চট্রগ্রাম -কক্সবাজারে অব্যাহত হাতী হত্যার প্রতিবাদে চট্রগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

এক বছরে দেশে ২২টি বন্যহাতি মারা গেছে, যার বেশিরভাগই ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে হাতি সংরক্ষণে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের এক কর্মসূচি থেকে।

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে ‘প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সম্মিলিত আন্দোলন’ এর ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এসব তথ্য ও দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সেভ দ্য নেচারের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “গেল এক বছরে দেশে প্রায় ২২টি বন্যহাতি মারা গেছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছে চারটি হাতি। মারা যাওয়া হাতিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
“গুলি করে, বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে এবং বিষ দিয়ে একের পর এক হত্যা করে চলেছে বন্য হাতিগুলো। সরকার বা বন বিভাগ এখানে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডকে স্বাভাবিক মৃত্যু বা দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে হাতি হত্যার সাজা হিসেবে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ৭ বছরের সাজার বিধান থাকলেও এই আইনে কারও সাজা হয়েছে বলে জানা নেই।”
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “শুধু উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় গত ৭ মাসে ১২টি হাতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সংঘবদ্ধ চক্র। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া, টেকনাফের এক তৃতীয়াংশ বনভূমি উজাড়ের ফলে বনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং বন্য হাতি বারবার লোকালয়ে হানা দিচ্ছে।
“হাতির চলাচলের মূল পথ বন্ধ করতে হোয়াইক্যং জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরে প্রায় দেড় হাজার একর সংরক্ষিত বনকে ঘিরে পুটিবিনিয়া ও চাকমার কুল এলাকায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের জন্য দুটি রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তোলা হয়েছে।”

সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম মিঠু বলেন, বাংলাদেশ বনবিভাগ ও প্রকৃতি-প্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইইউসিএনের সর্বশেষ ২০১৬ সালের হাতি জরিপের তথ্যমতে, দেশে এশিয়ান বন্য হাতি রয়েছে ২৬৮টি। দেশের সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে ৯৩টি পরিযায়ী হাতি বিচরণ করে। এছাড়া সরকারি অনুমতিক্রমে দেশে পালিত হাতি রয়েছে ১০০টি। কিন্তু দিন দিন মারা যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার এই সংখ্যা এখন কমছে।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পোষা হাতির তথ্য সংরক্ষণ করতে হয় এবং হাতিকে দিয়ে চাঁদা তোলা যাবে না। অথচ মৌলভীবাজার, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাতিকে ব্যবহার করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মৌলভীবাজারভিত্তিক চক্রের হাতে এরকম ৫০টি হাতি আছে বলে তথ্য পেয়েছি।
“৯ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জে এরকম একটি হাতি মারা গেলে ময়নাতদন্ত না করেই হাতিটির চামড়া ছাড়িয়ে এক জাদুঘরে আর হাড় আরেকটি জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
সমাবেশ থেকে জানানো পাঁচ দফা দাবি হল- চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অব্যাহত বন্যহাতি হত্যা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা, হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের পথ ও খাবার পানির উৎস সংরক্ষণ, হাতির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কর্মকর্তা কর্চারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে হাতির বাণিজ্যিক ব্যবহার স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও প্রাণি কল্যাণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহাব উদ্দিন, এনিম্যাল প্রোটেকশান এক্টিভিস্ট রুমানা রিফাত রিংকি, পরিবেশ কর্মী মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ 

( সীমান্তবাংলা / ২৬ ডিসেম্বর ২০২০)