রবিবার, ৩০ Jun ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

শিরোনামঃ
সারাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ ১৯ জেলা জজকে একযোগে বদলী  মিয়ানমারে ফের বিস্ফোরণের শব্দ, মুসলিম রোহিঙ্গাদের নিধন করার টার্গেট মনোহরদীতে বিদ্যুতায়িত হয়ে মা-ছেলের মৃ:ত্যু চুরি করতে নিষেধ করায় অভিমানে ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা যুবকের আ’ত্নহ’ত্যা বাবার কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে রাজাপালং উপ-নির্বাচনে হুমায়ুনের প্রচার শুরু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চুরিকাঘাতে এক রোহিঙ্গা নি’হত ভারতের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদ: ৫ জুলাই সমাবেশের ডাক গণতন্ত্র মঞ্চের নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজির বিচার করায় আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে জেলা পরিষদ সদস্যসহ দুজন নিহত
নিখোঁজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লাকী

নিখোঁজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লাকী

উপজেলা পরিষদের সর্বপ্রকার দাফতরিক কার্যক্রম স্থবির
মো: খায়রুল ইসলামঃ
বহুল আলোচিত ‘ছাগল কান্ডের ঘটনায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন মন্তব্য রায়পুরা তথা নরসিংদীর সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে। অর্থাৎ তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি এনবিআর এর কর্মকর্তা বহুল সমালোচিত মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী এবং তার নামে- বেনামে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। তার এই আত্মগোপন বা নিখোঁজ থাকার কারণে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

গত বুধবার (২৬ জুন) বেলা বারোটার দিকে রায়পুরা উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর দফতরে তার নামের নেইমপ্লেইটি সাটানো আছে, কিন্তু তার কক্ষে তালা এবং তিনি ‘ছাগল কান্ডের’ ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। উপজেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তারা জানান, তিনি ঈদুল আযহার পর থেকে আর দফতরে আসেননি।

বুধবার উপজেলা কার্যালয়ের নিচে দেখা হয় আয়েশা বেগম নামে এক বৃদ্ধা নারীর সাথে। তিনি রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল নিলক্ষা থেকে এসে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর একটি স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও তাকে না পেয়ে ওই নারী অবশেষে বাড়ী ফিরে গেলেন। আয়েশার মত অনেকেই সেবা নিতে আসা লোকজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

গত ২৯ মে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুমন মিয়া নামে একজন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খুন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটি স্থগিত করেছেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য এখনো পর্যন্ত নতুন কোনো তফছিল বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেননি। আর নতুন নির্বাচন হওয়ার আগপর্যন্ত রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে লায়লা কানিজ লাকীই দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। সে অনুযায়ী রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমে মুখ্য ভূমিকা রাখার কথা তার। কিন্তু ঈদুল আযহার পর থেকে এখনো পর্যন্ত তার এই অনুপস্থিতি বা দফতরে হাজির না হওয়ায় দাফতরিক সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

পরিষদের সংগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদুল আযহার ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি দফতরে আসেননি। পরিষদের কোনো মিটিং-সভাতেও তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তারা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতি না থাকায় বিভিন্ন দাফতরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ তার দফতরে এসে নানা ভোগান্তিতে পড়ছে। চেয়ারম্যানকে না পেয়ে তারা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি গত রবিবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত রায়পুরা উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা ও সোমবার (২৪ জুন) নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও তিনি যোগ দেননি বলে জানা গেছে। আর এসব ঘটনায় এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ‘মতিউরের প্রথম স্ত্রী লাকী কি দেশে ! না বিদেশে? ১৫ লাখ টাকার একটি খাসি কেড়ে নিলো লাকীর হাসি।’

রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারেননা। জনগণের কাছে তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আটকে থাকবে।

রায়পুরা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ তাহমিনা মানিক জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক বছর লায়লা কানিজ লাকী কখনোই নিয়মিত অফিস করতেন না, মাঝেমধ্যে আসতেন। পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় তিনি উপস্থিত থাকতেন না। ঈদের পর থেকে তিনি আর আসেননি।

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন বলেন, এটা রায়পুরার জন্য একটা দুঃখজনক অধ্যায়, লজ্জাজনক ঘটনা। স্বামীর অবৈধ টাকার প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগটাকে সে তছনছ করে দিয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, রবিবার (২৪ জুন) উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভার ব্যাপারে ওনাকে জানাতে ও সভায় উপস্থিতির ব্যাপারে কথা বলতে সভার আগেরদিন ফোন দিয়েছিলাম, ওনি ফোন ধরেননি। রবিবার সকালে অন্য একটি ফোন নাম্বার থেকে ওনার রেফারেন্স দিয়ে পিএস বা কেউ একজন বলেছেন, ওনি আজকে (রবিবার) অফিসে আসবেন না কালকে আসবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দাফতরিক কোনো সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ওনি যদি লংটাইম অফিসে না আসেন তবে অফিসিয়াল কার্যক্রমে সমস্যা হবে।

নরসিংদীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মৌসুমী সরকার বলেন, নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিতের ব্যাপারে আমরা অফিসিয়ালি কোনো কিছু জানিনা। এছাড়া আমরা ওনার কাছ থেকে ছুটির কোনো দরখাস্ত পাইনি। ওনার অনুপস্থিতের কারণে পরিষদের কার্যক্রমের যদি কোনো বিঘ্ন ঘটে এবং আমরা যদি অফিসিয়ালি জানতে পারি তবে সে ক্ষেত্রে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হবে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী’র সরকারী ওয়েবসাইটে দেয়া ০১৩২৬-৮৪৫২৩১ ফোন নাম্বারসহ একাধিক ফোন নাম্বারে ও হোয়াটসঅ্যাপ এ যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি এবং অন্য একটি ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© কপিরাইট ২০১০ - ২০২৪ সীমান্ত বাংলা >> এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ

Design & Developed by Ecare Solutions