সত্যের পক্ষে নির্ভিক একজন সৈনিক ডঃ পিয়াস করিম

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২০

গতো ১৩ অক্টোবর ড. পিয়াস করিমের মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো

—————————-

ছয় বছর আগে এই দিনে পিয়াস করিমের মৃত্যু সংবাদের পরপরই চিহ্নিত কয়েকটা টিভি চ্যানেলে মৃত পিয়াস করিমের লাশকে সামনে রেখেই আপত্তিকর মিথ্যা প্রচারনা শুরু করে দেয়।

দ্রুতগতিতে ভুঁইফোড় কিছু নাম না-জানা গৃহপালিত সংগঠনের নাম উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করে বলা হয়- মরহুম পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে রাখতে দেয়া যাবে না। কারন তিনি নাকি রাজাকার ছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে মরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকেসহ তার মৃত পিতা-দাদা-নানাকে রাজাকার বানিয়ে দেয় এইসব ভুইফোড় মিডিয়া।

দুঃখ তো লাগছিলই। ভাবলাম, যে মানুষটি প্রতিদিন টিভি টকশোতে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। আজকে তার প্রাণহীন লাশটিকে পর্যন্ত সেই একই অপশক্তির বিরুদ্ধে এভাবে লড়াই করতে হচ্ছে!

সকালবেলা পিয়াস ভাইয়ের নামাজে জানাজা ও দাফনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথিমধ্যেই জানতে পারলাম, চিহ্নিত কয়েকটি টিভিতে শহীদ মিনার থেকে সরাসরি লাইভ নিউজে আমিসহ দেশের নয়জন ব্যক্তির ফাঁসির দাবি প্রচার করা হচ্ছে। কারন আমাকেসহ আরো যাদেরকে শহীদ মিনারে ’অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ হিসেবে ফাঁসি চাওয়া হচ্ছে, তাদের সবাই টিভি টকশোর আলোচক।

সবাই আমরা কমবেশি লেখালেখি, টকশো ও সভা সমাবেশে সরকারের কড়া সমালোচনা করি। ব্যস, এতটুকু অপরাধেই আমরা ‘স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার’ খ্যাত হয়ে ফাঁসিতুল্য অপরাধ করে ফেললাম!

আর্শ্চযজনকভাবে সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত বলল, পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে রাখা যাবে না। রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করে রাখা হলো লাশ শহীদ মিনারে না নিতে পারার জন্য। অথচ দেশের মানুষ সেদিন শহীদ মিনারের বদলে জাতীয় মসজিদকেই বেছে নিলো।

ড. পিয়াস করিম একজন পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল হিসেবে জনগণের প্রত্যাশিত বলিষ্ঠ ভূমিকাই পালন করেছেন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, তা শাণিত যুক্তি ও প্রজ্ঞার সাথে তুলে ধরতেন। এ কারণেই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জনমানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলার প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন। চিন্তা ও চেতনার জগতে পিয়াস করিম ছিলেন আধুনিক প্রগতিশীল বন্ধুবৎসল সাদা মনের একজন মানুষ। অথচ দর্শনগত অবস্থানের কারণে মৃত্যুর সাথে সাথে তার পিতাসহ তাকে রাজাকার বলে প্রচারণা চালানো হয়।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাহেব সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিলে এই অহেতুক মিথ্যা প্রপাগান্ডার পরিসমাপ্তি ঘটে।

আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে স্পষ্টভাষায় বলেন, ‘সদ্যপ্রয়াত ড. পিয়াস করিমকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আটক করেছিল। তিনি রাজাকারের নাতি বা ছেলে নন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পিয়াস করিমের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি। যেটা আমি বলছি তা আমি প্রমাণও করতে পারব। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি। তার রাজাকার হওয়ার খবরটি গণজাগরণ মঞ্চ কিংবা অন্যরা প্রচার চালাচ্ছে এটা ঠিক না।’

আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পিয়াস করিমের নানা কুমিল্লা জেলার আওয়ামী লীগের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পিয়াস করিমের বাবা আইনজীবী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তাই ভাবতে অবাক লাগে, তিনি কী করে রাজাকারের নাতি, ছেলে বা রাজাকার হন।

সুত্রঃ গনমাধ্যম ও ফেসবুক পাতা হতে।

(সীমান্তবাংলা/ ১৫ অক্টোবর ২০২০)