মাননীয় নবাগত উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়, সমীপে

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২০

প্রথমেই আমার সশ্রদ্ধ সালাম-আসসালামুয়ালাইকুম ওয়ারাহমতুল্লাহ গ্রহণ করুণ।
উখিয়া উপজেলা বাংলাদেশের দক্ষিনের সীমান্তবর্তী একটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলা। এ উপজেলা জনসংখ্যার ভারে একপ্রকার ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। প্রায় তিনলক্ষ স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে মায়ানমার উদ্বাস্ত রোহিংগা জনগোষ্টি। ২০১৭ সালের ২৫-শে আগষ্ট পার্শবর্তী মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক নিপীড়িত হয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিংগা জনগোষ্টির প্রায় দু’তৃতীয়াংশের বসবাস কিন্তু উখিয়া উপজেলার পালংখালী, বালুখালী, কুতুপালং, মধুরছড়াসহ অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হওয়ায় অত্যধিক জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণের নিমিত্তে চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে অত্র এলাকায় কর্মরত এনজিও, আইএনজিও ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্র জনসংখ্যার এ অত্যধিক চাপ সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম হয়ে পড়ছে। এখানকার জীবন যাত্রার মান অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার চেয়েও অনেকক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মান অনেক অনেক গুন বেশি এতদঞ্চলে।সারাদেশ নয় সারা বিশ্বের ফোকাস পয়েন্ট হিসেবে উখিয়া টেকনাফ এক আলোচিত নাম নয় শুধু একটি আলোচিত এপিসোড!

অনেকদিন যাবৎ বিভিন্ন বিষয়ে অত্র জনপদ অনেকক্ষেত্রে reckless বা লাগামহীন/ নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু খাত/ক্ষেত্রে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্হিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রন করা, লাগাম টেনে ধরা ও নিয়মে নিয়ে আসা রীতিমত অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। যেহেতু, আপনি অত্র উপজেলার প্রশাসনিক সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা সাধারণ আমজনতা মনে করি, আপনার বলিষ্ট হাতে সেসকল লাগামহীন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা লাগাম টেনে ধরার নিমিত্তে আপনার বলিষ্ট প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ একান্তভাবে অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছে। যেসব খাত বা বিষয়াদির ক্ষেত্রে আপনার প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে তার চৌম্বক অংশ নিম্নে উপস্থাপন করা হলঃ
০১। ইয়াবা বানিজ্য প্রতিরোধে আপনাকে শক্ত হাতে এগিয়ে আসতে হবে। মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান হওয়ায়, অধিকন্তু মায়ানমার সরকার জেনে, বুঝে তাদের যাবতীয় ইয়াবা কারখানা আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপন করে, আমাদের উন্মুক্ত ও অরক্ষিত সীমান্তকে বিবেচনায় রেখে, ইয়াবা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রোডম্যাপ হিসেবে এতদঞ্চলকে সু কৌশলে ব্যবহার করতে গিয়ে, দেশীয় কিছু দেশদ্রোহী দালাল চক্র উক্ত ইয়াবা ব্যবসাকে জিইয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত মাদক ও দূর্নীতির বিরোদ্ধে ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আপনাকে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যতায় আমাদের তরুণ সমাজ, যুবসমাজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হতে আর ঢের দেরি নেই।
০২। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্য প্রতিরোধ
০৩। পাহাড় কাটা রোধ, অবৈধ বালি উত্তোলন রোধ, বনভুমি ধ্বংস রোধ,
০৪। পরিবহন খাতের লাগামহীন নৈরাজ্য, অনিয়ম, দূর্নীতি, অদক্ষ, অপরিনত, প্রশিক্ষনহীন, লাইসেন্সবিহীন চালক বা ড্রাইভার, রোডপারমিট ছাড়া গাড়ি চালানো রোধ, টোকেন বাণিজ্য করে অবৈধভাবে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আঁতাত রোধ।
০৫। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ।
০৬। থানা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর, কার্যালয় দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ স্বার্থান্বেষী মহল, দালাল চক্র কর্তৃক অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধকরণ ও রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকরণ এবং বন্ধকরণকল্পে আইনের যথাযথ নিয়ম প্রতিপালনকরণ।
০৭। বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নমূলক কার্যাবলীর সুষ্ট ও যথাযথ মনিটরিংকরণ, বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অনিয়ম, দূর্নীতির বিরুদ্ধে যতাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ।
০৮। দেশি বিদেশি অনুদানের হোস্ট কমিউনিটির জন্য বরাদ্দকৃত ৩০% যথাযথ বুঝে নিয়ে তা হোস্ট কমিউনিটির জন্য সুষ্ট ও সঠিকভাবে বরাদ্দকরন ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় সেসকল অনুদান সঠিকভাবে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থাকরণ।
০৯। স্থানীয় শিক্ষিত বেকারদের যোগ্যতানুযায়ী বিভিন্ন এনজিও, আইএনজিওগুলোতে ৭০% কৌটার সঠিক বাস্তবায়ন করণ এবং স্থানীয়দের সঠিকভাবে ট্রেনিং এ-র ব্যবস্থা করে, চাকুরী প্রাপ্তীর ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখার ব্যবস্থা করা।
১০। স্থানীয়দের যেকোন ছুতোয় চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদানের মনমানসিকতার পরিবর্তন আনতে বাধ্য করণ, স্থানীয়দের চাকুরীর স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করণ।
১১।হোস্ট কমিউনিটি হিসেবে শুধুমাত্র উখিয়া টেকনাফ বা রোহিংগা আসার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাকে আমলে নেওয়া। হোস্ট হিসেবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগকে নিয়ে এসে সত্যিকারের হোস্ট এ-র প্রতি অবিচার বা জুলুম অবস্থা থেকে পরিত্রানের ব্যবস্থাকরণ।
১২। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা বিভিন্ন বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে ডিসট্রিবিউশন হচ্ছে কিনা মনিটরিং করা।
১৩। কিছু মানুষ দিনে দিনে আংগুল ফুলে কলাগাছ বনে যাবার পেছনে কোন আলাউদ্দীনের চেরাগ কাজ করেছে তা যাছাই বাছাই করে জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
১৪। বিশ্ব অতিমারী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলা করার জন্য প্রত্যককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করণ।

উপরোক্ত দাবিগুলো ও বিষ্যাধী বিবেচনা করতঃ পাইলট প্রকল্প হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু পয়েন্টকে গুরুত্ব দিয়ে যত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারবেন, তত দ্রুত ও ইতিবাচকভাবে বর্তমানে উখিয়া উপজেলায় বিদ্যমান নৈরাজ্যকর, অস্বস্তিকর, লাগামহীন ও অসহনীয় পরিবেশ পরিস্থিতি সামাল দেবার ব্যাপারে আপনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন। তাই উপরোক্ত বিষায়াদি বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে, মাননীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনার উত্তরোত্তর উন্নতি, সম্বৃদ্ধি, সফলতা, সুস্থতা, নিরাপত্তা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

আপামর উখিয়ার নিষ্পেসিত জনসাধারনের পক্ষে লিখেছেনঃ এম আর আয়াজ রবি
লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকার কর্মী