অনুমোদনবিহীন, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন রিক্সা,অটো রিক্সা, টমটম ও সিএনজিতে সয়লাব উখিয়া!

Date:

 

এম আর আয়াজ রবি।
উখিয়া এখন মানবতার শহর। মানবতার ফেরি করতে গিয়েই প্রতিদিন শত শত গাড়ি এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। উখিয়া সদর, মরিচ্যা, কোটবাজার ও কুতুপালংসহ অন্যান্য ষ্টেশনে রিক্সা, অটোরিক্সা, টমটম ও , সিএনজিসহ যত গাড়ি্র চলাচল রয়েছে তার ৮০% গাড়ির বৈধ কাগজ পত্র নেই, আবার কাগজপত্র থাকলে ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, লাইসেন্স থাকলে আবার গাড়ির ফিটনেস নেই, ফিটনেস থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন নেই। যেন মহাসংকট ও মহা-অব্যবস্থাপনার নগরী এই মানবতার শহর উখিয়া। যথাযথ কাগজপত্র ও আনুসংগিক ছাড়া গাড়ি চালানোর অর্থই হচ্ছে সরকারি অর্থ হাতছাড়া হয়ে কোষাগার শুন্য হওয়া।যেহেতু গাড়ির ফিটনেস,ড্রাইভিং লাইসেন্স, বৈধ কাগজপত্র করতে গেলেই সরকারকে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়, সরকারি কোষাগার কিছুটা ভারী হয়-যা দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার ক্ষেত্র রচিত হয়। কিন্তু দ্রুব বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারি কোষাগারে অর্থ যাবার যথাযথ সিস্টেম পালন না করেই যদি কোন বিশেষ হাতের ঈশারায় বা সিস্টেমের মাধ্যমে কোন কোন পক্ষকে মাসিক মাসোহারায় রোডে মাস্টারি করার অনুমোদন বা টোকেন প্রাপ্ত হয়ে দিব্যি যানবাহন চলাচল করার সুযোগ প্রাপ্ত হয়, সেখানে অযথা সরকারি তহবিলে ব্যাঙ্ক ড্রাফট করে পকেটের টাকা সরকারকে প্রদান করার ঝক্কি-ঝামেলা করতেই বা যাবে কেন? তাই সরকারি নিয়ম নীতির তোড়াই কেয়ার করেই দিব্যি কাজ চালিয়ে যেতে পারলে, কর্তাব্যক্তিদের সাপে বর অবস্থা তো হবেই।
গাড়িগুলো বিভিন্ন ষ্টেশনের মধ্যখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। দুরপাল্লার গাড়িগুলো যেমন চলাচল করতে পারেনা, তেমনি সাধারণ জনতার চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। উখিয়া সদর, কোটবাজার, মরিচ্যা ও কুতুপালং এলাকার ষ্টেশনগুলো সম্প্রসারিত করার পরেও যানজট ও সাধারনের চলাচলে কোনপ্রকার ইতিবাচক পরিবর্তন না হবার কারন হচ্ছে যত্রতত্র গাড়িগুলো রাখা, ঘোরানো ও নিয়ম শৃংখলা না মানা। অধিকন্তু ট্রাফিক পুলিশের অপ্রতুলতা যানজট সৃষ্টির কারন বলে অনেকেই মনে করেন।
এসব গাড়ির কোন নির্ধারিত স্ট্যান্ড যেমন নেই, তেমনি না আছে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র, অনুমোদন বা ফিটনেস সার্টিফিকেটত অথবা না আছে ড্রাইভারের কোন লাইসেন্স বা গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ।পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নাকের ডগায় ১০-১২ বছরের কম বয়সের ছেলেরা প্রশিক্ষনবিহীন এসব গাড়ি চালাচ্ছে। তাই যানজট, দূর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের সাথী। সামনে ঈদের মৌসুম। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ক্রেতারা কেনা কাটার জন্য বিভিন্ন সদর ষ্টেশনে আসবেন, কিন্তু বিশৃংখল ও অতিরিক্ত গাড়ির কারণে ক্রেতাসাধারনের চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি দূর্ঘটনার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবার আশংকা রয়েছে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার আহবান থাকল।
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। দূর্নীতির করাল গ্রাসে গলা পর্যন্ত নিমজ্জিত স্বদেশ। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষিত দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এখানে অকার্যকর ও অসহায়। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ অবস্থা ! যেখানে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের আখের গোছাতে স্ব স্ব ব্যস্ত। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি কারো তেমন আন্তরিকতার প্রলেপ নেই, নেই কোনপ্রকারের ভ্রুক্ষেপ। তাদের জনপদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সুন্দর পরিকল্পনা যেমন নেই, সুষ্টূ ও গ্রহনযোগ্য উখিয়া বিনির্মাণের ইতিবাচক চিন্তা, চেতনা,অঙ্গীকার, দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নেই। জবাবদিহীতা নেই, নেই আত্মসমালোচনা করার সৎ সাহস।তাদেরন অধিকাংশের কার্যক্ষমতা সীমাবদ্ধ কিছু সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগির এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৌড়ঝাপের মধ্যেই। তবুও সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা, জীবন চাকা ধাবমান সামনের দিকে, সেই গানের কলির মত-“তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে”!
গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষের পকেট ভারী করার জন্য সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব আয়। অন্যদিকে কিছু স্থানীয় সিন্ডিকেট চক্র, রাঘব বোয়াল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন ‘কৈ এর তৈলে কৈ ভেজে’ উদর ফূর্তি করে, সেসকল পরিবহন শ্রমিক, গরীব, মেহনতি মানুষের মানবতার পরাকাষ্টা দেখিয়ে যাচ্ছে বলে রীতিমত জিগীর তুলছে, সেটারই বা মন্দ কীসের ? পরিবহন সেক্টরে চলছে অরাজকতা। পরিবহন সেক্টর পুরোটাই স্বল্পকিছু সিন্ডিকেট দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এখানে নীরব চাঁদাবাজি যেমন আছে, তেমনি বিভিন্ন সেক্টর ম্যানেজ করার সংস্কৃতিও রয়েছে। অনেকের কাছে শুনা যায়, সিন্ডেকেট চক্র একটি শক্তিশালী বৃত্ত বা বলয় থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই যে কোনভাবেই উক্ত চক্র ভেদ করার সুযোগ না থাকার কারনে প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ কিন্তু শত ইচ্ছা বা প্রচেষ্টা থাকার পরেও পরিবহন সেক্টরকে শৃংখলিত করতে পারছেন না। দুঃখের সাথে বলতেই হয়, প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ উক্ত চক্রের কাছে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়ে আছেন। বাকিটুকু বলাই বাহুল্য!
ভোগবাদি ও সামন্তবাদি সমাজে শোষিতরা সবসময় শোষনের শিকার হবেই। দিনে দিনে কর্তাব্যক্তিদের পকেট ভারী হচ্ছে, তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ থেকে বটগাছে পরিনত হচ্ছে কিন্তু আমাদের শ্রমিককূল যে তিমীরে ছিল সেই তিমীরেই আছে ও থাকবে। এত সরকার বদল, জনপ্রতিনিধির বদল ঘটে কিন্তু তাদের ভাগ্যের বদল বা পরিবর্তন ঘটে না। তারা হচ্ছেন ক্রীড়নক। তাই জনম জনম তাদেরকে খেলবে কিন্তু তারা কোনদিন খেলতে পারবেন না ! কারণ ক্রীড়নক মানে একটি পায়ের ফুটবল। ফুটবলকে সবাই খেলতে পারে কিন্তু নিজে খেলতে পারে না!! ( চলবে)

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট- উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া ও সাবেক প্রেসিডেন্ট- বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ( BMSF) উখিয়া উপজেলা শাখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার হলেন এম. দলিলুর রহমান

  (বিশেষ প্রতিনিধি) বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের লোহাগাড়া উপজেলা প্রতিনিধি...

মাদক কারবারে পাচারকারী আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদার

মায়ানমার থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা সিগারেট, স্বর্ণের বার, ইয়াবাসহ...

নরসিংদীতে বজ্রাঘাতে মা-ছেলেসহ ৪ জন নি’হ’ত

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে জমিতে ধান কাটার কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে...

সংবাদ প্রকাশের জের:পাচার কালে জ্বালানী তেল জব্দ:টহলদলের গাড়ীতে হামলা:অধরা চোরাকারবারি

  এম.এ.রহমান সীমান্ত: গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকায় ববস্তুনিষ্ঠ ও...