টিকা নিয়ে ‘সংশয়ে’ ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছে সরকার

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২১

সীমান্তবাংলা ডেক্স : দেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে অনেক মানুষের মাঝেই এক ধরনের সংশয় বা আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা ভিআইপিরা আগে টিকা না নেয়ায় সংশয় বাড়ছে। তবে সরকার মনে করছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের জন্য সরকারি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা কেনা হচ্ছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসেছে সোমবার। এর আগে গত সপ্তাহে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছিল।

টিকা নিয়ে সংশয় কেন, কী বলা হচ্ছে

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সংশয়ের কারণে এখনই তা নিতে চান না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী কথা নাহিয়ান। তিনি বলেছেন, এমন চিন্তার পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও টিকা নিয়ে তার মনে একটা আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন নেয়ার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এবং মারাও যাচ্ছে। যদিও এটা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্যই কি না- সেটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তারপরও গণমাধ্যমে অথবা ফেসবুকে বিভিন্ন খবরে এগুলো আসছে। সেটার কারণে মনে একটা ভয়, আতঙ্ক বা সংশয় থেকেই যাচ্ছে যে, টিকা নেয়ার সুযোগ হলে আমি নেব কি নেব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর মতো বিভিন্ন পেশার বা সাধারণ মানুষের অনেকেই এখন নানাভাবে তাদের আস্থার অভাব বা সংশয় প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

গত সপ্তাহে ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখ ডোজ টিকা হাতে পাওয়ার পরই সরকার এর কার্যক্রম শুরুর কথা ঘোষণা করে। বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে এর প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।

ভিআইপিদেরআগে টিকা নেবার দাবি

কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। বিরোধী দল বিএনপি নেতারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বা ভিআইপিদের আগে টিকা নেয়ার দাবি তুলেছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাধারণ মানুষের সংশয়ের কারণে তারা এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই এই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে নানা কথাবার্তা রয়েছে। গণমাধ্যমে নানা রকম নিউজ হচ্ছে। সেজন্য আমেরিকা এবং ইউরোপেও মানুষের মাঝে একটা ভীতি আছে, একটা সন্দেহ আছে। বাংলাদেশেও টিকা নিয়ে ভয় এবং সন্দেহ বেশ ভালোভাবেই আছে।’

ফখরুল বলেন, ‘মানুষের আস্থা তৈরি করতে হলে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীবর্গ যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের আগে নিতে হবে। তারা আগে নিলে সংশয় বা সন্দেহ কমে আসতো। সে কারণে আমরা তাদের আগে নেয়ার বিষয়টি বলছি।’

টিকা ভারতে তৈরি বলেইউদ্দেশ্যমূলকসন্দেহ সৃষ্টি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির অনেক নেতাই বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হলেও যেহেতু তা ভারতে উৎপাদন করা হয়েছে, সে জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে।

সরকারও পরিস্থিতিকে একইভাবে দেখছে বলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে মনে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, মহামারির লড়াইয়ে সামনের সারিতে যারা ছিলেন, ভিআইপিদের বাদ রেখে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেয়ার পরিকল্পনাকে ভিন্নভাবে দেখা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘যখন একটা ভ্যাকসিন আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের কাউকে দেয়া হবে, তাকে দেয়ার জন্য ক্যামেরা নিয়ে যেতে হবে ১০টা। সেটা তো আসলে স্বাস্থ্যসম্মত হলো না।’

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর এবং ভিআইপিদের আগের টিকা নেয়ার যে দাবি এসেছে-সে ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমাদের এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটা ছিল যে, যারা সামনের সারিতে কাজ করে আমার আগে তাদের টিকা দরকার। এর ভেতরে অন্য কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।’

সাধারণ মানুষ যেটা নেবে আমিও তাই নেব

ড. কায়কাউস বলেন, ‘আপনাকে একটা কথা বলে রাখি আমি, ফাইজারের টিকা তো বিশ্বে প্রথম আসে, তখন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম যে, উনাকেসহ দেয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসবো কি না – তো উনি খুব কড়া দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি আমাকে এতদিন এটা চিনেছো। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেটা নেবে আমিও তাই নেব। কিন্তু এটাকে অপব্যাখ্যা করাটা খুবই দুঃখজনক।’

তিনি উল্লেখ করেছেন, যারা সামনের সারির তাদের মধ্যে একজন নার্সকে দিয়ে শুরু করা হচ্ছে, এ নিয়ে সংশয়ের কারণ তাদের বোধগম্য নয়।

সরকারের অন্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা আগে টিকা নিলে আরও বেশি সমালোচনা করা হতো বলে তারা মনে করেন।

এছাড়া একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আগে টিকা নিলে তখন অগ্রাধিকার তালিকা বাদ দিয়ে মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতা বা রাজনীতিকদের আগে টিকা নেয়ার হিড়িক পড়তে পারে। যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এবং এই বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিয়েছে।

ওই মন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ে আগে নেয়ার দাবি যদি বড় ইস্যু হয়, তখন সরকার আলোচনা করে দেখবে।

করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেছেন, ভারতের উপহার এবং কেনা টিকা নিয়ে সংশয়ের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শুধু ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদন করা হয়েছে। ভারতের উপহার এবং কেনা টিকা-দু’টো টিকাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার। এগুলো ভারতের আবিষ্কার নয়। ফাইজার এবং মডার্নাসহ যে টিকাগুলো এখন বিশ্বে রয়েছে, তার মধ্যে অক্সফোর্ডের এই টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হয়েছে।’

এদিকে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই টিকা নিয়ে সংশয় যাতে না থাকে, সেজন্য বিশেষজ্ঞ মতামত প্রচার করা এবং এর বিজ্ঞানসম্মত বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর কর্মসূচিও সরকার নিয়েছে। -বিবিসি বাংলা

২৫জানুয়ারি/জেবি/এডমিন/ইবনে

সংবাদটি শেয়ার করুন