মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

শিরোনামঃ
উখিয়ার কুতুপালংয়ে মার্কেট দখল-বেদখল নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত সীমান্তে মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্তসহ চারজন আটক কক্সবাজার আদালতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর যৌতুকের মামলা! মিয়ানমারে বন্যায় মৃ’তের সংখ্যা বেড়ে ৭৪ জন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে নীলফামারী জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের কমিটি গঠন গাজায় যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলের উপস্থিতি মেনে নিবে না ইউএই বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক কক্সবাজারে ২০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্ধি, ৬ জনের প্রাণহানি! কক্সবাজারে বৃষ্টির রেকর্ড ২৪ ঘণ্টায় ৪০১ মিলিমিটার
উখিয়ায় অরক্ষিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির হিড়িক, আইনের কোন বালাই নাই

উখিয়ায় অরক্ষিত গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির হিড়িক, আইনের কোন বালাই নাই

 

।। এম আর আয়াজ রবি ।।
উখিয়ায় ফায়ার ও বিস্ফোরক লাইসেন্সবিহীন অরক্ষিতভাবে অবাধে চলছে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি। কোন প্রকার মাননির্ণয় ও বিস্ফোরক আইনের নিয়ম কানুন না মেনেই এসব সিলিন্ডার গ্রামীণ জনপদের মানুষ ব্যবহার করছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী এলাকাসহ উখিয়া সদর, কোটবাজার, মরিচ্যা, সোনারপাড়া বাজার ও গ্রামের অলিগলিতে অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন হাটবাজারে বিকিকিনি হচ্ছে ওসব গ্যাস সিলিন্ডার। এতে যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার সম্মুখীন হবার আশংকা রয়েছে। প্রতিনিয়ত ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটেই চলছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উপজেলার এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করার কথা থাকলেও তার কোন বাস্তব প্রয়োগ চোখে পড়েনি। বিধি মোতাবেক ১০টির বেশি সিলেন্ডার মজুদ রেখে বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদফতরের সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ২০০৪-এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলেন্ডার মজুদ করা যাবে। তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী এসব সিলেন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং আগুন নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাস স্থাপনা প্রাঙ্গণে দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছাকাছি আলো বা তাপের উৎস থাকা যাবে না। এই আইন অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর ২ বছর, অনধিক ৫ বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা দণ্ডিত হবেন এবং অর্থ অনাদায়ি থাকলে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এসব আইনের তোয়াক্কা না করে চা-দোকান থেকে আরম্ভ করে ভ্যারাইটিজ স্টোরেও পাওয়া যায় এ সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এসব বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের জন্য বিস্ফোরক অধিদফতরের কয়েকটি নীতিমালা রয়েছে। মহাবিস্ফোরক অধিদফতর কর্তৃক এসব নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং সেলও রয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি গ্রুপ অব কোম্পানি আবাসিক খাতে ব্যবহারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার তৈরি এবং বাজারজাত করছে। নিয়ম অনুযায়ী এলপি গ্যাস ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাত করতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীকে বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও কেউ নিয়ম মানছেন না। নীতিমালা ভঙ্গ করে এসব সিলিন্ডার যত্রতত্র বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিস্ফোরক অধিদফতর গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয় ও বিপণন লাইসেন্স প্রদান করলেও সাব-ডিলারের নামে এসব প্রতিষ্ঠান বাজারে মুদি মালের মতো গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর নেই এলপি গ্যাস বিক্রির বৈধ লাইসেন্স। নেই অগ্নিনির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডার। এতে যে কোনো মুহূর্তে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া উপজেলায় একসময় পার্শ্ববর্তী বনভুমিই ছিল স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের জ্বালানী কাঠ সরবরাহের একমাত্র অবলম্বন। পরে রোহিঙ্গাদেরকে সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল সরবরাহ করার মাধ্যমে বনভুমি উজাড় করা থেকে রক্ষা করা গেলেও, অনিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে ক্যাম্পের আশে পাশে গড়ে উঠেছে গ্যাস সিলিন্ডারের আউটলেট। এ সিলিন্ডার গ্যাস রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশে পাশেসহ উপজেলার সর্বত্র বিভিন্ন দোকানে অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানের বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিবহন ও বিস্ফোরক অধিদফতরের অনুমতিপত্র নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়ার বিভিন্ন হাট বাজার ও জংশনে সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দেদারসে বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের সামনে এমনকি ফুটপাথে সিলিন্ডার ফেলে রেখে এ ব্যবসা নির্বিগ্নে পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। মুদি দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান, ফ্লেক্সিলোডের দোকান, মেশিনারি দোকান, সারের ডিলার এবং চা-দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে ওই সিলেন্ডার গ্যাস। এসব দোকানে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার কথা থাকলেও তা নেই প্রায় দোকানে।
আবার কিছু দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও তা অকেজো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। বর্তমানে এ উপজেলাতেই সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা (রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মিলে) প্রায় ১ লাখ। ব্যাপক চাহিদা থাকায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মনগড়াভাবে সিলিন্ডার বোতল রেখে ব্যবসা চালাচ্ছে। এ জ্বালানির নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে। প্রায় দোকানি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রসারিত হয়েছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা। অথচ এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসাইন বলেন, জেলা প্রশাসক থেকে নির্দেশনা আছে, যেসব দোকানে সনদ ছাড়া অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস বিক্রি করছে সেগুলোকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার ( ভুমি) ছালেহ আহমেদ বলেন, উখিয়ায় বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব অবৈধ, নিয়ম বহির্ভুতভাবে যারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আমরা সতর্ক করেছি, অনেকক্ষেত্রে জরিমানা করেছি। নিয়ম বহির্ভুতভাবে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© কপিরাইট ২০১০ - ২০২৪ সীমান্ত বাংলা >> এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ

Design & Developed by Ecare Solutions