সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি;
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সাইবার অপরাধে। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও জড়িয়ে পড়ছে এসব অপরাধে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসা, অনলাইন জুয়াসহ নানা ধরনের অপরাধ। সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের অপরাধ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে অনলাইনে। অনেকেই শিক্ষাজীবন শেষে কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পাওয়ার কারণে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে তারা জানান। গত ২রা মে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইসমাইল হোসেন সুমনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, সুমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেছেন। সুমনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত অন্যরাও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরা প্রত্যেকেই অনলাইন জুয়ায় জড়িত। রয়েছে আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের সঙ্গে যোগাযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, এরা জুয়াসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এমনই এক চক্রের ৪ সদস্যকে গত ১০ই মে রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সামগ্রী। অনলাইন জুয়াসহ নানা ধরনের অপকর্মে ছেলেদের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে মেয়েরাও। গত ১৮ই মে ঢাকার বনশ্রী, সাভার এবং নোয়াখালী অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে অনামিকা সরকারসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, অনামিকার গ্রামের বাড়ি নাটোরে এবং তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশি ও আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে। অনেকেই লোভে পড়ে বা কম সময়ে বেশি আয় করার ইচ্ছা থাকায় অনলাইন জুয়া, বিট কয়েন ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে অনলাইন জুয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে স্টিমকার। এই অ্যাপটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। স্টিমকারের অন্তত ১১টি এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জুয়াড়িরা মূলত ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হচ্ছে বিট কয়েন ও গেটওয়ে। অপরাধ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা জানিয়েছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা জুয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাবে তা মেনে নেয়া যায়না। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে।
অপরাধ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় কাটায়। তাদের আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসের সুযোগ কম। যার ফলে তারা সহজেই নানা ধরনের অনলাইন ক্রাইমের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম মনে করেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বর্তমানে হতাশা কাজ করছে।
তিনি বলেন, হতাশা থেকে অনেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চাকরির বাজারে অত্যন্ত সংকট। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি না পাওয়ার হতাশা তাদের মধ্যে কাজ করে। এটাও একটা কারণ হতে পারে।
সূত্র: মানবজমিন