সীমান্তবাংলা ডেস্ক◾ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির মাদক ও চোরাচালান বিরোধী টহলদলের ওপর চোরাকারবারিরা গুলিবর্ষণ করেছে। এসময় বিজিবি’র ব্যবহৃত ৩ টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির পাল্টা গুলিতে নেজাম উদ্দিন নামের চোরাকারবারি চক্রের এক সদস্য নিহত হয়েছে। তবে নিহতের ব্যাপারে বিজিবির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিজিবি দাবি করেছে, নেজাম নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে শোনা গেছে।
সোমবার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মরিচ্যাচর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে বিজিবি, স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চিত করেছেন। নিহত নেজাম উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়েনের ঘোনারপাড়া এলাকার আবুল বশরের ছেলে।
সোমবার দুপুর ১ টার দিকে বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবির মাদক ও চোরাচালান বিরোধী নিয়মিত টহলদলের ওপর চোরাকারবারিরা গুলিবর্ষণ করে। এসময় বিজিবি’র মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটনায় আত্মরক্ষার্থে বিজিবি’র সিদস্যরারাও গুলি বর্ষণ করে। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও বার্মিজ সিগারেট উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনি কয়টি মোটর সাইকেলে অংগ্নিসংযোগ করেছে বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
তিনি জানান, এ ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছে কিনা নিশ্চিত নন। নিহত হলে মরদেহ পাওয়া যেত।বিকাল সাড়ে ৩ টায় বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১১ ব্যাটালিয়নের পক্ষে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াবা ও সিগারেট আটক অভিযানে বিজিবি সদস্যরা ৯৮ কার্টুন বার্মিজ সিগারেট এবং ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এসময় দুষ্কৃতিকারীরা নেজাম ডাকাতের নেতৃত্বে ১০০/১৫০ জন সংঘবদ্ধ হয়ে বিজিবি টহল দলের উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে ৫০-৬০ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে জানমাল রক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি করে। এসময় দুষ্কৃতকারীরা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বিজিবির মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এতে হত্যা, অপহরণসহ একাধিক মামলার প্রধান আসামী নেজাম ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিজিবি কর্তৃক মামলা দায়ের এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেজাম নিহত হওয়া বা মরদেহ কোথায় সে বিষয়টি পরিষ্কার করে কিছুই বলা হয়নি।
গর্জনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল জানিয়েছেন, বিজিবির সাথে চিহ্নিত চোরাকারবারিদের গোলাগুলি হয়েছে। এসময় বিজিবির ৩টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের নেজাম উদ্দিন নামের এক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে বলে শোনা গেছে। নিহতদের মরদেহ তার সিন্ডিকেটের সদস্য নিয়ে গেছে। গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পুরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এলাকার লোকজন বিজিবির সাথে চোরাকারবারির গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে দুপুর ১ টার দিকে নেজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর তথ্য জানিয়েছেন খুরুশকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজাহান সিদ্দিকী।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বহুল আলোচিত ডাকাত আবুল বশর পরিবার কয়েক বছর আগে খুরুশকুলের ঘোনাপাড়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করে। সোমবার সকালে তার বশরের ছেলে নেজামের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসে তার চক্রের সদস্যরা। খবর পেয়ে গুলিবিদ্ধ মরদেহটি উদ্ধার কেরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং পুলিশকে জানানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান শাহাজাহান জানান, নেজাম ডাকাত গর্জনিয়ায় বিজিবির সাথে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে বলে নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে ওখান থেকে মরদেহটি সহযোগিরা বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। তিনি বলেন, আবুল বশর একজন চিহ্নিত ডাকাত এবং তার ছেলেরা ডাকাতি ও চোরাকারবারে জড়িত বলে এলাকার লোকজন জানেন।
দুপুর ২ টা ৫ মিনিটে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নেজামের মরদেহ আনা হয়। যেখানে কথা হয়েছে নেজামের পিতা আবুল বশরের সাথে। তিনি বলেন, গর্জনিয়ায় গত ৩ দিন আগে এক বন্ধু বাড়িতে আমার ছেলে নেজাম বেড়াতে গিয়েছিল। সকালে তার বন্ধুরা ফোন দিয়ে জানিয়েছে বিজিবির গুলিতে নেজাম নিহত হয়েছে। তার বন্ধুরা নেজামের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছিল।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, খুরুশকুলে নেজাম নামের একজনের মরদেহ বাড়ি থাকার তথ্য পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতারের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে কার গুলি, কোথায় এ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ কাজ করছে।