প্রসংগঃ দূর্নীতি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

SIMANTO SIMANTO

BANGLA

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০

সীমান্তবাংলাঃ  দুর্নীতি শব্দটি নীতির সাথে মিশে আছে অর্থাৎ কোন সুনির্দিষ্ট নীতি, নিয়ম- কানুন,ধর্মীয় আচার, অনুষ্টান, বাধা-নিষেধ,নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে সরে যাওয়ার নামই দুর্নীতি। অন্যভাবে বলা যায় যখন কেউ নীতির বিপরীতে অবস্থান করে সে মূলত দুর্নীতি করে এবং দুর্নীতির প্রধানতম কারন হল নীতিহীন লোভ এবং ভয় থেকে মুক্ত থাকা। মানুষ জন্মগতভাবে অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায় এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল লোভ। এই সাধারন লোভ আরও বিস্তৃতি লাভ করে নীতিহীন লোভে পরিনত হয়, তখন আইনের সাথে সাথে ধর্মীও অনুশাসন ও স্থানীও প্রথার বাধ্য – বাধকতা থেকে মানুষ মুক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, লোভ যখন ভয় (আইন, ধর্ম বা স্থানীয় প্রথার ভয়) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, তখন অনিয়ম বেড়ে যায়। অনিয়মের আরেক নাম হল দুর্নীতি।

বর্তমানে দুর্নীতি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শিরা উপশিরায়, জালের মত বিরাজ করছে,যা আমাদের সমাজ এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমান সময়ে এমন কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রকল্প বা কাজ নেই, যেখানে দুর্নীতির কালো থাবা বাসা বাঁধেনি। প্রাত্যহিক জীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি পরতে পরতে দূর্নীতি মাকড়সার জালের মত ছেয়ে গেছে। শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ও দুর্নীতি এর কালো থাবা পরিলক্ষিত হয়। সমাজের একদম উঁচু শ্রেণি থেকে নিচু শ্রেণি পর্যন্ত দুর্নীতির করাল গ্রাসে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যায়। দেশের সাধারন কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সাধারন আমজনতা দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়, কিন্তু এক শ্রেনির লোক যারা (রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী) দূর্নীতির সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত হয়ে পড়েছে। আবার যারাই রাজনীতি করে, রাজনীতিকে পুঁজি করে ব্যবসা-বানিজ্য করে, সরকারী চাকুরীজীবি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থেকে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবান্বিত ও নিয়ন্ত্রন করে, তারাই মূলত দূর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। একটি দেশ পরিচালনা করেন সেই দেশের নির্বাচিত সরকার। সেই সরকারের নীতি নির্ধারক, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, জনপ্রতিনিধি,আমলা যদি দুর্নীতি গ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি কিভাবে সম্ভব? বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বাস্তবতায় দুর্নীতি নীতির অন্য নাম হয়ে দাঁড়িয়েছ, সুতরাং সেখানে দেশ থেকে এই ভয়ানক নিষ্টুর মহামারী দূর্নীতিকে নিয়ন্ত্রন ও সামাল দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে, বৈকি।

বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। এ দেশের প্রতিটি ছোট বড় সকল খাতেই দুর্নীতি এবং অনিয়মের দৃষ্টান্ত দেখা যায়। যেমন সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা,সরকারি সব রকম উন্নয়নমুলক কাজে নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন বানিজ্য, সরকারি কাজে লাল ফিতার দৌরাত্ম, অবৈধভাবে জমি দখল, সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, সরকারি অর্থ লোপাট ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি রয়েছে। বলতে দ্বিধা হলেও সত্য, চলমান করোনাকালে, করোনা ও বিভিন্ন দুর্যোগ আক্রান্ত জনগণের প্রাপ্য সাধারণ ত্রাণ, চাল, ডাল, তৈল, সরকারী বরাদ্দও এই দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পায়নি। এই সামান্য ত্রাণ ও জনগণের নিকট সঠিক ভাবে পৌঁছায় না। এবং পৌঁছানোর আগেই চুরি হয়ে যায়। এমন নীতিভ্রষ্ট, দূর্নীতিপরায়ন জনপ্রতিনিধি আফ্রিকান গহীন অরণ্যে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাও দেখা পাওয়া বিরল !

বর্তমান সময়ে আরও বড় দুর্নীতির দৃষ্টান্ত রয়েছে সরকারি চাকরি প্রদানের উপর। এখন যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি হলে ও সরকারি চাকরি পাওয়া দুস্কর। কারণ এখন অনেকক্ষেত্রে, সরকারি চাকরি প্রদান করা হয় কে কত বেশি ঘুষ দিতে পারল তার উপরে। আপনি যদি যোগ্যতাসম্পন্ন ও প্রচুর মেধাবী এবং কর্মঠ ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তবুও আপনি চাকরি পাবেননা। যদি আপনি ঘুষ প্রদান করতে ব্যর্থ হন। তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আপনাকে চাকরি পাওয়ার জন্য ব্যর্থ প্রমাণ করবেই এবং একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে তার নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ করার মাধ্যমে চাকরি প্রদান করবে। সেই ব্যক্তি ভবিষ্যতে দুর্নীতির খাতকে আরো বড় করে তুলবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই সমাজের মূল ও বাস্তব চিত্র। এর পরে দেখা যায়, আইনি খাতে বর্তমান সময়ে ব্যাপক দুর্নীতি দেখা যায়। শুধুমাত্র টাকার জোরে বড় বড় আসামিরা অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই যারা অন্যায় ভাবে আইনকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে আসছে তারা দ্বিগুন উৎসাহে অন্যায় ও দূর্নীতিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠছে, সাথে ফেঁসে যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষ গুলো। এখানে আইনের চোখে সবাই সমান কথাটি নির্বাসিত। আইন দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু সেখানে অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে জনগণকে সঠিক বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা হচ্ছে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের মুল অনুসংগ। কিন্তু শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে দূর্নীতির পরিমান আরো ভয়াবহ। বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা খাত দুর্নীতির কালো থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুললেই আমরা দেখতে পাই শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ভয়াবহ দুর্নীতির কথা। যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জা ও হতাশাজনক ব্যাপার বটে।

অনেকেই বলে থাকেন এবং খুব ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বাংলাদেশ গরীব দেশ, যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা বিরাজ করে। একে তো গরীব তার উপরে প্রতি কিলোমিটারে বিশ্বের সবচেয় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। দেশ বিভিন্ন সমাস্যায় জর্জরিত। কিন্তু আমি মনে করি আমরা গরীব দেশ নয়। দূর্নীতি আমাদেরকে গরীব করে রেখেছে ! দেশ স্বাধীন হলো কত বছর হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের গরীব থাকার কথা ছিলনা। সরকারী আয়ের প্রধান উৎস হলো কর ও রাজস্ব সংগৃহীত অর্থ। সারা বছর কর থেকে যত টাকা আয় হয়, সরকার তার চেয়ে বেশি অন্য বিবিধ আয় থেকে অর্জন করা সম্ভব! কিভাবে?
দেশের সমস্ত দূর্নীতিবাজদের হাতে যে পরিমান অর্থ আছে, সেই টাকা ও সম্পদ গুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে নিলে বা দূর্নীতি চিরতরে বন্ধ করতে পারলে আমাদের দেশে টাকার অভাব হবেনা। প্রত্যেক দূর্নীতিবাজদের ঘরে কমপক্ষে এক হাজার কেজি স্বর্ণালংকার আছে এবং নগদ যে পরিমান টাকা আছে, সেই টাকা একটা ব্যাংকেও নেই। প্রতিটি দূর্নীতিবাজদের প্রচুর পরিমান ক্যাশ টাকা আছে। কারন বৈধ আয়ের উৎস তাদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্টানিক রিটার্ণ ফাইলে না দেখাতে পারার কারনে, তাদের আলমারী, সিন্দুকে বা ব্যক্তিগত ভোল্টে থরে থরে সাজিয়ে রাখতে বাধ্য হয়। আবার অনেক টাকা নিকটাত্মীয় ও তাদের পরিচিত মানুষের ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে অতি যত্নকরে। দুর্নীতিবাজদের রয়েছে দুই তিনহাজার বিঘা করে জমি। সুইস ব্যাঙ্কে ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নানান নামে ব্যাংকে কত টাকা আছে সে হিসেব করাই বাহুল্য।

রাজস্ব আয়ের বাইরে সরকারের আয়ের প্রধানতম উৎস ঋন নেওয়া। গত কিছুদিন পুর্বে, পত্রিকায় প্রকাশ, বাংলাদেশের যাবতীয় ব্যাংকের তারল্যের ৬৭% বাংলাদেশ সরকার ঋন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এটা একটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা। আমি মনে করি দূর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে, তাদের টাকা এবং সম্পদ্গুলো নিয়ে সরকারী কোষাগারে জমা করতে হবে। চারদিকে এত বড় বড় দূর্নীতিবাজদের আস্থানা, সরকার তাদের সম্পত্তি জব্দ বা ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করলে, সরকারের টাকা ও সম্পদের হয়ত আর অভাব হবেনা। যারা রাজনীতির নামে ব্যবসা করেন, যারা সরকারী চাকুরে, প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, জনপ্রতিনিধি এবং যারা রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থাকেন, তাদের কাছে টাকার অভাব নেই। তাদের শহর ও গ্রামের বাড়ি, ভোল্ট, সিন্দুক, উঠান, ষ্টোর রুম, পুকুর, গোলা ঘর ইত্যাদি তল্লাশি করলে যে পরিমান ক্যাশ টাকা, গহনা, ডলার পাওয়া যাবে, তা দিয়ে সরকার দেশটা অনেক সুন্দর করে সাজাতে পারবে, বৈকি। কিন্তু এসব দূর্নীতিপ্রবন ব্যক্তিগন রাষ্ট্রক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকার কারনে, দূর্নীতি দমন কমিশন তাদের কেশাগ্র ছুঁতে পারছেনা।

সব সম্পদই রাষ্ট্রের। অথচ দূর্নীতিপ্রবণ ব্যক্তিগু রাষ্ট্রীয় সম্পদ গুলোকে তাদের পৈর্তৃক সম্পদ মনে করে দখল করে আছে যক্ষের ধনের মত,কিন্তু সরকার বাহাদুর নীরব নিস্তব্ধ যেন কিছুই জানে না ! ভূমি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দূর্নীতি হচ্ছে অত্যন্ত কদর্যভাবে। ঘুষ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপুর্ণ কোন কাজই হয়ে উঠেনা। স্প্রীড মানি ছাড়া কোন ফাইলের গতি পায়না। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন সরকারি অফিসগুলোকে জেঁকে বসেছে প্রত্যেক সরকারের আমলে। দূর্নীতি করে, দূর্নীতি হয় আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হয় আমাদের দেশ বাংলাদেশ!
বছর তিনেক আগে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৮০% এর উপরে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল নজীর বিহীন ঘটনা। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, বেতন ভাতা বৃদ্ধি করলে সরকারি অফিসে দূর্নীতির প্রবণতা কমবে এবং মানুষ দু’মুটো অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা হলে, পরিবার পরিজন নিয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবন ধারন করতে পারলে দূর্নীতির সাথে জড়াবেনা। কিন্তু বিধিবাম! বাস্তবে সেই চিন্তার প্রতিফলন দেখা তো যায়নি, অধিকন্তু দূর্নীতির করাল গ্রাস রাষ্ট্রযন্ত্রকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে বসেছে। পৃথিবীর কোন দেশেই শুধুমাত্র বেতন বাড়িয়ে দূর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। দূর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে, সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি দুদক এখনও। রাষ্ট্রযন্ত্রের সদিচ্ছা থাকলে, দূর্নীতি কমিয়ে আনা সময়ের ব্যাপার মাত্র! বাংলাদেশের রাজনীতি কিছু পরিবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। সেটা রাষ্ট্রের উঁচু থেকে একদম ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পরিবারগুলো ‘সিন্দাবাদের ভূতের’ মতো বাংলাদেশের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হয়েও নিজেদের দূর্নীতি ও অদুরদর্শীতার কারনে আমরা তলিয়ে যাচ্ছি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা ও সামাজিক সংকটের অতল গহবরে।
একটি কথা আছে, ‘যে যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি ক্ষমতা হাতে পায়, সেই-ই ক্ষমতার অপব্যবহার করে, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা সবাইকে তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। সকলের উপর তাদের কর্তৃত্ব থাকে। তাই তারা নির্বিঘ্নে দূর্নীতি করতে পারে। তাদেরকে কারো কাছে যেমন জবাবদিহী করতে হয়না, ঠিক তেমনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে লাগামহীন দূর্নীতিতে তারা নিমর্জিত হয়। যার ফলে দূর্নীতির একটা দুষ্ট চক্র গড়ে উঠে। সেই দুষ্ট চক্র ভেদ করা দেশের পক্ষে অসম্ভব ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে দেশ দূর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে, সেই দূর্নীতি দেশকে আরো বেশি দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদ করে ফেলে।

একটি দুর্নীতিগ্রস্থ জাতি কখনই নিজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সফলতা অর্জন করতে পারে না। তারা দেশকে অধঃপতনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দূর্নীতিপ্রবণ লোকগুলো কখনোই দেশের উন্নতির কথা ভাবে না। এরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। দুর্নীতিই হয়ে দাঁড়ায় তাদের নীতিএবং তাদের মধ্যে কোন ভালো-মন্দের ভেদাভেদ থাকে না। এসকল দুর্নীতিবাজ লোকদের জন্য দেশ কখনোই প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়া পায় না। তারা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজের নামে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মত্ত থাকে। এরা দেশের সম্পদ পাচার এবং অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত। এবং সমাজের বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড এই সকল ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। এর ফলে সাধারণ জনগণ কখনোই উন্নতির বা উন্নয়নের মুখ দেখতে পায় না এবং সৃষ্টি হয় দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে বিশাল আয়বৈষম্য। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে এক নম্বর দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে শুধুমাত্র দূর্নীতিবাজদের কারণে।

দুর্নীতির কালো থাবা থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের অবশ্যই সকলকে সচেতন হতে হবে। একদিকে যেমন আমরা দুর্নীতির সাথে যুক্ত হবো না । ঠিক তেমনি অন্য কাউকে দুর্নীতি করতে দেখলে তাতে বাধা প্রদান করব। একটি দেশের সরকার চাইলে এবং সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব। কারণ একটি দেশের সকল শক্তির মূলে রয়েছে দেশের সরকার। এ কারণে আমাদের দেশের সরকারকে সোচ্চার হতে হবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যদি এখন এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হয় তাহলে কোন ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বড় বড় দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশকে সম্পূর্ন দূর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধুমাত্র, এ সকল ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনলে চলবে না। বরং ছোট বড় সকল দুর্নীতিবাজকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে অবশ্যই সরকারের পাশে জনগণকে থাকতে হবে।
শুধুমাত্র আপনার ব্যক্তিগত ভাবে দুর্নীতিমুক্ত থাকলেই কাজ শেষ হবে না। বরঞ্চ আমাদের অন্যকেও দুর্নীতির থেকে দূরে থাকার জন্য আহবান করতে হবে। এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এবং বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো উচিত। এছাড়াও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা আরোপ করা উচিত যার ফলে তারাও দুর্নীতি করতে ভয় পায়। দুর্নীতি আমাদের দেশকে যেভাবে গ্রাস করছে যদি শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে আমাদের দেশের অধঃপতন নিশ্চিত। আমাদেরদুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । মানুষকে দুর্নীতির ক্ষতিকর দিকগুলো জানাতে হবে এবং যুব সমাজকে সচেতন করতে হবে দুর্নীতির বিষয়ে। সবাইকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে এবং বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সবাইকে একযুগে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার সম্ভব হবে এবং সত্যিই আমাদের দেশ সোনার দেশে পরিণত হবে। ধন্যবাদ সবাইকে। তারিখঃ

২০-শে সেপ্টেম্বর-২০২০
এম আর আয়াজ রবি।
(লেখক, কলামিষ্ট ও মানবাধিকারকর্মী)