নিশ্চিত করুক আমরা তা চাই। সেবাপ্রার্থীরা যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় আমি তা দেখভাল করি। আমরা কোনভাবেই চাইনা তারা বাইরের মানুষের হাত ধরে সেবা গ্রহণ করুক ও বাড়তি বিড়ম্বনার শিকার হোক। আমার রিকুয়েষ্ট হচ্ছে সেবা প্রার্থী বা সেবা গ্রহীতারা সেবা নিতে সরাসরি আমাদের কাছে আসুক, যাতে সেবা নিয়ে কোনপ্রকার অযাচিত বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। ভুমি অফিসে কোনপ্রকার সিন্ডিকেট বা দালাল চক্রের কোন অস্তিত্ব নেই। কোন সেবা গ্রহীতা অযথা সিন্ডিকেটের কথা বলে হয়রানির শিকার হলে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন। আমরা সারাক্ষণ সেবা গ্রহীতার সেবা প্রদানে সচেষ্ট’।

অনেকক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতা/সেবা প্রার্থী ভুমির কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজের আসল অবস্থা না বুঝে অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করে বসেন। প্রত্যেকেই চায় নিষ্কলুষ ও নিষ্কন্ঠকভাবে ভুমি সেবা পেতে। আমরাও চেষ্টা করি সেবা দিতে। কিন্তু সেবাগ্রহীতা যেকোন ব্যাপারে আমার শরণাপন্ন হতে পারেন। আমার দরজা সেবা গ্রহীতাদের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু তারা যেকোন ব্যাপারে বিভিন্ন জনের সাথে না বুঝে কথা বলেন বিধায় বিভিন্ন জটিলতায় মসৃণ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না-বলে তিনি আরো যোগ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

মাদক কারবারে পাচারকারী আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদার

মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা সিগারেট, স্বর্ণের বার, ইয়াবাসহ...

নরসিংদীতে বজ্রাঘাতে মা-ছেলেসহ ৪ জন নি’হ’ত

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে জমিতে ধান কাটার কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে...

সংবাদ প্রকাশের জের:পাচার কালে জ্বালানী তেল জব্দ:টহলদলের গাড়ীতে হামলা:অধরা চোরাকারবারি

  এম.এ.রহমান সীমান্ত: গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকায় ববস্তুনিষ্ঠ ও...

সিরাজগঞ্জ ২১৬ কেজি গাঁজাসহ ০২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার, কাভার্ড ভ্যান জব্দ।

  মোঃ লুৎফর রহমান লিটন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জে র‌্যাব-১২’র অভিযানে...