বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নাকাল উখিয়াবাসী, গ্রাহকদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ভুতুড়ে বিল।

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধি 

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের গ্রাহক হয়রানি থেমে নেই। প্রতিনিয়ত ভুতুড়ে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকরা, অতচ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই বললেই চলে। অতীতে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় গ্রাহকদের যে পরিমাণ বিল গুনতে হতো, বর্তমানে বিদ্যুতের চরম সংকটকালীন মুহুর্তে ৬/৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ দিয়েও একই পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এ ব্যপারে স্থানীয় অধিকাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকগণ চরম খোভ প্রকাধ করে বলেন, এমনিতে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকেনা, ১ ঘন্টার জন্য আসলে ২ ঘন্টা বন্ধ থাকে। বিদ্যুতের চরম সংকটকালীন এ মুহুর্তে ও এতো বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে কি করে। গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ বিভাগের এমন ভুতুড়ে বিল দেয়াকে অনেকটা সন্ত্রাসী কায়দায় টাকা আদায় করছে বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, মিটার রিডারেরা মিটারের রিডিং না দেখেই অফিসে বসে গ্রাহকদের বিল তৈরি করেন,যে কারনে পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের এমন ইচ্ছাকৃত দেয়া অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বাধ্য হয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, গতো জুলাই, আগষ্ট মাসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং চলমান ছিলো যা বিদ্যুৎ বিলের সাথে সামঞ্জস্য ছিলো বলা যায়। নির্ধিদায় বিল পরিশোধ করেছি। কিন্তু সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে এসে বিদ্যুতের চরম সংকটে সারাদিন ৭/৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল আসে ঠিক আগের মতোই। ভুক্তভোগী ঐ বিল নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ২/৩ দিন যাবত ঘুরেও কোন ফল না পেয়ে অবশেষে নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরে যান। তার বিলের ব্যপারে পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষের ভাষ্য হলো বিল যেটা দেয়া হয়েছে তাতে কোন ভুল নেই, হয়তো আপনার মিটারের সমস্যা থাকতে পারে, আপনি মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে পারেন। এ ধরনের অসংখ্য ভিকটিম ভুতুড়ে বিলের যন্ত্রনা মাথায় নিয়ে উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা গেলে ও আদৌ তাদের সঠিক কোন সমাধান দিতে পারেনি কতৃপক্ষ, উলটো নানান হয়রানির পর কোন উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে ঐ চাপিয়ে দেয়া অতিরিক্ত বিল বাধ্য হয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

সম্প্রতি, বিদ্যুৎ বিল বিড়ম্বনার শিকার হয়ে স্থানীয় সাংবাদিক, ছাত্র ও যুব সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করতে শুরু করে। গতো ( ১১ অক্টোবর ২০২২) উখিয়ার কোটবাজারে সাংবাদিক শরিফ আযাদের সভাপতিত্বে, অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে পল্লী বিদ্যুতের সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ এনে উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম এর অপরাসারনের দাবী তোলেন।

সাংবাদিক শরীফ আযাদ তার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেন, মাগরিবের শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে গেলো।

কামাল উদ্দিন নামের আরেক গ্রাহক লিখেছেন ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার ১১০ ইউনিট, বিল পেয়েছি ২০০ ইউনিট। ৯০ ইউনিট ভুতের বিল।

সাংবাদিক জসিম আযাদ তার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেন,
বিদ্যুৎ বিভাগকে শান্তিতে নোবেল প্রদানের জন্য নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি সমীপে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

সাংবাদিক আব্দুল লতিফ বাচ্চু লিখেছেন,
উখিয়ায় দিনরাত ২৪ ঘন্টায় বিদ্যুৎ থাকে না ১০ ঘন্টা
কিন্তু বিদ্যুৎ বিল তো কম আসে না?
কারিশমা কোথায়? জাতি জানতে চায়।

স্বাস্থ্যকর্মী মোতালেব হোসেন লিখেছেন,
ইলেকট্রিসিটি তে দেশ নাকি প্রেগন্যান্ট…
দোয়া করি, যেন এই অবস্থায় মিচ-ক্যারেজ হয়ে না যায়।
ফ্যাক্টঃ বিদ্যুৎচমক।

বিদ্যুতের এমন দূর্নীতির বিরুদ্ধে এরকম অসংখ্য মন্তব্যে ভরপুর সোশ্যাল মিডিয়া।

বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উখিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে মিটার না দেখেই ইচ্ছেমত অতিরিক্ত বিল দিয়ে যাচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে আরও অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

উখিয়া সদরের নুরুল ইসলাম বলেন, আগষ্ট মাসের বিলে আমার মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের যে রিডিং দেখানো হয়েছে, এক মাস পরেও মিটারে রিডিং দেখা গেছে প্রায় একই, তাহলে কি বিদ্যুৎ বিতরন সমান পর্যায়ে ছিলো?

রাসেল নামের আরেক গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন তাঁদের চুরি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দিচ্ছেন। প্রায় প্রত্যেক গ্রাহককেই অতিরিক্ত বিল দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এই দুর্নীতির তদন্তের দাবী জানান তিনি।

বিদ্যুৎ বিপর্যয় কালীন সময়ে এমন ভুতুড়ে বিলের বিষয়ে জানতে উখিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম এর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ বিলে এমন অসামঞ্জস্য পূর্ণ কিছু দেখা দিলে তার ব্যবস্থা নিতে পারেন ডিজিএম সাহেব, এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।