সীমান্তবাংলা ডেক্স : নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই দেশব্যাপী চলছে করোনার টিকাদান কার্যক্রম। ক্রমেই টিকা নিতে বাড়ছে মানুষের আগ্রহ। তৃতীয় দিনে লক্ষাধিক মানুষ নিয়েছেন টিকা। নিবন্ধনও করছেন অনেকে। তবে এখনো টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার-প্রচারণায় ঘাটতি আছে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।
তারা বলছেন, টিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ আরও নিশ্চিত হতে চায়। তারা জানে না বলেই টিকা নেয়ার ব্যাপারে নানা সংশয় কাজ করে। তাই এই কর্মসূচি সফল করতে জোর দিতে হবে জনসচেতনতায়। কারণ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জটিলতা, টিকা গ্রহণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এখনো স্বচ্ছ ধারণা পায়নি মানুষ। এছাড়াও টিকাদান কেন্দ্রের অবস্থান নিয়েও কিছুটা অন্ধকারে আছেন সাধারণ মানুষ। তাই এসব দিকে সরকারকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত রবিবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচি। এতে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে ইতিমধ্যে সরকার টিকার নিবন্ধন করা সহজতর করাসহ বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে। এখন থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা সবাই স্থানীয় যেকোন সরকারি হাসপাতালে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলে নিবন্ধনও সেখানেই করানো যাবে। আগে নির্দেশনা ছিলো প্রথমদফায় টিকাদান কর্মসূচীতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারিতে থাকা মানুষ এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সীরা টিকা নিতে পারবেন।
গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ৭৮হাজার ৭৫২ জন সারাদেশে টিকা নিয়েছেন। টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৬ লাখেরও বেশি। তবে টিকাগ্রহণকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বাড়ছে। তবে সবাই সুস্থ আছেন। তিনদিনে ২০৭ জনের শরীরে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, ইমাম, স্থানীয় প্রশাসন, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে পারেন।
আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ডা. ইশরাত জাহানও মনে করেন টিকার ব্যাপারে সংশয় কাটাতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে চিকিৎসক বা সরকারি চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যরাই টিকা দিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষও যে টিকা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন সেটা এখনো অনেকে তা জানেন না।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এরপর ২৮ তারিখ ঢাকার চারটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় দেশব্যাপী জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ১০০৫টি কেন্দ্রে টিকাদান চলছে।
ঢাকা মেডিকেলের টিকাদান কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন আল আজাদের জানান, প্রতিদিনই টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সবাই নির্বিঘ্নেই টিকা নিতে পারছেন।
যদিও অনলাইনে আবেদন করার পর সম্মতিপত্র সঙ্গে না আনায় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে জানালেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. জয়শ্রী দাসকে। তিনি বলেন, ‘টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। নিবন্ধনের বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। সাধারণ মানুষের কাছে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ কম। অনেক সময় ভুল হয়ে যায়। ’
এদিকে টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে শুরু থেকে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, এখন পর্যন্ত যাদের সমস্যা হয়েছে তা খুবই সামান্য। কারো টিকা নেয়ার জায়গা লাল হয়ে যাওয়া, হালকা জ¦র আসলে পরে ঠিক হয়ে গেছে।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে টিকা নেয়া খলিলুর রহমান বলেন, যেকোনো টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতেই পারে। সেটা মেনে নিয়েই টিকা নিয়েছি। দেশব্যাপি করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সবার টিকা নেয়া উচিত।
০৯ফেব্রুয়ারি/এডমিন/ইবনে