ফেলানী হত্যার ১০ বছর পার হলেও বিচার পায়নি পরিবার, বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২১

সীমান্তবাংলা নিউজ ডেস্কঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নাগেশ্বরীর কিশোরী ফেলানী হত্যার ১০ বছর পার হল।

দশ বছর আগে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর পরিবার এখনো বিচার পায়নি৷ বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷ চোরাচালানও কমেনি৷

 

ফেলানী হত্যার বিচারিক অবস্থা

এদিকে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস পান ফেলানী হত্যায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ।

দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটা তারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।

পরে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস পান অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ।

পরে এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।

এরপর কয়েক দফা ফেলানী হত্যার বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিচার কার্য অমীমাংসিত থেকে যায়।

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যার বিচার পুনরায় শুরুর পর ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা।

২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়।

রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই আবারও মানবাধিকার সংগঠন “মাসুম” ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। পরের দুই বছর কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি।

এরপর ২০১৯ ও ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির তারিখ ধার্য হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি।

এদিকে মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা ও মা।

ফেলানীর বাবার প্রত্যাশা ও বাস্তবতা-

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এখানো আশায় বুক বেধে আছেন যে, মেয়ের হত্যার বিচার হবে৷

ডয়চে ভেলে অনলাইন বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, “আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি, মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি। কোনো ফল পাইনি। মেয়ে আমার চলে যাওয়ার প্রায় ১০ বছর হতে যাচ্ছে। আজও তার বিচার পেলাম না। বার বার বিচারের তারিখ বদলায়। তাহলে বিচার পাবো কীভাবে?”

নূর ইসলাম আরও বলেন, ‘‘আগে সবাই যোগাযোগ করতো, করোনা শুরুর পর কেউ আর যোগাযোগও করছে না৷ ভারত সরকার পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে শুনেছিলাম, তা-ও পাইনি”৷

তবে (বাংলাদেশ) সরকারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।

বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা

ফেলানী হত্যার পর থেকেই সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েই চলেছে ভারত৷ সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো৷

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে ফুল আর মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিএসএফ সদস্যদের৷ বিএসএফ ওই দিন ‘উপহার’ দিয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ৷

মূলত চোরাচলানের কথা বলেই সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করা হয়৷ কিন্তু এর পিছনে বিএসএফ-এর ঘুস বাণিজ্যেরও ভূমিকা রয়েছে৷ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও একই খবর দিয়েছে৷

আর ভারতীয় গরু বা পণ্য তো সব সীমান্তে থাকে না৷ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এই গরু বা পণ্য আনা হয় সীমান্তে৷ গরু, মাদক, অস্ত্র ইত্যাদি সীমান্তে আসে কিভাবে?

ভারতের মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) প্রধান কীরিটি রায় সীমান্তে হত্যার প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলের ওই প্রতিবেদককে বলেছেন, চোরাচালানে যখন ঘুসের টাকা বিএসএফ পায় না, তখনই হত্যা করে৷ কেন্দ্রীয় সরকার যতই মুখে বলুক তারা আসলে কোনো ব্যবস্থা নেয় না৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সীমান্তে মোট ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ এর মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং ছয় জনকে হত্যা করা হয় নির্যাতন চালিয়ে৷ অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশিকে৷ ওই সময়ে ২৬ জন বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে গুরুতর আহত হন৷ অপহৃতদের মধ্যে মাত্র পাঁচ জনকে ফেরত দেয়া হয়েছে৷ বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি৷

অন্যদিকে, ২০১৯ সালে সীমান্তে বিএসএফ ৩৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে৷ তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে গুলি করে এবং পাঁচ জনকে নির্যাতনে হত্যা করা হয়৷ ২০১৮ সালে সীমান্তে ১৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়৷ এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বাড়ছে৷ বাড়ছে মারণাস্ত্রের ব্যবহার৷

সুত্রঃ একতা টিভি

সীমান্তবাংলা/ শা ম/ ৯ জানুয়ারী ২০২১)